যেভাবে মানুষের ‘বিপদের বন্ধু ’ পীরগঞ্জের ইসলাম

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২২, ০৬: ৩৭
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৫: ২১

যেখানে অনেকে লাশ দেখে ভয় পেয়ে কাছে যান না, সেখানে অনায়াসে লাশ বহনের কাজ করেন মোহাম্মদ ইসলাম। এ জন্য গ্রামের মানুষ তাঁকে ডাকেন ‘বিপদের বন্ধু’। ৩০ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

মোহাম্মদ ইসলামের (৫৫) বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার জগথা গ্রামে। পেশায় তিনি ডোম তথা লাশ বহনকারী ভ্যানচালক। কোনো দুর্ঘটনা, খুন বা আত্মহত্যার পর পঁচাগলা মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া, তোলা, মর্গে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর কাজ।

ইসলাম জানান, শুধু পীরগঞ্জ নয় পার্শ্ববর্তী রাণীশংকৈল, হরিপুর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অপঘাতে কারও মৃত্যু হলেই ডাক পড়ে তাঁর। নাম-পরিচয়হীন মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য থানা বা হাসপাতালে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সরকারি বেতন-ভাতা পান না। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অল্প কিছু পান।

ইসলাম বলেন, ‘রেলওয়ের জমিতে টিনে চালাঘরে পরিবার নিয়ে থাকি। এলাকায় অনেকেই তাকে ডাকেন ‘বিপদের বন্ধু’ বলে। অনেক বছর আগে আমার এক আত্মীয় মারা যান অপঘাতে। তাঁর মরদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। আমিই তখন ভ্যানে করে তাঁর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাই। ওই সময় থেকে শুরু। কোথাও কেউ আত্মহত্যা করলে, খুন হলে আমার ডাক আসে মরদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথম দিকে ভয় লাগত। কিন্তু এখন আর কিছু মনে হয় না।’

ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলেরে বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু মেয়েটার বিয়ে আটকে গেছে। পাত্রপক্ষ যখন আমার মেয়েকে দেখার জন্য আসে, তখন আমার পেশার পরিচয় পেয়ে আর আসতে চায় না। আমার প্রতিবেশীরা কেউ হোটেলে গেলে আমার পাশে বসে খাবার খেতে চায় না। ছেলেমেয়েরা আমাকে অনেকবার পেশা ছেড়ে দিতে বলেছেন। ছেড়েও দিয়েছিলাম। ৫-৬ বছর আগে শুরু করেছিলাম হোটেল ব্যবসা। কিন্তু আগের পেশার কথা জেনে ওই হোটেলে খেতে আসতে চায় না অনেকে। ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়ে আবারও মৃতদেহ বহনের পেশায় ফিরতে বাধ্য হই।’

পীরগঞ্জ থানা ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের প্রায় প্রতিটি থানায় ইসলামের মতো লোকেরাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এ কাজগুলো করেন। তাঁরা সরকারি কোনো টাকা পান না। তবে তাঁকে কিছু অনুদান দেওয়া হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত