Ajker Patrika

ভাসুবিহার যেন চারণভূমি

খালিদ হাসান, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১৩: ৪৪
ভাসুবিহার যেন চারণভূমি

ভাসুবিহার দেশের অন্যতম প্রাচীন এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রায় দুই হাজার বছর আগের দুটি বৌদ্ধবিহার এবং একটি মন্দির নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুণ্ড্রনগরখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার এলাকায় এর অবস্থান। নানা ঐতিহাসিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে অনেকটায় অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে প্রাচীন এ পুরাকীর্তি।

গত সোমবার সেখানে গেলে দেখা যায়, অনেকটা সুনশান পড়ে আছে ভাসুবিহার। স্থানীয় কয়েকজন রাখাল গরু-ছাগল চরাচ্ছেন। চারপাশ ঘুরে কোনো প্রাচীরের দেখা মেলেনি। বসার নেই কোনো ব্যবস্থা। ঘাসের ওপর বসতে হয় এখানে আসা মানুষদের। ঝড়-বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো ছাউনি নেই। নির্মিত হয়নি শৌচাগার। এ ছাড়া এখানে চা-নাশতা করার কোনো দোকানঘরও নেই।

স্থানীয়রা বলছেন, মাঝেমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ ঘুরতে আসে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ খারাপ হওয়ায় ভাসুবিহার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন তাঁরা।

ভাসুবিহারে হোটেল-রেস্টুরেন্ট স্থাপন, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা, সৌন্দর্য বর্ধন, পিকনিক শেড, রেস্ট হাউস, শৌচাগার ও পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সেসঙ্গে টিকিট সিস্টেম চালু করা হলে সরকারের রাজস্ব আহরণের সুযোগও সৃষ্টি হবে বলে পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথমবারের মতো খনন করা হয় ভাসুবিহার। এ সময় দুটি মন্দিরের ভিত্তিমূল ও দুটি আয়তাকার প্রাসাদ দেবালয়ের ভিত্তিমূল আবিষ্কৃত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ভাসুবিহার ধাপ খনন করে সাত শতাধিক প্রত্ননিদর্শন পাওয়া গেছে।

ভাসুবিহারের কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক জানান, মাঝেমধ্যে মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। খাওয়া ও শৌচাগারের অভাবে ঘুরতে আসা লোকজন প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হয়।

বিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাসুবিহার ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নস্থান। অথচ এটি আজ একেবারেই অবহেলিত। পর্যটকদের জন্য শিক্ষণীয় এই বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করি।’

বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ বলেন, মহাস্থান গড়ের জাদুঘর, বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসরঘর, গোবিন্দভিটা এসব স্থানে টিকিট ও পার্কিং বাবদ বড় অঙ্কের টাকা প্রতিবছর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে জমা হয়। ইচ্ছা করলে সেখান থেকেই ভাসুবিহারের উন্নয়নকাজ করা সম্ভব। কিন্তু প্রত্ন অধিদপ্তর তা করছে না।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের বাজেটের প্রয়োজন। আমাদের সীমিত বাজেটের কারণে রুটিন মেরামত ছাড়া বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।’

বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ‘ভাসুবিহারের উন্নয়নে প্রত্ন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের আলাদাভাবে উন্নয়নকাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আমি প্রত্ন অধিদপ্তরকে অবহিত করব।’

২০১৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে ভাসুবিহারে দুই দিনব্যাপী ‘প্রত্ননাটক’ মঞ্চস্থ হয়। সেই নাটক মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় দেশে-বিদেশে অনেকটাই পরিচিতি পায় ভাসুবিহার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত