আলু রাখতে হিমাগারে চাপ

খালিদ হাসান, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২২, ০৬: ৪৩
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৪৬

আলুর ভরা মৌসুমে দাম না পেয়ে অনেকটাই বিপাকে বগুড়ার শিবগঞ্জের আলুচাষিরা। বৃষ্টির কারণে আশানুরূপ ফলন না পেয়ে চিন্তার ছাপ তাঁদের মুখে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ চাষিই গত বছরের লোকসান পোষাতে ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় হিমাগারে রাখছেন আলু। উপজেলার হিমাগারগুলোর সামনে দেখা গেছে, আলুর বস্তাভর্তি ট্রাক, পিকআপ, ভটভটি ও অটো ভ্যানের দীর্ঘ লাইন।

এদিকে হিমাগার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের তুলনায় আলু হিমাগারে রাখতে কৃষকের আগ্রহ বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। আলু নেওয়া শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৯০ শতাংশ আলু গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কয়েক দিন বন্ধ ছিল হিমাগারে আলু নেওয়া কার্যক্রম। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই হিমাগারে আলু নেওয়া পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা আসবে।

উপজেলার ১২টি হিমাগারে গত মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয়েছে আলু নেওয়া। এসব হিমাগারের মোট ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪০ টন।

গতকাল রোববার উপজেলার মোকামতলা, দেউলী, কিচক, শিবগঞ্জ ও পিরব এলাকার বেশ কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, হিমাগারগুলোতে আলু রাখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবহনে করে আলু নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে কৃষকদের।

এ বিয়ষে উপজেলার কিচক এলাকার আরাফাকুর কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী জানান, তাঁর কোল্ড স্টোরে গত বছরের প্রায় ৫০০ বস্তা আলু ছিল। দাম কম হওয়ায় মালিকেরা নিতে না আসায় সেগুলো কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নতুন সিজনে আলু নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ আলু ঢুকেছে।

মোকামতলা আরঅ্যান্ডআর পটেটো কোল্ড স্টোরের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বস্তা আলু ঢুকছে। হিমাগারে আলু ঢুকতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে অতিরিক্ত শ্রমিক আনতে হয়েছে। চাপ সামলাতে না পেরে মাঝেমধ্যে দু-এক দিন করে পণ্য নেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে। এই স্টোরে ২ লাখ ৭০ হাজার বস্তা আলু রাখা যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ থেকে আলু নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ লাখের বেশি বস্তা হিমাগারে রাখা হয়েছে। চার-পাঁচ দিন পরেই আলু রাখা বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

একই রকম অবস্থা দেখা গেছে, দেউলী ইউনিয়নের এ এইচ জেড কোল্ড স্টোরেজেও। হিমাগারের ভেতরে ঢুকতে না পেরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে আলুভর্তি ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান ও ভটভটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সেখানেও।

জানতে চাইলে রংপুর থেকে আসা সাইফুল নামের এক ট্রাকচালক বলেন, ‘২ ঘণ্টা ধরে হিমাগারে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছি। ভেতরে প্রচণ্ড চাপ থাকায় ঢুকতে পারছি না।’

ওই কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান এ্যাপোলো জানান, বর্তমানে আলু রাখার খুব চাপ। ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই হিমাগারে ইতিমধ্যেই ৯৫ শতাংশ আলু রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলার কাশিপুর এলাকার আলুচাষি শামসুল আলম নাজিমউদ্দীন বলেন, ‘গত বছর আলু আবাদ করে লোকসান হয়েছে। এ বছর ফসল তোলার ১৫ দিন আগে বৃষ্টিতে ফলন কম হয়েছে। তাই লাভের আশায় হিমাগারে আলু রাখতে আসছি।’

কালাই উপজেলার নান্দাইল দীঘি এলাকার আলুচাষি আব্দুল্লাহ জানান, সবাই বলছে এবার আলু হিমাগারে রাখলে দাম পাওয়া যাবে। তাই হিমাগারে আলু রাখতে এসেছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, বৃষ্টির কারণে এবার কিছু আলুচাষি আশানুরূপ ফলন পাননি। উপজেলায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মোট ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত