রহমান মৃধা
অতীতে গ্রামে সব ধরনের খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, দুধ ইত্যাদি সহজলভ্য ছিল। কিছু খেতে ইচ্ছে হলে কখনো ভাবিনি যে ‘এটা খাওয়া যাবে না’ বা ‘ওটা খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ মনের আনন্দে যখন যেটা খুশি সেটা খেয়েছি কোনো সমস্যা ছাড়াই। সে সময়ও ভেজাল নিয়ে কথা হয়েছে বটে। যেমন, মসুরের মধ্যে বাজারির মিশ্রণ, দুধে পানি মেশানো, পাট কম শুকানো, সরিষার তেলের সঙ্গে অন্য তেল মেশানো ইত্যাদি। স্কুলে পরীক্ষার হলে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ নকল করেছে। যদি ধরা খেয়েছে এ অপরাধের কারণে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে গ্রামে সেটা রটে গেছে। সে এক লজ্জার কথা! এসব ছিল তখনকার দিনে ঘৃণ্য অপরাধ।
এখন অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন মসলায় বিষাক্ত রং, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশায়। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং, ফরমালিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় ফরমালিন। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মাছ তাজা থাকা অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ফরমালিন পুশ করা হয়। আর ছোট আকারের মাছ শুধু ফরমালিন-মিশ্রিত পানির ড্রামে চুবিয়ে তুললেই চলে! বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী কারখানায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই। দম বন্ধ হওয়া গরমে খালি গায়ে বেকারিশ্রমিকেরা আটা-ময়দা পা দিয়ে দলিতমথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্যদ্রব্য। এসব বেকারির পণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ভেজাল খাওয়ার কারণে আমাদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ।
বাংলাদেশে দুর্নীতি আর খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। মনে হচ্ছে, সবার মধ্যে এগুলো একধরনের অলিখিত বৈধতা পেয়েছে। এখন মহাসমারোহে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য মরণব্যাধির নানা বিষাক্ত পদার্থে পরিপূর্ণ। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। একটি দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তাদের নৈতিকতা। আমরা তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়েছি একটি বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, তৈরি করেছি মহান আত্মত্যাগের অবিস্মরণীয় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের সেই রক্তাক্ত আত্মবিসর্জন আমাদের দিয়েছে ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র।
এই মহান আত্মত্যাগ, এই ভৌগোলিক স্বাধীনতা যথার্থ পূর্ণতা পাবে যদি আমরা আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ, সবল জাতি গঠন করতে সক্ষম হই। কারণ, একটি সুস্থ, সবল জাতিই পারে সব শৃঙ্খল, প্রতিকূলতা ছিন্নভিন্ন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
এখন প্রশ্ন—কীভাবে সম্ভব আমাদের খাদ্যের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা? আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং আচরণের ওপরে নানা ধরনের মানসিক শক্তি প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে ‘সুপার ইগো’ হচ্ছে নৈতিক আদর্শ বা সামাজিক উপাদানের একটি বিশেষ দিক। আমাদের ‘সুপার ইগো’-কে বেশি করে ক্রিয়াশীল করতে হবে। উচিত হবে নৈতিক আদর্শের ভিত্তিকে মজবুত করার কাজে মনোনিবেশ করা। আইনের কঠিন ও কঠোর প্রয়োগ হয়তো ‘ইগো’-কে শক্তিশালী করবে, কিন্তু টেকসই সমাধান হলো ‘সুপার ইগো’ শক্ত করা। আমাদের মনোযোগ দিতে হবে এমন সমাজ গঠনের প্রতি—যে সমাজে সুযোগ সবার জন্য সমভাবে বণ্টিত। কেননা, এর অসম বণ্টন সমাজে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে।
আমি সুইডেনে এমন ধারণা বারবার লক্ষ করি। জাতি হিসেবে এদের নৈতিক মূল্যবোধ অনেক উঁচুতে। এদের চিন্তাচেতনায় লক্ষণীয় যে তারা কতটুকু উপার্জন করছে এবং তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কীভাবে উপার্জন করছে। সচেতন জাতি অজুহাত নয়; খোঁজে সমাধান এবং সামষ্টিক কল্যাণ। তাই খাদ্যে ভেজাল রোধে শুধু ভেজালবিরোধী অভিযানেই সমাধান খুঁজলে হবে না, আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। নয়তো আমরা বুঝবই না যে খাদ্যে ভেজাল মেশানোটাও ‘এক লজ্জার কথা’!
লেখক: রহমান মৃধা
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অতীতে গ্রামে সব ধরনের খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, দুধ ইত্যাদি সহজলভ্য ছিল। কিছু খেতে ইচ্ছে হলে কখনো ভাবিনি যে ‘এটা খাওয়া যাবে না’ বা ‘ওটা খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ মনের আনন্দে যখন যেটা খুশি সেটা খেয়েছি কোনো সমস্যা ছাড়াই। সে সময়ও ভেজাল নিয়ে কথা হয়েছে বটে। যেমন, মসুরের মধ্যে বাজারির মিশ্রণ, দুধে পানি মেশানো, পাট কম শুকানো, সরিষার তেলের সঙ্গে অন্য তেল মেশানো ইত্যাদি। স্কুলে পরীক্ষার হলে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ নকল করেছে। যদি ধরা খেয়েছে এ অপরাধের কারণে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে গ্রামে সেটা রটে গেছে। সে এক লজ্জার কথা! এসব ছিল তখনকার দিনে ঘৃণ্য অপরাধ।
এখন অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন মসলায় বিষাক্ত রং, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশায়। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং, ফরমালিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় ফরমালিন। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মাছ তাজা থাকা অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ফরমালিন পুশ করা হয়। আর ছোট আকারের মাছ শুধু ফরমালিন-মিশ্রিত পানির ড্রামে চুবিয়ে তুললেই চলে! বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী কারখানায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই। দম বন্ধ হওয়া গরমে খালি গায়ে বেকারিশ্রমিকেরা আটা-ময়দা পা দিয়ে দলিতমথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্যদ্রব্য। এসব বেকারির পণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ভেজাল খাওয়ার কারণে আমাদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ।
বাংলাদেশে দুর্নীতি আর খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। মনে হচ্ছে, সবার মধ্যে এগুলো একধরনের অলিখিত বৈধতা পেয়েছে। এখন মহাসমারোহে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য মরণব্যাধির নানা বিষাক্ত পদার্থে পরিপূর্ণ। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। একটি দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তাদের নৈতিকতা। আমরা তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়েছি একটি বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, তৈরি করেছি মহান আত্মত্যাগের অবিস্মরণীয় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের সেই রক্তাক্ত আত্মবিসর্জন আমাদের দিয়েছে ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র।
এই মহান আত্মত্যাগ, এই ভৌগোলিক স্বাধীনতা যথার্থ পূর্ণতা পাবে যদি আমরা আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ, সবল জাতি গঠন করতে সক্ষম হই। কারণ, একটি সুস্থ, সবল জাতিই পারে সব শৃঙ্খল, প্রতিকূলতা ছিন্নভিন্ন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
এখন প্রশ্ন—কীভাবে সম্ভব আমাদের খাদ্যের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা? আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং আচরণের ওপরে নানা ধরনের মানসিক শক্তি প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে ‘সুপার ইগো’ হচ্ছে নৈতিক আদর্শ বা সামাজিক উপাদানের একটি বিশেষ দিক। আমাদের ‘সুপার ইগো’-কে বেশি করে ক্রিয়াশীল করতে হবে। উচিত হবে নৈতিক আদর্শের ভিত্তিকে মজবুত করার কাজে মনোনিবেশ করা। আইনের কঠিন ও কঠোর প্রয়োগ হয়তো ‘ইগো’-কে শক্তিশালী করবে, কিন্তু টেকসই সমাধান হলো ‘সুপার ইগো’ শক্ত করা। আমাদের মনোযোগ দিতে হবে এমন সমাজ গঠনের প্রতি—যে সমাজে সুযোগ সবার জন্য সমভাবে বণ্টিত। কেননা, এর অসম বণ্টন সমাজে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে।
আমি সুইডেনে এমন ধারণা বারবার লক্ষ করি। জাতি হিসেবে এদের নৈতিক মূল্যবোধ অনেক উঁচুতে। এদের চিন্তাচেতনায় লক্ষণীয় যে তারা কতটুকু উপার্জন করছে এবং তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কীভাবে উপার্জন করছে। সচেতন জাতি অজুহাত নয়; খোঁজে সমাধান এবং সামষ্টিক কল্যাণ। তাই খাদ্যে ভেজাল রোধে শুধু ভেজালবিরোধী অভিযানেই সমাধান খুঁজলে হবে না, আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। নয়তো আমরা বুঝবই না যে খাদ্যে ভেজাল মেশানোটাও ‘এক লজ্জার কথা’!
লেখক: রহমান মৃধা
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে