Ajker Patrika

‘জিনিসের দাম শুনে মাথা ঘোরে’

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৪: ৪৩
‘জিনিসের দাম শুনে মাথা ঘোরে’

‘হামাকের মতন গরিব মানষের দিন শ্যাষ। গাও-গদোরে খ্যাটা অ্যানা দুই বেলার খাবার কিনার টাকা জোগাড় হচে না। বাজারত যায়া জিনিসের দাম শুনে মাথা ঘোরে। মাঝেমধ্যে লজ্জাত পড়ি বাড়িত ঘোরা যায়। তখন বুকটা ফ্যাটা যায়।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে নওগাঁ খুচরা সবজি বাজারে এভাবে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা জামেনা বিবি (৬১)।

জামেনা বিবি বলেন, ‘হামাকের বয়স তো কম লই। অ্যাঙ্কা কষ্টত কখলই পরবার হয়নি। লিজের জমানা টাকাও নাই। কাজকাম করা মাসে কিছু টাকা পাও, ওল্লা দিয়েই কোনো মতে চলিচ্চি। যে কামাই, তাক দিয়া দিন চলোচে না।’

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু জামেনা বিবি নন, এমন আক্ষেপ আর হতাশা বহু দিনমজুর ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। দ্রব্যের ঊর্ধ্বমুখী দরে এক দিনের আয়ে দুবেলার খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চাল প্রকারভেদে ৪৮ থেকে ৭৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েক মাস আগে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ২২০ থেকে বেড়ে ২৫০ এবং দেশি মুরগি ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা চালের বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করছিলেন ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা মজিদ আলী। তিনি বলেন, ‘ভাই, কোনটা থুইয়া কোনটা লিব, কিচ্চু বুঝবার পারিচ্চি না। চাল, ডাল, তরকারি, তেল ও মসলা কিনার টাকা থাকে না। আবার তেল মসলা সবজি কিনলে চাল কিনার টাকাই হওচে না। জিনিসের দাম এ্যাঙ্কা থাকলে হামি বেশি দিন বাঁচবার লই।’

বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছিলেন কালীতলা এলাকার বাসিন্দা জুয়েল হোসেন। তিনি রিকশা মেকানিকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সাংবাদিক দেখে তাঁর প্রশ্ন, ‘ভাই, কনতো, হঠাৎ করাই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে ক্যান? টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীরা জিনিসপাতি কিনি জমা থোছে। সংকট দ্যাখায়া আবার দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার দাম বাড়লে তো সেটার কমার কথাই নাই। এটাই তারা সুযোগে লাগাচ্চে।’

এদিকে ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩৫, রসুন ৪০ থেকে ৮০, আলু ২০ থেকে ৩৫, করলা ২০ থেকে ৪০, পটোল ২০ থেকে ৩৫ এবং ঢ্যাঁড়স ২০ থেকে ৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ একটি আইসক্রিম ডিলারের কর্মচারী মাজেদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচব, বলতে পারেন? বেতন পাই ৭ হাজার টাকা, সাদা ভাত আর সবজি খেতে পরিবারের মোটমাট খরচ যায় ১০ হাজার। এমন কোনো জিনিস নাই যে তার দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়নি। দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নাই। বেঁচে থাকা দায় হয়ে গেছে।’

নওগাঁর মুক্তির মোড়ের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, শুধু শাকসবজি নয়, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। সবজি কাঁচা পণ্য হওয়ায় এটা কখনো বাড়ে কখনো কমে। তবে অন্য পণ্যের অবস্থা ভয়াবহ। যেটা একবার বাড়ে আর কমে না। সরকারিভাবে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শামীম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। তারপরও যাঁরা অনিয়ম করছেন তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত