ভোক্তা ঠকছে সব দিকে, প্রতিকারে উদ্যোগ নেই

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০০

কয়েক দিন আগেও বাজারে এক হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকায়। অথচ লেবুর সেই হালি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। রোজায় চাহিদা কিছু বেড়েছে। এ ছাড়া এমন কিছুই ঘটেনি যে কয়েক দিনের মধ্যে দাম তিন-চার গুণ বেড়ে যাবে।

তবুও মানুষ কিনছে, নিরুপায় তারা। কিনছে আর ঠকছে। বাজারে গিয়ে মানুষ যে শুধু দামে ঠকছে, তা-ও নয়। পণ্যের মানে ঠকছে, ঠকছে ওজনেও। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। দেখার কথা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের; কিন্তু তারাও বলছে, পেরে উঠছে না; কারণ, তাদের লোকবল নেই। 
এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ ১৫ মার্চ পালিত হবে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। দেশে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি।’

ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরকার ২০০৯ সালে পাস করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার আইন। এরপর গঠন করা হয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হয়ে আসছে; যার প্রমাণ মেলে ভোক্তা অধিদপ্তরে প্রতিবছর হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়া দেখে। যদিও এসব অভিযোগের অর্ধেকের বেশি নিষ্পত্তি হয় না।

ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইদানীং অভিযোগ বেশি আসছে ই-কমার্সে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ১১ হাজার ২৭৮টি, ই-অরেঞ্জের ৬ হাজার ১৭টি, আলেশা মার্টের ২ হাজার ৫৫৬টি, কিউকমের ১ হাজার ২৯৫টি ও দারাজের ১ হাজার ২৮৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৪ হাজার ৮৪২টি অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু ১৯ হাজার ৪০৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তিই হয়নি।

ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য ও সেবায় প্রতারণার সংখ্যাও কম নয়। অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২৮৯টি অভিযোগ এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিযোগ এসেছে পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করায়, ৩৬ হাজার ৮৭৯টি। এ ছাড়া মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় ৩৫ হাজার ৩৪৮টি, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়ায় ২১ হাজার ৪৭০টি এবং প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা না দেওয়ায় ১৩ হাজার ৯৯৭টি অভিযোগ আসে। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোক্তা অধিকারে যে কেউ সরাসরি অভিযোগ করতে পারে। তবে ২০০৯ সালে আইন করার সময় ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা সুবিধা চালু হয়নি। এ কারণে এ বিষয়গুলোতে ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনটি সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এটিকে যুগোপযোগী করতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চের সভাপতি ইবনুল সাঈদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় আইনকানুন যা আছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ নেই। ১২০-১৫০ টাকা কেজির জিলাপি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিটি পণ্যই অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের ৩০ টাকার পণ্য ভোক্তার কাছে এসে ৯০ টাকা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভোক্তা প্রতিনিয়ত ঠকছে। 

পণ্যের মান প্রণয়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি ঠেকাতে ১ হাজার ৫৫৩টি অভিযান চালায়। এ সময়ে ১ হাজার ৫৪৩টি মামলা এবং ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৩টি কারখানা সিলগালা করা হয় এবং পরিমাপে কম দেওয়ায় পেট্রলপাম্পের ৩৯২টি ইউনিট সিলগালা করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ১৭টি জেলায় অধিদপ্তরের কোনো জনবল নেই। লোকবল বাড়ানোর জন্য দুই বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। লজিস্টিক সাপোর্টও খুব দুর্বল। তবুও অধিদপ্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে সাধ্যমতো।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত