৫০-এ ওরা ১১ জন

আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ০৯: ০১
Thumbnail image

সিনেমার প্ল্যানিং
মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে ফিরলেন সোহেল রানা। দারোয়ান বলল, ‘আপনারা ফিরলেন, সব স্যার তো ফিরল না।’ কথাটা খুব নাড়া দিল সোহেল রানাকে। শহীদদের ত্যাগের গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ভাবনা এল। সোহেল রানা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধের সময় কে কী করেছে তা নিয়ে আলাপ হতো। তখন মনে হলো, এই ঘটনাগুলো নিয়ে একটা সিনেমা করা যায়। মাসুম ইয়াহুদির লেখা আমার খুব ভালো লাগত। চাষীর সঙ্গে পরিচয় ছিল। সে তখন সহকারী পরিচালক। তাকে বললাম, একটা সিনেমা বানাতে চাই। মাসুম ইয়াহুদিকে বললাম একটা গল্প লিখে দেও, সিনেমা বানাব। ছোট ছোট গল্পকে মালা বানিয়ে দেবে।’

পরিচালক নির্বাচন
চাষী নজরুল ইসলাম ও সোহেল রানা দীর্ঘদিনের বন্ধু। দীর্ঘ ১৪ বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করা চাষী নজরুল ইসলাম এই সিনেমাতে হলেন পরিচালক। যদিও তখনকার খ্যাতিমান পরিচালক মুস্তাফিজ সিনেমাটি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন বিনা পারিশ্রমিকে। কিন্তু চাষী যুক্ত হচ্ছেন শুনে মুস্তাফিজ বলেছিলেন, ‘সে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। সে পারবে।’

অর্থের জোগান
সোহেল রানার বাবা আবদুল মালেক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর পেনশনের টাকার একটা অংশ ছেলের হাতে তুলে দেন মা দেলোয়ারা বেগম। বোন ফেরদৌস আরা বেগমের কাছ থেকেও হাজার দশেক টাকা নিয়েছিলেন প্রযোজক। সিনেমার পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান স্টার-এর ইফতেখারুল আলম কিসলু পরামর্শ দিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি পরিচিত মুখ যুক্ত করার। তাই তখনকার তারকাদের অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলো। যাঁকেই বলা হলো, সবাই একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন, এমনকি বিনা পারিশ্রমিকে। কিছু অংশ শুটিংয়ের পর পরিবেশক স্টারের সঙ্গে চুক্তি হলো। সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়, সাইনিং মানি ছিল ১০ হাজার। 

অভিনয়শিল্পী বাছাই
সিনেমাটি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েই তৈরি করার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরের কথায় প্ল্যানিং পরিবর্তন হলো। সোহেল রানার ভাষায়, ‘সবাই কাজ করতে চাইছেন। পরিস্থিতি এমন হলো, কাকে নেব আর কাকে বাদ দেব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’

চাষী নজরুল ইসলামএক নজরে
পরিচালনা: চাষী নজরুল ইসলাম, প্রযোজনা: মাসুদ পারভেজ, কাহিনি: আল মাসুদ, সংলাপ: এ টি এম শামসুজ্জামান, চিত্রনাট্য: কাজী আজীজ আহমদ, চিত্রগ্রহণ: আবদুস সামাদ, সংগীত: খোন্দকার নুরুল আলম, গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার [আমায় একটি ক্ষুদিরাম দাও], সম্পাদনা: বশীর হোসেন

সিনেমাতে নেওয়া হলো রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, খলিল, হাসান ইমাম, মিতা, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, মিনারা জামান, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো অভিনয়শিল্পীদের। মুক্তিযোদ্ধা ১১ জন—খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা তো ছিলেনই। পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণাঙ্গনের যোদ্ধারা। এটা বিরল এক ঘটনা।

সত্যিকারের আর্মস
আর্মি মুভমেন্ট, অস্ত্র, গোলাবারুদ—সবই ছিল সত্যিকারের। তবে শুটিংয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘনিষ্ঠ বন্ধু নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে সোহেল রানা গিয়েছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের কাছে। সিনেমা বানাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ লাগবে শুনে তিনি তৎকালীন মেজর শওকতকে বলে দিলেন। পাকিস্তান আর্মি ও বাংলাদেশ আর্মির পোশাক কেমন হবে, সেসব দেখভালের জন্য একজন মেজরকে শুটিং টিমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। 

সিনেমাটি দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিনেমাটা দেখেছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সবাইকে চা খেতে ডেকেছিলেন একবার। সোহেল রানা সেই স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘ভালোই তো বানাইছিস। এ লাইনেই থেকে যা।’ তাঁর কথামত আমি সিনেমাতেই থেকে গেলাম।  

আজ ‘ওরা ১১ জন’-এর প্রদর্শনী
চ্যানেল আইয়ে আজ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে দেখানো হবে ‘ওরা ১১ জন’। প্রদর্শনীর পর প্রচার হবে সিনেমার অভিনেত্রী নূতনের অংশগ্রহণে আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান।

নূতনের অভিজ্ঞতা
নূতনএই সিনেমার নায়ক রাজ্জাকের ছোট বোন শীলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নূতন। শীলা পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। নায়ক খসরু যাঁকে ভালোবাসতেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি হানাদারদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেলেও ক্ষোভ আর অপমানে খসরুর হাতের ওপরে মারা যান।
নূতন বলেন, ‘এই সিনেমাটিই তো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এই সিনেমার ঘটনাবলির মধ্যেই এ দেশ আমরা কীভাবে পেয়েছি তা বিস্তৃত হয়েছে। এই সিনেমাটি এক অনন্য ইতিহাস। আমি তখন ঢাকায় ছিলাম মোহাম্মদপুরের হ‌ুমায়ূন রোডে অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর বাসায়। প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ভাই এবং চাষী ভাই সুমিতাদির বাসায় আসলেন। আমার সঙ্গে কথা বলে শীলা চরিত্রের জন্য কাস্ট করলেন। সাভার ও এফডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় শুটিং হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খসরু ভাইসহ অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এই সিনেমায় কেবল অভিনয় করেননি, যুদ্ধের বাস্তব চিত্রটাই ফুটিয়ে তুলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত