সীতাকুণ্ডে ডেঙ্গুর প্রকোপ

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ৩৩

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের ১৭ দিনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ৪৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ২০ জনের বেশি রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে ২৯ জন রোগী। তবে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্যও রয়েছে। গত ১৭ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের এক-তৃতীয়াংশ রোগী সীতাকুণ্ডের কুমিরা, শীতলপুর, বগুলা বাজার, বাংলা বাজার ও নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন বিআইটিআইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭ জন ও পুরুষ ওয়ার্ডে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভর্তি থাকা সীতাকুণ্ডের

ফৌজদারহাট এলাকার এক পুরুষ রোগী ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হলেও কোনো শয্যায় মশারি টানানো ছিল না। 
বিআইটিআইডি হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সালমা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মশারি সব সময় টানানো থাকে।

তবে দুপুরে খাবার সময় হওয়ায় এবং অত্যন্ত গরমের কারণে রোগীরা মশারি খুলে রেখেছে। খাবার শেষে রোগীদের মশারি পুনরায় টানানো হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার (৩২)।

আলাপকালে তিনি জানান, ১০-১২ দিন আগে তাঁর পুরো শরীরে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। পরদিন থেকে তাঁর গায়ে জ্বরের পাশাপাশি শুরু হয় বমি। শুরুতে তিনি নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়লে গত শনিবার তিনি বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, শুরুতে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি। এর ঘণ্টা দুয়েক পর আসে তীব্র জ্বর। তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে সপ্তাহখানেক আগে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে টানা এক সপ্তাহের চিকিৎসায় শনিবার দুপুরের পর তিনি কিছুটা সুস্থতা বোধ করছেন।চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু রোগীর বৃদ্ধি ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আগেই সতর্ক হতে হবে; বিশেষ করে অনিয়মিত বৃষ্টিতে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখা, ডাবের খোসা কিংবা পরিত্যক্ত টায়ারে জমা পানি ফেলে দেওয়া এবং পরিত্যক্ত জায়গায় তিন দিনের বেশি পানি যাতে না জমে থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মৌসুমের এ সময়ে ডেঙ্গু রোগী কিছুটা বাড়ে। আগস্টের পুরো মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত ১৭ দিনে হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪৬ রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ জন রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। তবে এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে একজন ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো রোগীকে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হয়নি।

মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ডেঙ্গু জ্বর শুরুর প্রথম চার দিন জ্বর ও ব্যথা থাকে। এরপর জ্বর সেরে গেলেও পরবর্তী তিন দিন খুবই সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, ওই তিন দিনে রোগীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত (প্লাজমা ছিদ্র) বের হতে পারে। এ সময় রোগীকে ৭ দিন সাবধানে থাকতে হবে। অষ্টম দিন থেকে রোগী সেরে ওঠে।

তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধ করতে হবে। সে জন্য প্রত্যেক বাসিন্দার আঙিনা ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন তিন দিনের বেশি পানি না জমে। কোথাও মশার লার্ভা দেখা গেলে তা ধ্বংস করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত