গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন: আ.লীগ-জাপা এক সুতোয়, ভোটে তাই আগ্রহ কম

মারুফ কিবরিয়া ও আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা থেকে 
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮: ৩১

অনেক আলোচিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন হয়ে গেছে গত বুধবার। বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। তবে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর তুলনায় যা অনেক কম। নির্বাচন কমিশন বলছে, শীতের কারণে মানুষ ভোট দিতে গেছে কম। সেটা কিছুটা ঠিক হতে পারে। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ মহল ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, এই ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহই কম ছিল। তাঁদের মতে, এখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এক সুতোয় গাঁথা। ফলে এই দুই দলের মধ্যে কে জিতল আর কে হারল, সেটা তাদের কাছে বড় কোনো বিষয় নয়। 

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় পার্টির গোলাম শহীদ রঞ্জু। রিপনের কাছে ৩৩ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন তিনি। তবে জাপার এই প্রার্থীর দাবি, এই ফলাফলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। সাঘাটা-ফুলছড়ির মানুষ যেভাবে ভোট দেওয়ার কথা ছিল, তা পারেননি।

আওয়ামী লীগ-জাপা ছাড়া আরও তিন প্রার্থী ভোটে লড়াই করেছেন। তবে তাঁদের তিনজনই হারিয়েছেন জামানত। ভোটের ফলাফল নিয়ে এখন মূলত আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগ ও জাপার প্রাপ্ত ভোটের বিষয়ে।

সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধার এই আসনটিতে বহু বছর ধরে জাপার আধিপত্য। সাঘাটা ও ফুলছড়ি দুই উপজেলা বরাবরই জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে চারবার এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০০০ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে সর্বশেষ তিনবারের নির্বাচনে এমপি হন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত একাধারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে বেশ সক্রিয় রেখে যান তিনি। এমনকি জাপার প্রভাব থাকলেও দীর্ঘদিন দলটির নেতারা ফজলে রাব্বী মিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন বলেও একধরনের গুঞ্জন রয়েছে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের মানুষ বলছে, এখানে আওয়ামী লীগ-জাপা এক সুতোয় গাঁথা। তাই সদ্য অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দুই দলের হার-জিত নিয়ে বেশি মাথা ঘামাননি ভোটাররা। ভোটের ফল নিশ্চিত জেনে অনেকে ভোটকেন্দ্রেই যাননি। এ জন্য ভোটকেন্দ্রে ভোটার খরায় ভুগতে হয়েছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের। 
সাধারণ মানুষ তথা ভোটারদের ভাবনা ছাড়াও বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটের ফল ও সেখানকার রাজনীতির হালচাল নিয়ে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

সচেতন নাগরিক কমিটির গাইবান্ধা জেলার আহ্বায়ক জহুরুল কাইয়ুমের মতে, এই আসন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকার কারণেই রাজনীতির পালাবদল হয়নি। তা ছাড়া, জাতীয় পার্টির একসময় প্রভাব থাকলেও এখন দলটির ভোটার ও জনপ্রিয়তা কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘ভোট সুন্দর হয়েছে। আওয়ামী লীগ জেতার কথা আগেই ধারণা করেছিলাম। জাতীয় পার্টিও ভালো ভোট পেয়েছে। তবে দলটির অবস্থান এখন আর সেখানে নেই।’

ফুলছড়ি উপজেলার কলেজশিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এ এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। অন্য দল থেকে এমপি হলে সাধারণ জনগণ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন বলে ধারণা আমার। তাই সাধারণ জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছেন।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলার সভাপতি মিহির ঘোষের মতে, ‘এখানে বলা হয়েছে শীতের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। আসলে ব্যাপারটা ছিল অন্য। এই নির্বাচন আগে একবার বন্ধ হওয়ায় এবার আগ্রহ কমে গেছে। ফলে ভোটার পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া, ইভিএমেও মানুষের আস্থা নেই।’

উপনির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন জেলা বিএনপির মানবাধিকার-বিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ছানা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগেরই অংশ। সাধারণ জনগণ মনে করে, এই দুই দলের যেকোনো কাউকে ভোট দিলে এক পক্ষেই ভোট যাবে। এ ছাড়া সরকারদলীয় প্রতীকের প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের আশপাশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। ফলে ভয়ে অনেক ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। এ সরকারের পাতানো নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।’

ভোটে পরাজয়ের পর অনেকটাই নীরব জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দলের কালোটাকা আর পেশিশক্তির কাছে আমি পরাজিত হয়েছি। মানুষ ভয়ে ভোট দিতে পারেননি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত