পাংখোয়াদের গীত ও নৃত্য বিমোহিত দর্শক

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৪: ২৩
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৫

বিশেষ ছন্দের নৃত্যগীতের সঙ্গে দুই পাশে চারজন করে মোট আটজন নৃত্যশিল্পী একই তালে বাঁশকে নাড়ছেন। বাঁশের ফাঁকে ফাঁকে পা ফেলে নেচে চলেছেন দুই-চারজন নৃত্যশিল্পী। ছন্দের একটু পতন হলে নির্ঘাত বিপদ। তবে এমনটি ঘটেনি কখনো। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাংখোয়াদের মনোমুগ্ধকর এই বাঁশনৃত্য সবার পরিচিত। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও সংস্কৃতিচর্চায় এগিয়ে এই পাংখোয়া জনগোষ্ঠী।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম হরিণছড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত পাংখোয়াপাড়া। উপজেলার কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে কাপ্তাই হ্রদে ঘণ্টাখানেক ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়ার পর ২০ মিনিটের হাঁটাপথ। এখানে ১৮টি পাংখোয়া পরিবারের বাস।

পাংখোয়াদের বাঁশনৃত্য সম্পর্কে দলের সভাপতি লালরিন পাংখোয়া বলেন, ‘আমাদের আরও বেশ কয়েকটি নৃত্য আছে। এর মধ্যে ‘‘কান দামলাই’’ নৃত্য, যেটা আমরা ‘‘পার লাম’’ বলি। পাংখোয়া ভাষায় ‘‘পার’’ মানে ফুল আর ‘‘লাম’’ অর্থ নাচ। ফুল দিয়ে এই নৃত্য পরিবেশন করি আমরা। একজন ছেলে আর একজন মেয়ে জোড়া বাঁধে; এভাবে তিন-চার জোড়া করে নৃত্য পরিবেশন করে।’

পাংখোয়াপাড়া চার্চের সভাপতি আরদৌ লিয়ানা পাংখোয়া বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় অনেক প্রতিভাবান শিল্পী আছে। তাঁরা পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যদি বড় পরিসরে সুযোগ পান, তাহলে তাঁদের প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে পারবেন।’

গত ২৮ ডিসেম্বর চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের স্টাফ ক্লাবে বড়দিনের অনুষ্ঠানে বাঁশনৃত্য ও পাংখো গান পরিবেশন করে দর্শকের নজর কেড়েছেন পাংখোয়াশিল্পীরা। এতে দলের সদস্য লালরিন পাংখোয়া, লালরোয়াত, লালরিনসান, লালজেকিয়া, ডাভিদ, লালমি, জৌরামথাং, থাতজোয়াল, শালেম, রেবেকি, মালসমপার, জাইথানপার ও সাপনুনপার পাংখোয়া অংশ নেন।

চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং ও ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বিজয় মারমা জানান, প্রাক-বড়দিন উপলক্ষে গত ১৯ ডিসেম্বর তাঁরা হরিণছড়া-পাংখোয়াপাড়ায় যান। সেখানে পাংখোয়াদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি পরিবেশনায় মুগ্ধ হন। পরে শিল্পীদের চন্দ্রঘোনায় বড়দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মুনতাসির জাহান বলেন, ‘গত ২৮ ডিসেম্বর হরিণছড়া-পাংখোয়াপাড়ার শিল্পীদের বাঁশনৃত্য ও গান শুনে আমি অভিভূত। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি কাপ্তাইয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের সংস্কৃতি বিকাশে সব ধরনের সহায়তা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত