ফ্যাশনের প্রতীক কোকো শ্যানেল

তামান্না-ই-জাহান
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪২
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ১০: ৫৯

আধুনিক ফ্যাশনের খোলনলচে যাঁরা বদলে দিয়েছেন, তাঁদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবেন ফরাসি ফ্যাশন কিংবদন্তি কোকো শ্যানেল। বৈশ্বিক ফ্যাশনে তিনি আজও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে আছেন।

আরামের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেলে নারীদের পোশাকে নতুনত্ব আনেন তিনি। তাঁর নকশা করা কালো রঙের ছোট কাটের পোশাক আজও সমান আবেদন রাখছে। মেরিলিন মনরো, প্রিন্সেস ডায়ানার মতো বিশ্বখ্যাত অনেকে শ্যানেলের ডিজাইন করা পোশাক পরেছেন। শুধু ছোট কালো পোশাকটিই নয়, পুরুষের ছাঁটে মেয়েদের স্যুটের প্রচলনও প্রথম করেন শ্যানেল। এ ছাড়া ফ্যাশন হিসেবে নারীদের প্যান্ট পরার প্রচলন গড়েন তিনি।

কোকো নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম গ্যাব্রিয়েলে শ্যানেল। ১৮৮৩ সালে ফ্রান্সের সৌমুর শহরে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম তাঁর। মাত্র ১২ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু। পরে অনাথ আশ্রমে জায়গা হয় তাঁর। সেখানে তিনি সেলাইয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। একটি ক্যাফেতে গায়িকা হিসেবে কাজ করার সময় ‘কোকো’ নামে পরিচিতি পান তিনি।

গান গাইতে গিয়ে এতিয়েন বালসান নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য হয় শ্যানেলের। এতিয়েনের মাধ্যমে সমাজের অভিজাত শ্রেণির সংস্পর্শে আসেন এই স্বপ্নবাজ তরুণী। এ সময় পরিচয় ঘটে এতিয়েনের বন্ধু আর্থার ক্যাপেল বয়ের সঙ্গে। বয় একজন দক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিলেন। পরিচয় থেকে প্রণয় গড়ে ওঠে দুজনের।

একপর্যায়ে বয়-শ্যানেল সিদ্ধান্ত নেন প্যারিসে হ্যাটের ব্যবসা করবেন। বয়ের সহায়তায় ১৯১০ সালে একটি হ্যাটের দোকান খোলেন কোকো। কয়েক বছর পর শুরু করেন বুটিকের দোকান। সেখান থেকে খোলেন নিজের একটি ফ্যাশন হাউস। কয়েক বছরের মধ্যে পোশাকের নকশায় নতুনত্ব আনতে শুরু করেন শ্যানেল।

১৯১৯ সালে শ্যানেলের সঙ্গে দেখা করতে আসার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বয়। কারও মৃত্যুতে জীবন থেমে থাকে না। কোকো শ্যানেলও থেমে থাকেননি। ১৯২০-এর দশকে ফ্যাশন অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। অতি দ্রুত তাঁর খ্যাতি ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় আমেরিকায়।

কোকোর ডিজাইন করা পোশাকের পাশাপাশি হাতব্যাগ ও অলংকার দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর জগদ্বিখ্যাত পারফিউম ‘শ্যানেল ফাইভ’ তো সৌরভ ছড়িয়ে চলছে দুনিয়াজুড়ে। জ্যামিতিক আকারে পারফিউমের বোতল ও সাদা লেবেলে কালো কালিতে ব্র্যান্ডের নাম লিখে ভিন্নতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শ্যানেলের ফ্যাশন হাউস বন্ধ করে দেওয়া হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে থাকেন শ্যানেল। পরে আবার প্রিয় প্যারিসে ফিরে আসেন এই ফরাসি ফ্যাশন স্রষ্টা।

১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি ফ্যাশনজগতের এই আইকনের মৃত্যু হয়।

 

তথ্যসূত্র: ভোগ ম্যাগাজিন, ব্রিটানিকা ডট কম, দ্য গার্ডিয়ান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত