সিত্রাংয়ে কৃষিতে ক্ষতি ১৭ কোটি টাকা

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
Thumbnail image

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে গোপালগঞ্জে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার প্রায় ৯ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ২৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বাকি ১ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে সবজি, সরিষা, মসুর, খেসারি, মোটর, ফলবাগান, মরিচ, পান ও মাষকলাইয়ের চাষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এবং নিম্নচাপের কারণে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৮১২ হেক্টর এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৭৯৮ হেক্টর। যেখানে ফসল উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৫ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ কৃষকই বর্গাচাষি। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই চাষাবাদের জমি যা পরের কাছ থেকে বর্গা নেওয়া। আবার এর মধ্যে অনেকাংশ কৃষক ধার-দেনা করে চাষাবাদ করেন। জানা গেছে, এ বছর ২৩ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ হেক্টর জমি। যার মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৬৭০ হেক্টর। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ হাজার কৃষক। ৭২৭ হেক্টর জমির ফলের বাগানের মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ সাড়ে ৩০০ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হেক্টর জমির ফলের বাগান। ফলের বাগানে ৫০০ কৃষকের ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ২৫০ জন কৃষকের ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে সবজি চাষে। এ ছাড়া সরিষায় ২৮ লাখ, মসুরে ১৫ লাখ, খেসারিতে ৩ লাখ, মোটরে ৩ লাখ, মরিচে ৪ লাখ, মাষকলাইতে ৩ লাখ ৬ হাজার ও পানে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রয়েছেন সাড়ে ৬০০।

টুঙ্গিপাড়ার বর্গাচাষি আমিনুল শেখ বলেন, ‘সিত্রাংয়ের কারণে টমেটোবাগানের বেশির ভাগ গাছই ভেঙে গেছে। যে কয়টা গাছ আছে, সব কটিই ফুল পড়ে গেছে, ছোট সাইজের টমেটো সব ঝরে গেছে। এ ছাড়া করলাগাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর শুধু টমেটো বিক্রি করে দুই লাখ টাকার মতো লাভ করতে পারতাম।’

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কিষানি আরতী বিশ্বাস বলেন, ‘পরের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পুঁজি বলতে যা ছিল, সবই চাষাবাদে খরচ করেছি। ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে। সরকার যদি আমাদের কোনো আর্থিক সহায়তা না করে, তাহলে আমাদের আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।’

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এবং নিম্নচাপের কারণে গোপালগঞ্জের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রয়েছেন ৮ হাজার ৯০০ জন। ক্ষতির পরিমাণসহ বিস্তারিত প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। কোনো প্রণোদনা এলে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত