বিধিনিষেধে ধুঁকছে মোটরসাইকেল শিল্প

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৫
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ৫৫

গণপরিবহনের অভাব ও যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর বিকল্প মাধ্যম হিসেবে রাইড শেয়ারিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় মোটরসাইকেলের ওপর মানুষের ভরসা বাড়ছে দিন দিন। গত এক দশকে দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়া মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও এই দুই চাকার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।

মোটরসাইকেলস ডেটার তথ্যমতে, এক দশক আগেও বাংলাদেশে প্রতি বছর মোটরসাইকেল বিক্রির গড় হার ছিল ১০ হাজার ইউনিট। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের ‘মোটরসাইকেল ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০১৮’-এর কারণে মোটরসাইকেল শিল্প এখন হয়েছে ৬ লাখ ইউনিটের বাজার।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতে, ২০১৪ সাল থেকে মোটরসাইকেল শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। দেশে প্রতিদিন ১ হাজার ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে এবং গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে।

এই নীতি ২০২৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রেখে মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা ১০ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি মোটরসাইকেলকে কেন্দ্র করে জারি করা সরকারের কিছু বিধিনিষেধ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় একদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে; অন্যদিকে মোটরসাইকেল বিক্রি ও চলাচলে সরকারের বিধিনিষেধ বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এই বিধিনিষেধের মধ্যে আছে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা, গত কোরবানির ঈদে মহাসড়ক দিয়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণে বিধিনিষেধ জারি এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি করা ও নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের হেড অব ফাইন্যান্স ও কমার্শিয়াল শাহ মোহাম্মদ আশেক রহমান বলেন, ‘এত দিন আমরা মোটরসাইকেল বিক্রির সময় অন-টেস্টের আবেদন করে গাড়ি বিক্রি করতাম। এখন নিবন্ধন ও লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি বিক্রি করার মতো সিদ্ধান্ত আরোপ হলে মোটরসাইকেল শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। হোন্ডা মোটরসাইকেল শিল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ বছর ৭ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার। শুধু আগস্ট মাসেই ৩০ শতাংশ কম বিক্রি হয়েছে।’

অন্যদিকে রানার অটোমোবাইলসের হেড অব কমার্শিয়াল রেজাউল করিম বলেন, ‘২০১৮ সালে মোটরসাইকেল শিল্প নিয়ে সহায়ক পলিসির পর আমরা এই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করি। এই খাতে এখন পর্যন্ত আমাদের বিনিয়োগ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিনিয়োগ আমরা করেছি দীর্ঘ মেয়াদে লাভের আশায়। কিন্তু এখন আমাদের বিনিয়োগ করিয়ে সরকার বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করছে।’

এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক চিঠির বরাতে জানা যায়, মোটরসাইকেল শিল্প খাতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২ লাখ মানুষের। বিএমএএমএর মতে, এই শিল্প বর্তমানে জিডিপিতে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখলেও ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপিতে এই খাতের অবদান দাঁড়াবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল খাত থেকে সরকার প্রতিবছর ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ আয় করে ২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বাবদ সরকারের আয় ১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালে মোটরসাইকেল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ লাখ। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার।

দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ৯টির মতো কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কারখানা স্থাপনের তালিকায় আছে বিদেশি ব্র্যান্ড জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরো এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান রানার, ওয়ালটন ও যমুনা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত