আলোর স্বল্পতা, ফ্লাইটে বিঘ্ন

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭: ৫৯
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫২

আলোর স্বল্পতায় বরিশাল বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামায় বিঘ্ন ঘটছে। শীতের শুরুতেই ঘন কুয়াশার কারণে গত এক সপ্তাহে ৩-৪ বার বিমান অবতরণ করতে না পেরে ফিরে গেছে। আবার সন্ধ্যার পরও বন্দর ত্যাগ করতে গিয়ে আলোর অভাবে বিপাকে পড়ছেন পাইলটেরা।

বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত আলোক ব্যবস্থা ও চারদিকে গাছপালা কাটার জন্যও তাঁরা একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা যায়। কিন্তু বরিশাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রী, সাংসদ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাসহ সাধারণ যাত্রীরা যাত্রাপথে বিপাকে পড়ছেন। ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বরিশাল সফরে এলে বরিশাল বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গত সোমবার আলোর স্বল্পতার কারণে বিমানের একটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরে তা বরিশালে অবতরণ করে। সকাল ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর ফ্লাইটটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে রওনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে। আকাশ থেকে রানওয়ে দেখতে না পেরে দুই দফার চেষ্টাতেও ব্যর্থ হয়ে পাইলট ঝুঁকি না নিয়ে উড়োজাহাজসহ চট্টগ্রামে উড়ে যান। সেখানে নিরাপদে অবতরণ করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমান নিয়ে বরিশাল বিমানবন্দরে অবতরণে সক্ষম হন। এ ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি।

এর আগে গত ৭ ডিসেম্বরও একই কারণে বরিশাল বিমান বন্দরে দুটি ফ্লাইট অবতরণ করতে না পেরে ঢাকায় ফিরে যায়। উড়োজাহাজ দুটির একটিতে থাকা এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, বিমান যখন ল্যান্ড করার চেষ্টা করে তখনই আলোর স্বল্পতার বিপত্তি দেখা দেয়। যে কারণে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। আবার বিমানবন্দরের চারদিকে প্রচুর গাছপালা থাকায় একাধিকবার পাইলটেরা অভিযোগ দিয়েছেন। গোটা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রাচীরের দেড় শতাধিক আলোকবাতি এক বছর থেকে অকেজো হয়ে আছে।

বরিশাল-ঢাকা আকাশপথের একটি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কাছে উড়োজাহাজ চালকেরা অভিযোগ করেছেন যে রানওয়ের চারদিকে অসংখ্য গাছপালা। রয়েছে উঁচু ভবনও। যে কারণে পাইলট এ বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন নিয়ে আতঙ্কে আছেন। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ ভবন, টিঅ্যান্ডটির উঁচু ভবন নিয়ে চিন্তিত বিমানবন্দরের চালকেরা। এ নিয়ে একাধিকবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রানওয়ের বাতির ত্রুটি রয়েছে। বাল্ব সরবরাহ না থাকায় বাউন্ডারিতে বাতি জ্বলে না। গাছের ডালে কিছুদিন আগেও একটি বিমানে আঘাত লেগেছিল। যে কারণে বন্দরের দক্ষিণ ও উত্তর পাশের ৬০ জন বাসিন্দাকে গাছ কাটার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক ও বিমানবন্দর সংলগ্ন বাসিন্দা আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরে সবচেয়ে বড় সমস্যা রানওয়েতে আলো না থাকা। বিমানবন্দরের চারদিকের বাতিগুলো এক বছর ধরে অচল থাকায় বন্দরের চারপাশ রাত নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায়। এতে বহিরাগত ঢুকে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি এমন অব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এদিকে গত গত ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বরিশাল বিমানবন্দরে নেমে সেখানকার অব্যবস্থাপনা দেখে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকের ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি দ্রুত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে তাগিদ দেন।

বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, বিমানবন্দরের উন্নয়নে মুখ্য সচিব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

বরিশাল বিমানবন্দরের ম্যানেজার আব্দুল রহিম এ প্রসঙ্গে জানান, তাঁর কাছে তথ্য আছে। কিন্তু বিমানবন্দরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন। সিভিল অ্যাভিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে ‘প্ল্যান্ট প্রোটেকশন’ বন্দর হিসেবে দুই হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮৫ সালে এটিকে বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে ঢাকা-বরিশাল রুটে উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ১৬০ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১০০ ফুট। কিন্তু ২৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বরিশাল বিমানবন্দর। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এখানে রানওয়ে নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত