বিবেক কাটজু, ভারতের সাবেক কূটনীতিক
ইরানের কর্তৃপক্ষ এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকায় ১৯ মে রোববার ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সেখানে আরাস নদীর ওপর ইরান ও আজারবাইজানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁধের উদ্বোধন শেষে রাইসি তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ইরানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। খামেনির এই দ্রুততার কারণ হচ্ছে ইরানের জনগণকে আশ্বস্ত করা এবং বিশ্বকে এই ইঙ্গিত দেওয়া যে ইরানের যেকোনো ধাক্কা সামলানোর এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
খামেনির এই পদক্ষেপ অবশ্য দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কিত উদ্ভূত প্রশ্নগুলোকে ধামাচাপা দিতে পারবে না। এই ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে, এটাই প্রত্যাশিত। তবে এ ঘটনার সঙ্গে ইরানের শত্রুরা জড়িত কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম দেশটির সরকারি সূত্রগুলোকে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। এখন পর্যন্ত ইরানের কর্তৃপক্ষও কোনো বিদেশি শক্তির দিকে আঙুল তোলেনি। এর মানে এই নয় যে এমনটা হবে না। এমনকি ইরানের ঘরোয়া বিবাদের জন্য হয়তো রাইসির মৃত্যুকে কাজে লাগানো হতে পারে। যা-ই হোক, পরবর্তী কয়েক মাস এ ঘটনা এই অঞ্চল ও এর বাইরেও পরিস্থিতিকে যথেষ্ট জটিল করে তুলবে, যা কিনা গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত তৎপরতার কারণে ইতিমধ্যে জটিল আকার নিয়েছে।
ইরানের বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কত, তা বোঝা দরকার। ইরানে সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে ঠিকই, তবে তারা তা করে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে। যা-ই হোক, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত—সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার যেকোনো বিষয়ে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মাত্র দুজন আলেম ছিলেন। প্রথমজন ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি, যিনি বিলায়ত-ই-ফকিহ (আইনশাস্ত্রের শাসন) মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৭৯ সালে রেজা শাহ পাহলভিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ১৯৮৯ সালের জুনে মৃত্যুর আগপর্যন্ত খোমেনি ছিলেন ইরানের অবিসংবাদিত নেতা।
খোমেনির স্থলাভিষিক্ত হলেন আলী খামেনি, যিনি তখন থেকে ইরানের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। খোমেনির মতো বড় বড় কাজ করতে খামেনিও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন; তবে তা করতে সময় লাগছে। তবে খোমেনির ওপর যে ভার ছিল, তা কখনো খামেনির ছিল না বা নেই। তার পরও তিনি কখনোই খোমেনির উচ্চতায় যেতে পারেননি। তিনি সব সময় চলতি হাওয়ার পন্থী থেকেছেন। যখন দরকার, তখন বাস্তববাদী ধর্মগুরু, আবার প্রয়োজন হলে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে দূরত্ব রাখা—এর সবটাই করা নির্বাচনে জেতার জন্য। তাঁর এই প্রয়াসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট খাতামি (১৯৯৭-২০০৫) এবং রুহানি (২০১৩-২১) পড়বেন।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক সমঝোতা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তববাদীদের মারাত্মক আঘাত করেছিলেন। ফলস্বরূপ কট্টরপন্থীরা ধীরে ধীরে ইরানের বাস্তববাদীদের ওপর প্রভাব ফেলেন। কট্টরপন্থীরা কেবল ওই চুক্তির বিরোধিতাই করেননি; বরং জেন্ডার ইস্যুসহ বিপ্লবের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার পক্ষেও ছিলেন। তাঁরা এই অঞ্চলে একটি দৃঢ় নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁরা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার নিরঙ্কুশ আশীর্বাদে, কাউন্সিলগুলোতে পদ পূরণ করতে শুরু করেছিলেন, যা আইনসভা এবং নির্বাহী অফিসগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের যাচাই করে থাকে।
২০২১ সালে কট্টরপন্থীরা রাইসিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করেন। তিনি বিচার বিভাগীয় কার্যালয়গুলো দখলে নেন এবং মৃত্যুদণ্ডসহ অবাধে কঠোর সাজার পক্ষে ছিলেন। তিনি সহজেই নির্বাচনে জেতেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কট্টরপন্থীদের অ্যাজেন্ডা অনুসরণ করেছেন। তাঁর নির্বাচনের আগে এবং পরেও কেউ কেউ ভেবেছিলেন রাইসি একসময় খামেনির স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। খামেনির বয়স এখন ৮৫ বছর। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এমনটা না-ও হতে পারে। বংশানুক্রমিক ক্ষমতার অভিযোগ সত্ত্বেও বাস্তবে খামেনির ছেলে মুজতবা সর্বোচ্চ নেতার পদের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, রাইসির মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। খামেনি ও গার্ডিয়ান কাউন্সিল এই নির্বাচনে একজন বাস্তববাদীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রেভল্যুশনারি গার্ড হলো সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বাহিনী এবং তারা বিপ্লবের আদর্শ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বাহিনীও কট্টরপন্থী কাউকে নির্বাচনের পক্ষে থাকবে। খামেনির আশীর্বাদে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কট্টরপন্থী শক্তিগুলো কাকে বেছে নেবে, তা এই মুহূর্তে বোঝা কঠিন। অতীতে বেশির ভাগ সময় এমন ঘটনা ঘটেছে—উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে অপ্রত্যাশিত কেউ জিতে এসেছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম না-ও হতে পারে।
ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে রাশিয়া-চীনের দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে; বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে। সেই প্রক্রিয়া রাইসির মৃত্যুতে বাধাগ্রস্ত হবে না। সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাস কমপ্লেক্সে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যা-ই হোক, উভয় দেশই সতর্কতা অবলম্বন করেছে যে পরিস্থিতি যাতে এমন না হয়, যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব না। অদূর ভবিষ্যতের জন্য, তাদের তীব্র শত্রুতা সত্ত্বেও এবং হামাস ও অন্যান্য ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীর প্রতি ইরানের পূর্ণ সমর্থন থাকার পরও, উভয়ই খেয়াল রাখবে যে তাদের পদক্ষেপের কারণে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। বাইডেন প্রশাসন এবং চীনারাও উভয় পক্ষকে সংযত করবে।
ইরানে রাইসি অধ্যায়ের শেষ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। দক্ষিণ এশিয়াসহ ইরানের দেশি ও বৈদেশিক নীতিতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। সুতরাং, চাবাহার বন্দর নিয়ে ইরানের নীতিতে ভারত বিপন্ন হবে না। যা-ই হোক, রাইসি সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করে তাঁর দক্ষিণ এশীয় নীতির ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্টও সেই পথ অনুসরণ করবেন। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে সমঝোতা সত্ত্বেও ইরান ও আরব দেশগুলোর মধ্যে চিরাচরিত অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে।
সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়টি শূন্য হলেই ইরানে আসল সংকট দেখা দেবে।
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
ইরানের কর্তৃপক্ষ এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকায় ১৯ মে রোববার ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সেখানে আরাস নদীর ওপর ইরান ও আজারবাইজানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁধের উদ্বোধন শেষে রাইসি তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ইরানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। খামেনির এই দ্রুততার কারণ হচ্ছে ইরানের জনগণকে আশ্বস্ত করা এবং বিশ্বকে এই ইঙ্গিত দেওয়া যে ইরানের যেকোনো ধাক্কা সামলানোর এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
খামেনির এই পদক্ষেপ অবশ্য দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কিত উদ্ভূত প্রশ্নগুলোকে ধামাচাপা দিতে পারবে না। এই ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে, এটাই প্রত্যাশিত। তবে এ ঘটনার সঙ্গে ইরানের শত্রুরা জড়িত কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম দেশটির সরকারি সূত্রগুলোকে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। এখন পর্যন্ত ইরানের কর্তৃপক্ষও কোনো বিদেশি শক্তির দিকে আঙুল তোলেনি। এর মানে এই নয় যে এমনটা হবে না। এমনকি ইরানের ঘরোয়া বিবাদের জন্য হয়তো রাইসির মৃত্যুকে কাজে লাগানো হতে পারে। যা-ই হোক, পরবর্তী কয়েক মাস এ ঘটনা এই অঞ্চল ও এর বাইরেও পরিস্থিতিকে যথেষ্ট জটিল করে তুলবে, যা কিনা গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত তৎপরতার কারণে ইতিমধ্যে জটিল আকার নিয়েছে।
ইরানের বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কত, তা বোঝা দরকার। ইরানে সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে ঠিকই, তবে তারা তা করে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে। যা-ই হোক, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত—সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার যেকোনো বিষয়ে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মাত্র দুজন আলেম ছিলেন। প্রথমজন ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি, যিনি বিলায়ত-ই-ফকিহ (আইনশাস্ত্রের শাসন) মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৭৯ সালে রেজা শাহ পাহলভিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ১৯৮৯ সালের জুনে মৃত্যুর আগপর্যন্ত খোমেনি ছিলেন ইরানের অবিসংবাদিত নেতা।
খোমেনির স্থলাভিষিক্ত হলেন আলী খামেনি, যিনি তখন থেকে ইরানের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। খোমেনির মতো বড় বড় কাজ করতে খামেনিও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন; তবে তা করতে সময় লাগছে। তবে খোমেনির ওপর যে ভার ছিল, তা কখনো খামেনির ছিল না বা নেই। তার পরও তিনি কখনোই খোমেনির উচ্চতায় যেতে পারেননি। তিনি সব সময় চলতি হাওয়ার পন্থী থেকেছেন। যখন দরকার, তখন বাস্তববাদী ধর্মগুরু, আবার প্রয়োজন হলে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে দূরত্ব রাখা—এর সবটাই করা নির্বাচনে জেতার জন্য। তাঁর এই প্রয়াসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট খাতামি (১৯৯৭-২০০৫) এবং রুহানি (২০১৩-২১) পড়বেন।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক সমঝোতা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তববাদীদের মারাত্মক আঘাত করেছিলেন। ফলস্বরূপ কট্টরপন্থীরা ধীরে ধীরে ইরানের বাস্তববাদীদের ওপর প্রভাব ফেলেন। কট্টরপন্থীরা কেবল ওই চুক্তির বিরোধিতাই করেননি; বরং জেন্ডার ইস্যুসহ বিপ্লবের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার পক্ষেও ছিলেন। তাঁরা এই অঞ্চলে একটি দৃঢ় নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁরা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার নিরঙ্কুশ আশীর্বাদে, কাউন্সিলগুলোতে পদ পূরণ করতে শুরু করেছিলেন, যা আইনসভা এবং নির্বাহী অফিসগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের যাচাই করে থাকে।
২০২১ সালে কট্টরপন্থীরা রাইসিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করেন। তিনি বিচার বিভাগীয় কার্যালয়গুলো দখলে নেন এবং মৃত্যুদণ্ডসহ অবাধে কঠোর সাজার পক্ষে ছিলেন। তিনি সহজেই নির্বাচনে জেতেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কট্টরপন্থীদের অ্যাজেন্ডা অনুসরণ করেছেন। তাঁর নির্বাচনের আগে এবং পরেও কেউ কেউ ভেবেছিলেন রাইসি একসময় খামেনির স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। খামেনির বয়স এখন ৮৫ বছর। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এমনটা না-ও হতে পারে। বংশানুক্রমিক ক্ষমতার অভিযোগ সত্ত্বেও বাস্তবে খামেনির ছেলে মুজতবা সর্বোচ্চ নেতার পদের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, রাইসির মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। খামেনি ও গার্ডিয়ান কাউন্সিল এই নির্বাচনে একজন বাস্তববাদীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রেভল্যুশনারি গার্ড হলো সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বাহিনী এবং তারা বিপ্লবের আদর্শ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বাহিনীও কট্টরপন্থী কাউকে নির্বাচনের পক্ষে থাকবে। খামেনির আশীর্বাদে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কট্টরপন্থী শক্তিগুলো কাকে বেছে নেবে, তা এই মুহূর্তে বোঝা কঠিন। অতীতে বেশির ভাগ সময় এমন ঘটনা ঘটেছে—উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে অপ্রত্যাশিত কেউ জিতে এসেছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম না-ও হতে পারে।
ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে রাশিয়া-চীনের দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে; বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে। সেই প্রক্রিয়া রাইসির মৃত্যুতে বাধাগ্রস্ত হবে না। সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাস কমপ্লেক্সে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যা-ই হোক, উভয় দেশই সতর্কতা অবলম্বন করেছে যে পরিস্থিতি যাতে এমন না হয়, যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব না। অদূর ভবিষ্যতের জন্য, তাদের তীব্র শত্রুতা সত্ত্বেও এবং হামাস ও অন্যান্য ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীর প্রতি ইরানের পূর্ণ সমর্থন থাকার পরও, উভয়ই খেয়াল রাখবে যে তাদের পদক্ষেপের কারণে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। বাইডেন প্রশাসন এবং চীনারাও উভয় পক্ষকে সংযত করবে।
ইরানে রাইসি অধ্যায়ের শেষ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। দক্ষিণ এশিয়াসহ ইরানের দেশি ও বৈদেশিক নীতিতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। সুতরাং, চাবাহার বন্দর নিয়ে ইরানের নীতিতে ভারত বিপন্ন হবে না। যা-ই হোক, রাইসি সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করে তাঁর দক্ষিণ এশীয় নীতির ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্টও সেই পথ অনুসরণ করবেন। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে সমঝোতা সত্ত্বেও ইরান ও আরব দেশগুলোর মধ্যে চিরাচরিত অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে।
সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়টি শূন্য হলেই ইরানে আসল সংকট দেখা দেবে।
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে