প্রধান শিক্ষক নেই ৬০৮ স্কুলে

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৫৭
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ৫০

কুমিল্লা নগরীর গুলবাগিচা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রিয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার ১৭ উপজেলার ৬০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রতিষ্ঠান প্রধান ছাড়াই। তা ছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৭৫৮টি। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলার ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, লাকসাম উপজেলায় প্রধান শিক্ষক নেই ১৪ প্রতিষ্ঠানে, দেবিদ্বারে ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে, মুরাদনগরে ৪৩টি, দাউদকান্দিতে ৮৫টি, চৌদ্দগ্রামে ৩৮টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১৫টি, বরুড়া উপজেলায় ১৪টি, বুড়িচং উপজেলায় ৪৬টি, চান্দিনা উপজেলায় ৫১টি, হোমনা উপজেলায় ৪৯টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৪৫টি, মেঘনা উপজেলায় ৪০টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ৫৩টি, তিতাস উপজেলায় ২৫টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১২টি ও লালমাই উপজেলার ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। তা ছাড়া ১৭ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৫৮ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য।

নগরীর গুলবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই বিদ্যালয়টি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এর সুনাম অক্ষুন্ন রাখা হোক।’

গুলবাগিচা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার লিপি বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাস ধরে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ শূন্য। সিনিয়র শিক্ষিকা নাজমুন নাহার ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ছাড়া বিদ্যালয়য়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। আমরা সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছি এর সুনাম ধরে রাখতে। আশা করি সহসাই এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এর কার্যক্রম আরও গতিশীল করে তুলবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।’

নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়ার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আয়েশা আক্তার জানান, এক বছর ধরে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত তাঁর ক্লাসগুলোও করাতে হয়। একসঙ্গে দুই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকটা চাপ সামলাতে হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে তিনি ভারমুক্ত হবেন।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ফয়জুন্নেছা সীমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রধান ছাড়া প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রমসহ শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বদলি বন্ধ রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাতে কলমে বদলির পরিবর্তে অনলাইনে আবেদনে বদলির পদ্ধতি চালু করেছে। বদলি ও নতুন নিয়োগ হলে শূন্য পদগুলো পূরণ হবে।

দাউদকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরুল ইসলাম বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ এ উপজেলায়। এ ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব ও ৩১ জন সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। পদোন্নতি ও নতুন নিয়োগে এ পদগুলো পূরণ করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমাদের নতুন নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই নতুন নিয়োগ ও বদলি শুরু হবে। অনেকের পদোন্নতি হবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্যপদ পূরণ হবে। আশা করি অচিরেই এই সমস্যাগুলো সমাধান হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত