মো. গোলাম রহমান
জনগণের ভবিষ্যৎ অধিকার চিন্তায় রেখে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’কে জাতিসংঘ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে। তাই তারা আগামী দিনের মতপ্রকাশের অধিকারকে সব ধরনের অধিকারের অন্যতম পরিচালিকা হিসেবে মনে করছে এ দিনটিকে।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ (১৯৯১) অনুযায়ী, ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে সাংবাদিকসহ অন্যান্য অধিকারকর্মীরা দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ভবিষ্যৎ অধিকার প্রতিষ্ঠায় মতপ্রকাশের অধিকার সকল মানবাধিকারের চালিকাশক্তি’। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিক্যাল ১৯ ধারার সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সংবাদপত্র সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আমাদের দেশের সংবিধানে বর্ণিত ৩৯ ধারায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। দেশের প্রচলিত সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার ও বহুল ব্যবহার জনগণকে একরকমের স্বস্তি দেয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক। এসব মাধ্যম তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ও নীতি বজায় রেখে প্রকাশিত হবে—এটাই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটলে গণতন্ত্রের যাত্রা সমস্যাসংকুল হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম হাত ধরাধরি করে চলে। এর যেকোনো একটি আরেকটির পরিপূরক।
আমাদের দেশে সময়ে-সময়ে গণতন্ত্রের চর্চায় এসেছে দুর্দিন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ভাগ্যে জুটেছে নানা প্রতিবন্ধকতা—কখনো প্রকাশ্যে, কখনো প্রচ্ছন্নভাবে। ইতিহাসের পাতা ওলটালে এই উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে। সামরিক সরকার কিংবা সেনা-সমর্থিত সরকারের আমলে এমন অনেক অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, আজ সে আলোচনায় না যাই। গণতান্ত্রিক সমাজের বড় অহংকার হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া। গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের অভিজ্ঞতা খুব সুখপ্রদ নয়। সব সরকারই তাদের নিজেদের সুবিধাজনক একটা পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যা নাকি মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে সংকীর্ণ ও ঘোলাটে করে তুলে। তারা শুধু তাদের নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বুঝতে চায়, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনে না। গণতন্ত্রের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। এই সহিষ্ণুতা না থাকলে গণতন্ত্রের যাত্রা সুখকর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারি, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের অন্তর্নিহিত বক্তব্য ও চেতনা অবশ্যই বাধাবিপত্তিহীন গণমাধ্যমের পেশাগত চর্চা অব্যাহত রাখা। সাংবাদিকেরা যখন তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ লিখতে বসেন, তখন তিনি পাঠক-শ্রোতা-দর্শকের কথা মাথায় রেখে তা লেখেন, তখন কিন্তু তাঁর মাথায় উদ্দেশ্যমূলক কোনো বিশেষ রাজনীতি, সরকার কিংবা কোনো বিশেষ শক্তির কথা ভাবনায় থাকার কথা নয়। তবে, পেশাগত নৈতিক, আদর্শিক ও আইনি প্রেক্ষাপট তাঁর মাথায় থাকে, থাকতে হয়।
এই দিনটি পালনের মাধ্যমে দেশে দেশে সরকার এবং প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। পেশাজীবিত্ব ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশিশক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কারণে গণমাধ্যমের একধরনের উন্নয়ন ও রূপান্তর ঘটছে। কম-বেশি সব মাধ্যমেই প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে মানুষের জীবনে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে। ইন্টারনেট ইদানীং প্রায় সব বয়সের মানুষের পেশায় ও জীবনের মান উন্নয়নে গভীর ভূমিকা রাখছে এবং তাঁদের জীবনাচরণ যাচ্ছে পাল্টে। ইন্টারনেট মানুষকে অনেক বেশি প্রকাশমুখী করে তুলেছে; বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে যে কেউ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। ইতিপূর্বে মানুষ এত বেশি মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ পেত না, কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপকতার ফলে তারা যেকোনো বিষয়ে একই সঙ্গে কিংবা পৃথকভাবে পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা বা মতামত দেওয়া অথবা শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক বিষয় দৃষ্টিগোচর করতে পারছে, এমন কিছু নেই যে আজ অপ্রকাশ্য থাকছে।
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অগ্রসরতায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। জনগণের আইনগত নিরাপত্তা ও সুবিধা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো দেশে প্রযুক্তিবান্ধব আইন এবং সেসব আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। অথচ আমরা দেখছি, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর বেশ কয়েকটি ধারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার ফলে এর অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে যে কেউকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরালে প্রেরণ করা হচ্ছে, অনেকেই কোনো অন্যায় না করেও শুধু অভিযোগের কারণে বিচারহীন শাস্তি ভোগ করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি মাসে এই আইনে ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ১১ মাসের হিসাবে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারি ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১-এ প্রতি মাসে সংখ্যা ছিল ১৮। জানুয়ারি ২০২০, ফেব্রুয়ারি ২০২২ অন্তত ৮৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। [সূত্র: সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ]। এই সব অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং শিক্ষার্থী রয়েছেন উল্লেখযোগ্য হারে। আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম সংস্থাগুলোর স্কোরে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্ত সংবাদপত্রের অবস্থান। দেখা যাচ্ছে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল, জনগণ তার সুফল না পেয়ে বরং নির্যাতিত হচ্ছে, সাংবাদিকেরা এর মধ্যে অন্যতম। এই আইনকে জনবান্ধব করার লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রশ্নবিদ্ধ ধারাগুলো পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আইনের পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম, সম্প্রচার, সাংবাদিকতাসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, যার মধ্যে কতিপয় আবার নতুন করে প্রণয়নের পথে রয়েছে, এগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্টজন ও প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস সব গণমাধ্যমের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক আচার-আচরণের প্রত্যাশা করে। সাধারণত দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি সংস্থার বিপক্ষে দাঁড়ায় এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে থাকে। সে দিক থেকে সরকারি দল কিছুটা বেকায়দায় পড়ে, অপরপক্ষে বিরোধী মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তুলনামূলকভাবে গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সরকারি কিংবা তাদের সমর্থক দলগুলোর অনেক হিসাব করে চলতে হয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজটি সহজ নয়। এটাও ঠিক যে জনবান্ধব আইন এবং আইনের প্রয়োগ ছাড়াও তাদের কাজকর্ম ও আচার-আচরণ জনগণ বিশেষভাবে নজর রাখে। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেমন সমুন্নত রাখতে হবে, একইভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রাথমিক শর্ত। এই আপ্তবাক্য পেশাগত চর্চাকে গতিশীল করবে। আমরা চাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশ অব্যাহত থাকবে। দায়িত্বশীল পেশাগত আচার-আচরণ এবং সমাজের কল্যাণে অঙ্গীকার যেকোনো গণমাধ্যমের জন্য পালনীয়। মানুষের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীন পথচলার পরিবেশ নিশ্চিত হবে—এটাই কাম্য।
মো. গোলাম রহমান, সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জনগণের ভবিষ্যৎ অধিকার চিন্তায় রেখে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’কে জাতিসংঘ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে। তাই তারা আগামী দিনের মতপ্রকাশের অধিকারকে সব ধরনের অধিকারের অন্যতম পরিচালিকা হিসেবে মনে করছে এ দিনটিকে।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ (১৯৯১) অনুযায়ী, ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে সাংবাদিকসহ অন্যান্য অধিকারকর্মীরা দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ভবিষ্যৎ অধিকার প্রতিষ্ঠায় মতপ্রকাশের অধিকার সকল মানবাধিকারের চালিকাশক্তি’। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিক্যাল ১৯ ধারার সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সংবাদপত্র সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আমাদের দেশের সংবিধানে বর্ণিত ৩৯ ধারায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। দেশের প্রচলিত সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার ও বহুল ব্যবহার জনগণকে একরকমের স্বস্তি দেয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক। এসব মাধ্যম তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ও নীতি বজায় রেখে প্রকাশিত হবে—এটাই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটলে গণতন্ত্রের যাত্রা সমস্যাসংকুল হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম হাত ধরাধরি করে চলে। এর যেকোনো একটি আরেকটির পরিপূরক।
আমাদের দেশে সময়ে-সময়ে গণতন্ত্রের চর্চায় এসেছে দুর্দিন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ভাগ্যে জুটেছে নানা প্রতিবন্ধকতা—কখনো প্রকাশ্যে, কখনো প্রচ্ছন্নভাবে। ইতিহাসের পাতা ওলটালে এই উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে। সামরিক সরকার কিংবা সেনা-সমর্থিত সরকারের আমলে এমন অনেক অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, আজ সে আলোচনায় না যাই। গণতান্ত্রিক সমাজের বড় অহংকার হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া। গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের অভিজ্ঞতা খুব সুখপ্রদ নয়। সব সরকারই তাদের নিজেদের সুবিধাজনক একটা পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যা নাকি মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে সংকীর্ণ ও ঘোলাটে করে তুলে। তারা শুধু তাদের নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বুঝতে চায়, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনে না। গণতন্ত্রের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। এই সহিষ্ণুতা না থাকলে গণতন্ত্রের যাত্রা সুখকর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারি, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের অন্তর্নিহিত বক্তব্য ও চেতনা অবশ্যই বাধাবিপত্তিহীন গণমাধ্যমের পেশাগত চর্চা অব্যাহত রাখা। সাংবাদিকেরা যখন তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ লিখতে বসেন, তখন তিনি পাঠক-শ্রোতা-দর্শকের কথা মাথায় রেখে তা লেখেন, তখন কিন্তু তাঁর মাথায় উদ্দেশ্যমূলক কোনো বিশেষ রাজনীতি, সরকার কিংবা কোনো বিশেষ শক্তির কথা ভাবনায় থাকার কথা নয়। তবে, পেশাগত নৈতিক, আদর্শিক ও আইনি প্রেক্ষাপট তাঁর মাথায় থাকে, থাকতে হয়।
এই দিনটি পালনের মাধ্যমে দেশে দেশে সরকার এবং প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। পেশাজীবিত্ব ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশিশক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কারণে গণমাধ্যমের একধরনের উন্নয়ন ও রূপান্তর ঘটছে। কম-বেশি সব মাধ্যমেই প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে মানুষের জীবনে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে। ইন্টারনেট ইদানীং প্রায় সব বয়সের মানুষের পেশায় ও জীবনের মান উন্নয়নে গভীর ভূমিকা রাখছে এবং তাঁদের জীবনাচরণ যাচ্ছে পাল্টে। ইন্টারনেট মানুষকে অনেক বেশি প্রকাশমুখী করে তুলেছে; বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে যে কেউ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। ইতিপূর্বে মানুষ এত বেশি মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ পেত না, কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপকতার ফলে তারা যেকোনো বিষয়ে একই সঙ্গে কিংবা পৃথকভাবে পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা বা মতামত দেওয়া অথবা শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক বিষয় দৃষ্টিগোচর করতে পারছে, এমন কিছু নেই যে আজ অপ্রকাশ্য থাকছে।
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অগ্রসরতায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। জনগণের আইনগত নিরাপত্তা ও সুবিধা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো দেশে প্রযুক্তিবান্ধব আইন এবং সেসব আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। অথচ আমরা দেখছি, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর বেশ কয়েকটি ধারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার ফলে এর অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে যে কেউকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরালে প্রেরণ করা হচ্ছে, অনেকেই কোনো অন্যায় না করেও শুধু অভিযোগের কারণে বিচারহীন শাস্তি ভোগ করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি মাসে এই আইনে ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ১১ মাসের হিসাবে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারি ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১-এ প্রতি মাসে সংখ্যা ছিল ১৮। জানুয়ারি ২০২০, ফেব্রুয়ারি ২০২২ অন্তত ৮৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। [সূত্র: সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ]। এই সব অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং শিক্ষার্থী রয়েছেন উল্লেখযোগ্য হারে। আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম সংস্থাগুলোর স্কোরে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্ত সংবাদপত্রের অবস্থান। দেখা যাচ্ছে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল, জনগণ তার সুফল না পেয়ে বরং নির্যাতিত হচ্ছে, সাংবাদিকেরা এর মধ্যে অন্যতম। এই আইনকে জনবান্ধব করার লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রশ্নবিদ্ধ ধারাগুলো পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আইনের পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম, সম্প্রচার, সাংবাদিকতাসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, যার মধ্যে কতিপয় আবার নতুন করে প্রণয়নের পথে রয়েছে, এগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্টজন ও প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস সব গণমাধ্যমের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক আচার-আচরণের প্রত্যাশা করে। সাধারণত দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি সংস্থার বিপক্ষে দাঁড়ায় এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে থাকে। সে দিক থেকে সরকারি দল কিছুটা বেকায়দায় পড়ে, অপরপক্ষে বিরোধী মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তুলনামূলকভাবে গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সরকারি কিংবা তাদের সমর্থক দলগুলোর অনেক হিসাব করে চলতে হয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজটি সহজ নয়। এটাও ঠিক যে জনবান্ধব আইন এবং আইনের প্রয়োগ ছাড়াও তাদের কাজকর্ম ও আচার-আচরণ জনগণ বিশেষভাবে নজর রাখে। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যেমন সমুন্নত রাখতে হবে, একইভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রাথমিক শর্ত। এই আপ্তবাক্য পেশাগত চর্চাকে গতিশীল করবে। আমরা চাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশ অব্যাহত থাকবে। দায়িত্বশীল পেশাগত আচার-আচরণ এবং সমাজের কল্যাণে অঙ্গীকার যেকোনো গণমাধ্যমের জন্য পালনীয়। মানুষের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীন পথচলার পরিবেশ নিশ্চিত হবে—এটাই কাম্য।
মো. গোলাম রহমান, সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে