নগরীতে বিভিন্ন সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর স্ক্র্যাপ করা সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রায় ১২ হাজার গ্যাস সিলিন্ডার ফের নিলামে তোলা হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় নিলামে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছিল।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের তথ্যে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর সিলিন্ডারগুলো নিলামে তোলার জন্য একটি দৈনিকে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র শিডিউল ১ হাজার টাকায় সংগ্রহ করা ও ২৪ নভেম্বর দরপত্র খোলার কথা বলা হয়েছে।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো-১ সার্কেলের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ১১ হাজার ৮২৯টি সিএনজি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ কার্যক্রম শেষ করেছি। এ সময় খালি সিলিন্ডার বাদে সবকিছু মালিকেরা নিয়ে যান। আমরা তাঁদের কাছ থেকে খালি সিলিন্ডারগুলো রেখে দিই। এসব সিলিন্ডার এখন নিলামে দেওয়া হচ্ছে।’

বিআরটিএর পক্ষে দরপত্র আহ্বানকারী চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, সিএনজি স্ক্র্যাপের পর সিলিন্ডারগুলো বিআরটিএতে যে অবস্থায় পড়ে ছিল সে অবস্থায় এখন নিলামে দেওয়া হচ্ছে।

বিআরটিএ সূত্রে গেছে, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব গাড়ির মেয়াদ ১৫ বছর করে নির্ধারণ করা হয়। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামে ১৩ হাজার সিএনজি স্ক্র্যাপ করে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। নগরীতে ২০০১,২০০০, ২০০৩ ও ২০০৪ মডেলের ১১ হাজার ৮২৯টি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব অটোরিকশার মালিকদের অনুকূলে নতুন কেনা গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছে বিআরটিএ।

এসব সিলিন্ডারগুলো পরবর্তীতে নিলামে দেওয়ার জন্য একটি নামসর্বস্ব পত্রিকায় গত ২৪ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে বিআরটিএ। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ অফিস থেকে ৫০০ টাকা অফেরতযোগ্য মূল্যে দরপত্র শিডিউল ক্রয় এবং পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, মাত্র ৬টি দরপত্র জমা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সিলিন্ডারের দর দিয়েছেন ১৮৫ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত।

ওই সময় ভুক্তভোগীরা জানান, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে শিডিউল বিক্রিতে গড়িমসি করেন বিআরটিএ কিছু অসাধু কর্মকর্তা। অনেকেই দরপত্র নিতে এসে না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

লোহা ব্যবসায়ীরা জানান, সিএনজি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ করা একটি গ্যাস সিলিন্ডারে ১৭ কেজি লোহা আছে। প্রতি কেজি পুরোনো লোহা ৫০ টাকা দর হলে একটি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দেড় হাজার টাকা। স্ক্র্যাপ করা একটি গ্যাস সিলিন্ডারের বর্তমান বাজারমূল্য ৮৫০ টাকা। এ হিসেবে ১১ হাজার ৮২৯ টি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৪ হাজার ৬৫০ টাকা।

অভিযোগ উঠেছিল, বিআরটিএ, চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেলের অসাধু কর্মকর্তারা পছন্দের প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব সিলিন্ডার মাত্র ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ইউসুফ এন্টারপ্রাইজ নামের এক প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরে সমালোচনার মুখে দরপত্র প্রক্রিয়াটি বাতিল হয়ে যায়।

তবে এবার দরপত্রে শিডিউল মূল্য আগের চেয়ে আরও ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য কী কী শর্ত কিংবা মালামালগুলো কোন প্রক্রিয়ায় বিআরটিএ থেকে নিয়ে যেতে পারবেন—সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।