চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭: ৪০
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ১৬

দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ২০১৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুপাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বাড়েনি সেবার মান। ২২ জন চিকিৎসকের স্থানে ১১ জনকে দিয়ে চলছে চিকিৎসা। এমন অবস্থায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করা হলেও এখনো পর্যন্ত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা। ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য যেখানে ২২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন, কনসালট্যান্ট চারজনের জায়গায় আছেন শুধু একজন, ফার্মাসিস্ট চারজনের মধ্যে একজনও নেই। এ ছাড়া সহকারী নার্স ও জ্যেষ্ঠ নার্স সংকট রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, গাইনি ও সার্জারি কনসালট্যান্ট পেলে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হতো। একমাত্র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টও রয়েছে। জনবলের অভাবে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকার ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করেছে, কিন্তু সেবার মান বাড়াইনি। পরীক্ষা করানোর জন্য জেলা শহরে যেতে হয়। এমনকি করোনার রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনবল সংকটের কারণে।

সরেজমিন দেখা যায়, ওটির যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বাক্সবন্দী রয়েছে; যার ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। বিশেষ করে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট পদটি খালি থাকায় সেবাগ্রহীতাদের নিয়মিত বিপাকে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মরত একজন ডাক্তার বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। ২২ জন ডাক্তারের জায়গায় আমরা ১১ জন ডাক্তার সেবা দিচ্ছি। হাসপাতালে জনবল বাড়ালে রোগীরা আরও ভালো সেবা পাবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদের সেবা দিই। অতিরিক্ত সময়েও ডিউটি করতে হয়।’

সেবা নিতে আসা ওয়াজিদ মিয়া বলেন, ‘চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে বেশির ভাগ রোগীকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে যেতে বলে। আমরা এখনে প্রাথমিক চিকিৎসা পাই, কিন্তু রোগীর সিজার করাতে পারে না।’

জনবল সংকটের কথা নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘৩১ থেকে ৫০ শয্যায় হাসপাতাল উন্নতি করা হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে ফার্মাসিস্টে চারজনের মাঝে একজনও নেই। কয়েক দিন আগে নতুন করে ১৫ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের সবাই আন্তরিক থাকায় জনবলের সংকট নিয়েও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। জনবল বাড়ানো হলে আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকটের বিষয়ে সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, শিগগিরই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ৪২তম বিসিএসের নিয়োগ হওয়ার পরে ডাক্তার নিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। বিসিএসের নিয়োগ হলেই ডাক্তার নিয়োগ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কনসালট্যান্ট নিয়োগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে বলেছি। আশা করি দ্রুত সময়ে জনবল সংকটের বিষয়টি সমাধান হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত