শিশুদের জন্য দুপুরের খাবার

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৪৩
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৫

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১টা ৩০ মিনিট। বিরতির ঘণ্টা বেজে উঠল। বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এল শিক্ষার্থীরা।

হুল্লোড় করে খুদে শিক্ষার্থীরা দৌড় দিল স্কুল মাঠের দিকে। তাদের পেছনে পেছনে কলাপাতা হাতে নিয়ে মাঠে উপস্থিত হলেন কয়েকজন শিক্ষক। এরপর খোলা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বিছিয়ে দেওয়া হলো সেগুলো। হাত ধুয়ে সারিবদ্ধভাবে লাইনে বসে শিক্ষার্থীরা শুরু করল দুপুরের খাবার!

সম্প্রতি এক দুপুরে এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া গেল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার তারবাগান গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তিন বছর ধরে এভাবে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা চালু রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি দুপুরে খাবার পেয়ে খুশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত তারবাগান গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০, রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। একসময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খেয়াল করে, শতভাগ নয়, প্রতিদিন ক্লাসে হাজির থাকে ৬০ থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে ভাবনায় পড়লেন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং ঝরে পড়া রোধে নিজেই উদ্যোগ নিলেন দুপুরের খাবার দেওয়ার। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডাকলেন। জাহাঙ্গীর আলম পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালুর পরিকল্পনার কথা জানালেন তাঁদের। সে পরিকল্পনায় সম্মতি দিলেন সবাই। তারবাগান গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য চালু হলো মিড ডে মিল।

বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রোজিনা আক্তার বলেন, আগে অর্ধেকেরও বেশি শিশু স্কুলে ঠিকমতো আসত না। আবার এলেও দুপুরের পর থাকত না। স্কুলে দুপুরের খাবার কার্যক্রম চালু হওয়ার পর শিশুরা ক্লাসে নিয়মিত হয়েছে। এখন উপস্থিতি প্রায় ৯৮ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আফিয়া, তানজিনা ও সাব্বির জানায়, প্রতিদিন সকালে তারা বাড়ি থেকে মুড়ি, চিড়া খেয়ে স্কুলে আসে। দুপুরে বিস্কুট, পাউরুটি, কলা, ডিমসহ নানা রকম পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় স্কুল থেকে। এ ছাড়া মাসে দুই দিন খিচুড়ি ও ভাত দেওয়া হয়।

শ্রীমতি রানী নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘অনেক সময় আমরা বাড়ি থেকে স্কুলে চাল ও সবজি নিয়ে আসি। রান্নার বাবুর্চিকেও সহযোগিতা করি। আমাদের সন্তানেরা দুপুরে বিদ্যালয়ে নিয়মিত খাবার খেতে পারে। এতে তাদের মন যেমন ভালো থাকে, তেমনি লেখাপড়াও ভালো হয়।’

প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার তারবাগান এলাকার অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। অভাব-অনটনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসত না। এভাবে বহু পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং স্কুল থেকে ঝরে যায়। একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি তাঁকে পীড়া দেয়। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নসহ ঝরে পড়া রোধে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতেই এমন উদ্যোগ নেন তিনি।

স্কুলে মিড ডে মিলের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মুনছুর রহমান বলেন, এটি একটি দৃষ্টান্ত। অন্যরাও চাইলে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। এভাবে একসঙ্গে খাবার খাওয়ার ফলে শিশুরা ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা শিখছে। বেড়ে ওঠার পাশাপাশি তাদের মধ্যে মানবিকতার শিক্ষাটা ছড়িয়ে পড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত