মোস্তাফিজুরের দারিদ্র্য জয়

রাব্বিউল হাসান, কালাই (জয়পুরহাট)
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৯
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ৫৪

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার খামারি মোস্তাফিজুর রহমান। কালাই উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নুনুজ বাজারে গড়ে তুলেছেন বৃহৎ গোখামার। নুনুজ বাজারের পাশের শ্রীপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক ও মজিদা বিবির তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। এখন তিনি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের ফলে শূন্য থেকে আজ সফল তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় তাঁর জীবনের এই সফলতার পেছনের রহস্য নিয়ে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর একনিষ্ঠ পরিশ্রম তাঁর মূল নিয়ামক। বাল্যকাল থেকে একই গ্রামের এক মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার পথে দারিদ্র্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃত সংগ্রাম শুরু সেখান থেকেই।

ছাত্রজীবন থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা মূলধন নিয়ে বিভিন্ন কৃষিপণ্য কেনাবেচা শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পুঁজি। এর মধ্যেই ১৯৯৯ সালে দাখিল ও পরবর্তী সময়ে আলিম পাস করেন। ইতিমধ্যে দুই পক্ষের বাধা কাটিয়ে পারিবারিক সম্মতিতে ২০০১ সালে তাঁর পছন্দের মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধেন।

শুরু হয় জীবনসংগ্রামের আরেক অধ্যায়। নিজেকে সম্পৃক্ত করেন কঠোর পরিশ্রমে। বেশি উপার্জনের জন্য হিমাগারে রাখা আলুর বস্তা পিঠে বহন করে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতেন।

এরপর ২০০৭ সালে নিজের এবং বন্ধুর সহায়তায় নুনুজ বাজারে ছোট পরিসরে সার ও কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হতে থাকে।

২০১৯ সালে দুটি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি কেনার মাধ্যমে তাঁর লালিত স্বপ্ন মেসার্স মায়া অ্যান্ড মিশু ডেইরি অ্যাগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করার ধাপ শুরু হয়। বর্তমানে তাঁর খামারে ফ্রিজিয়ান, সিন্ধি, জার্সি ও সংকর জাতের ৩৬টি গরু আছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০-৩৫ লাখ টাকা।

ইতিমধ্যেই ডজনখানেক গরু বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ১১টি গাভি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ লিটার দুধ বিক্রি করেন। শুধু নিজেই লাভবান হননি, তাঁর প্রতিষ্ঠানে দুজন কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গল্পটা এখানেই শেষ নয়। গরুর দুধের ক্রিম থেকে ঘি তৈরির কাজ করেন। প্রতি কেজি ঘি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে তাঁর এই খাঁটি ঘি মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে। গোখামারের পাশাপাশি প্রায় ছয় বিঘা জমিতে জারা, অজানা হাইব্রিড, পাং চুং জাতের লাগানো ঘাস নিজ খামারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কম পুঁজি হলেও অধিক পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে জয় করে আজ এই পর্যায়ে এসেছি।’ তাঁর মতে, দৃঢ় মনোবল আর সে অনুযায়ী পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি।

কালাই উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন মো. নুরুজ্জামান বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান একজন সফল খামারি। তিনি অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে এত দূর এসেছেন। ইতিমধ্যে তাঁকে একটি ক্রিম মেশিন দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মিত তাঁর খামারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত