রোহিঙ্গা সংকট: ছয় বছরে ফেরেনি একজনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কক্সবাজার প্রতিনিধি
Thumbnail image

ছয় বছর হয়ে গেল, বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি চুক্তি করেছে, তা-ও প্রায় ছয় বছর আগে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার আওতায় এই সময়ে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে শুরু হবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বেশ পুরোনো। তবে মিয়ানমারের সেনা ও তাদের দোসরদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। ওই বছরের নভেম্বরেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে মিয়ানমার চুক্তি করেছে। কিন্তু চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে তারা গড়িমসি করছে। এতে রোহিঙ্গাদের ফেরাটা কবে শুরু করা যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের ফেরা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়ে আসছে শুরু থেকেই। মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ চীন মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। তাতেও কাজ হয়নি।

জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার জন্য জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিশ্বনেতাদের উদাসীনতা আছে। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির সমর্থনে নীতিগত ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ ছাড়া আর একটি বছরও পার হতে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গত ছয় বছরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠায়নি।

জেনেভা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টম অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া মিন অং হ্লাইং এখন একটি অবৈধ সামরিক জান্তার প্রধান।

তিনিসহ রাখাইনে সহিংসতার মূলে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে জোরালো পদক্ষেপ দরকার। জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনের সময় পর্যাপ্ত সমন্বিত সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে কিছু দেশ অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর আর্থিক অনুদান কমিয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে রেশন কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগ।

চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের সীমিত আকারে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুরু করার চেষ্টা চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। শুরুতে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে পাঠানোর প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে চলতি বছরের শুরু থেকে। এ ক্ষেত্রেও মিয়ানমারের ধীরগতিতে সরকারের মধ্যে হতাশা আছে বলে জানান কূটনীতিকেরা।

এদিকে প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। ‘সর্বস্তরের কক্সবাজারবাসী’ ব্যানারে সমাবেশে বক্তারা বলেন, বছরের পর বছর রোহিঙ্গারা অবস্থান করায় সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। ক্যাম্পগুলোতে নিয়মিত খুনখারাবি হচ্ছে, মাদক ও মানব পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।

আজ শুক্রবার উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরার দাবি এবং গণহত্যার বিচার চেয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করবে বলে জানা গেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ছোট পরিসরে রোহিঙ্গাদের সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত