Ajker Patrika

মানবতাবাদী শিল্পী

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১২: ১৩
মানবতাবাদী শিল্পী

আসামের মানুষ। আসামের লোকজগানগুলো খুব প্রিয় ছিল তাঁর। আসামেই পড়াশোনা, এরপর বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি।

গান তো ছিল প্রাণেই। তবে মোহিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে পল রোবসনের কথা শুনে। আর তাঁকে দেখার পর একেবারে তাঁর ভক্ত হয়ে যান ভূপেন। রোবসন রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখের শূল ছিলেন। হলিউড থেকেও তাঁকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। স্টেজ শো পেলে সেগুলো যেন না হতে পারে, তার সব ধরনের চেষ্টা করেছে সরকার। রেকর্ডিং কোম্পানিগুলো বলেছে, ‘সরি, তোমার গান রেকর্ড করতে পারব না।’ এ রকম নাজেহাল অবস্থায় তিনি এসেছিলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শোনান তাঁর ‘ওল’ ম্যান রিভার, হি ডোন্ট সে নাথিন’ গানটি। এই গানের সুরের ওপরই ভূপেন বসিয়েছিলেন তাঁর অসাধারণ ‘বিস্তীর্ণ দুপারের অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনেও...’ গানটির শব্দগুলো।

পল রোবসন ছাড়া পিট সিগারেরও অনুরক্ত ছিলেন ভূপেন। বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ভূপেন। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দাঙ্গাবিধ্বস্ত আসামে বিপ্লবী সংস্কৃতি সংগঠকদের সঙ্গে সারা আসাম ঘুরে গান করেছেন, দাঙ্গাবিরোধী গান করে দাঙ্গা থামিয়েছেন। এ ছাড়া প্রগতিশীল সংস্কৃতিসেবী জ্যোতিপ্রসাদ আগারওয়াল, আব্বাসউদ্দীন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখের ছিলেন সহযাত্রী। জীবনের শেষ প্রান্তে বিজেপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। পরে ভুলটাও স্বীকার করেছিলেন। তিনি মূলত মানবতাবাদী একজন শিল্পী হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। ‘জীবনতৃষ্ণা’ ছবিতে ভূপেন একটি অসমিয়া ছবির বিখ্যাত গান ‘সাগর সঙ্গমে কত না হাতিরুনু’ গানটি ব্যবহার করেছিলেন। বাংলায় ‘সাগর সঙ্গমে সাঁতার কেটেছি কত’ গানটি লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিতে দেখা গিয়েছিল গানটি গাইছেন উত্তমকুমার। গানটি গেয়েছিলেন ভূপেন হাজারিকা। ওটাই ছিল অসমিয়া থেকে বাংলায় রূপান্তরিত প্রথম গান।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গেয়েছিলেন ‘জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,/ জয় জয় মুক্তিবাহিনী/ ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে/ মৈত্রীর কাহিনি।’ ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর তিনি মারা যান।

সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, ভূপেন হাজারিকার অজানা ১০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত