স্বপ্না রেজা
ভারতের ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানির তিন দিনের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠানের খরচ এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা নিয়ে মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াকে বেশ সক্রিয় ও তৎপর হতে দেখা গেল। ঘুম হারাম করা এই তৎপরতা ভারতের চেয়ে যেন বাংলাদেশে একটু বেশি মনে হলো। ভারতের এই ব্যবসায়ী তাঁর ছেলের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠানে কী পরিমাণ টাকা খরচ করলেন, সেই টাকা দিয়ে কত মানুষের কত কী উপকার হতো, আর এত্তো এত্তো অতিথির আমন্ত্রণ জানানোর দরকারই বা ছিল কী, গোটা বলিউডকে তুলে এনে যেন শিল্পীদের আম্বানির পরিবারের চাকর বানিয়ে ছেড়েছে, শিল্পীরা কে কী পেলেন নেচেগেয়ে, আবার শিল্পীরাই বা কে কী দিলেন এমন নানান ধরনের সংবাদ পরিবেশন ও বিশ্লেষণে সব ধরনের মিডিয়া সরব হয়ে উঠল। শুধু তা-ই নয়, মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়েতে বিল গেটস ও মার্ক জাকারবার্গের আগমনও সমালোচনার ঝুলিতে জায়গা পেয়েছে। জায়গা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পীসহ অনেকেই। এতে সমালোচনাকারীদের চক্ষু স্থির, কী সাংঘাতিক বিষয়! এসব আলোচনার সূত্র ধরে নীতা আম্বানির একটা নেকলেস কোন কোন দেশের জিডিপি থেকে বেশি, সেটাও উঠে এসেছে।
একজন মুকেশ আম্বানির অনেক সম্পদ, ধনদৌলত, অর্থবিত্ত আছে। তিনি বিশ্বসেরা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যেটা বিশ্বের কমবেশি সবাই জানে। তার সম্পদ লুকিয়ে রাখা, গোপন করার কখনো কোনো প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবসায়ী বাবা মুকেশ আম্বানি সেসব থেকে তাঁর ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়েতে কিংবা অন্য কোনো কাজে খরচ করবেন, তাতে কার কী? কারও তো কোনো কিছু এসে যাওয়ার কথা নয় এ বিষয়ে, তাই না? বাবা তো তাঁর ছেলের বিয়েতেই খরচ করছেন। অন্যের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে কিংবা চুরি করে তো করছেন না। আবার বারো শ কোটি টাকা খরচ করবেন, নাকি বারো হাজার কোটি টাকা খরচ করবেন, কিংবা মাত্র বারো হাজার টাকা খরচ করে ছেলের বিয়ে দেবেন অথবা কোনো অর্থই ব্যয় করবেন না—এটা সম্পূর্ণ মুকেশ আম্বানির ইচ্ছা, সক্ষমতা ও সামর্থ্যের বিষয়। ভারতের একজন ব্যবসায়ীর ছেলের বিয়ের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার অতি অর্থহীন গল্পচারিতা, বাড়াবাড়ি ছিল দৃষ্টিকটু এবং সুস্থ সাংবাদিকতার বিপরীত। হতাশ হতে হয় বৈকি।
আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি, কর ফাঁকি, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণগতমান সুরক্ষিত না করে অবৈধভাবে টাকা কামাই করার মানসিকতা, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানান ধরনের অপকর্মের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটিপতি পয়দা হচ্ছে। কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। অতিমারি করোনার সময়ও বিত্তবানদের বিত্ত বেড়েছে, অর্থসম্পদ বেড়েছে, অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্র, অতিদরিদ্র হয়েছে। গবেষণা হলে এই ওঠানামার সঠিক চিত্র ও কারণ জানা সম্ভব হতো। মিডিয়াকে এসব বিষয়ে খুব একটা তৎপর হতে দেখা যায় না। তৎপর হলে এক অনন্ত আম্বানির বিয়েকে কেন্দ্র করে আম্বানির পরিবার সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য জানা গেছে, তার অর্ধেক তথ্য জানা সম্ভব হতো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিত্তবান ও তাদের পরিবার সম্পর্কে। এটা তো বলাই যায় যে, আজ মুকেশ আম্বানি পরিবারের খবর সেইভাবে প্রচারে আধিক্য পাচ্ছে বলে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থাটা সাধারণ মানুষ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে অনুধাবন করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা কীভাবে তাঁদের সন্তানদের বিয়ে দেন বা দিচ্ছেন, কারা আমন্ত্রিত হন সেই সব অনুষ্ঠানে, কে কী উপহার দেন বা নাচগান করেন—এ বিষয়গুলো কিন্তু আসে না। একজন বলছিলেন, মিডিয়ার মালিকেরাই তো এ দেশের বড় বড় সাংবাদিক। আর প্রকৃত সাংবাদিকেরা হলেন তাদের হুকুম মানা কর্মচারী। তাঁর অভিমত, কোটিপতিদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে ‘ব্যবসায়িক সাংবাদিক’দের সংখ্যা কম হবে না।
না, ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে এই লেখা ভারতের মুকেশ আম্বানির গুণগান গাওয়ার জন্য লেখা। মোটেও তা নয়। এই লেখাটা এ দেশের জনগণকে অনধিকারচর্চা থেকে নিরুৎসাহিত করা এবং রাষ্ট্রের প্রতি মিডিয়ার দায় ও দায়িত্ব কেমন হওয়া দরকার, তার জবাব খোঁজা। আমাদের দেশের সাংবাদিকেরা কী কখনো এ দেশের কোনো গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক তাঁর ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে কত টাকা খরচ করেছেন, কারা কারা দাওয়াত পেয়েছেন, কারা নাচগান করেছেন ইত্যাদি বিষয়ে লাগাতার সংবাদ পরিবেশন করেছেন? কিংবা এক ব্যক্তি অগোচরে কীভাবে হাজার কোটির মালিক হয়ে যাচ্ছেন, কী ভয়াবহ অপরাধ করে যাচ্ছেন, আইন ভঙ্গ করে চলেছেন, তারও তো লাগাতার অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন নেই! কারণ সম্ভবত একটা, প্রায় সব কটি গ্রুপ অব কোম্পানির একটা করে সংবাদপত্র কিংবা চ্যানেল রয়েছে, যা নিজেদের কার্যকলাপকে রক্ষা করার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিশোধ নেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে প্রস্তুত থাকে। বাজারে একটা কথার প্রচলন রয়েছে যে, সাংবাদিকদের অনেকেই পকেটজাত হন মোটা অর্থের বিনিময়ে। হোক সেটা ব্যক্তি-গোষ্ঠীর গুণগানে অথবা নিন্দা প্রচারে।
বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গকে ছেলের বিয়ের অজুহাতে একজন মুকেশ আম্বানি ভারতে আনতে পেরেছেন, এতে কিন্তু ভারতবাসী গর্ববোধ করেছে। মোটেও বিরক্ত হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, মিস্টার আম্বানির এটা একটা নেহাত বাণিজ্যিক আচরণ। নিশ্চয়ই এর আড়ালে বড় কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। বড়লোকের তো বড় উদ্দেশ্য থাকেই, তাই না? আর থাকলে আমাদের দেশের মানুষের সমস্যা কোথায়? উপরন্তু এখানকার মিডিয়া তো বড় ব্যবসায়ীদের বড় ও ভালো কোনো পরামর্শ দিতে পারেন, যেন এ দেশে বিল গেটস বা জাকারবার্গের মতো বিশ্বখ্যাত মানুষের আগমন ঘটতে পারে। আর তাতে বাণিজ্যের কোনো জানালা খোলার আভাস পাওয়া যেতে পারে।
মুকেশ আম্বানি গোটা বলিউড, ক্রিকেট খেলোয়াড়সহ প্রায় সব পেশার প্রতিষ্ঠিতজনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেউ এমন কাজ কখনো করেছেন কি না বা করার মানসিকতা রাখেন কি না, কার পক্ষে জোর দিয়ে তা বলা সম্ভব? কারও কারও অভিমত, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। তাঁদের পছন্দ ও আগ্রহের তালিকায় হয় হলিউড কিংবা বলিউড। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও মঞ্চশিল্পী, চারুশিল্পী কিংবা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেয়াড়দের এ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা খুব একটা চেনেন না। চিনলেও তা হাতে গোনা। ভারতে একটা বিষয় লক্ষণীয়, দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে ভারতের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে শামিল হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্নতা থাকলেও রাষ্ট্রের স্বার্থে এক হয়।
ভারত বা যেকোনো রাষ্ট্রের দেশপ্রেম, ভালো কিছু আমাদের মিডিয়া যতটা না কৌতূহল, উৎসাহ নিয়ে প্রচার করে, তার চেয়ে বেশি উৎসাহ ও কৌতূহল বোধ করে নেতিবাচক ও অর্থহীন সংবাদ পরিবেশনে। একজন মুকেশ আম্বানি শুধু নিজের দেশই নয়, বিশ্বকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁর সামর্থ্য আকাশচুম্বী হয়েছে, তাঁর কৌশল ও কারণগুলো অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আসুক মিডিয়ার বদৌলতে।
শেষ করছি অনন্ত আম্বানির কথা দিয়ে। তাঁর ৩ হাজার একরের বন ও হাতির পুনর্বাসন কেন্দ্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছিলেন, সৃষ্টিকর্তা তাঁকে পশুসেবার সক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ভারতের ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানির তিন দিনের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠানের খরচ এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা নিয়ে মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াকে বেশ সক্রিয় ও তৎপর হতে দেখা গেল। ঘুম হারাম করা এই তৎপরতা ভারতের চেয়ে যেন বাংলাদেশে একটু বেশি মনে হলো। ভারতের এই ব্যবসায়ী তাঁর ছেলের প্রাক্বিবাহ অনুষ্ঠানে কী পরিমাণ টাকা খরচ করলেন, সেই টাকা দিয়ে কত মানুষের কত কী উপকার হতো, আর এত্তো এত্তো অতিথির আমন্ত্রণ জানানোর দরকারই বা ছিল কী, গোটা বলিউডকে তুলে এনে যেন শিল্পীদের আম্বানির পরিবারের চাকর বানিয়ে ছেড়েছে, শিল্পীরা কে কী পেলেন নেচেগেয়ে, আবার শিল্পীরাই বা কে কী দিলেন এমন নানান ধরনের সংবাদ পরিবেশন ও বিশ্লেষণে সব ধরনের মিডিয়া সরব হয়ে উঠল। শুধু তা-ই নয়, মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়েতে বিল গেটস ও মার্ক জাকারবার্গের আগমনও সমালোচনার ঝুলিতে জায়গা পেয়েছে। জায়গা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পীসহ অনেকেই। এতে সমালোচনাকারীদের চক্ষু স্থির, কী সাংঘাতিক বিষয়! এসব আলোচনার সূত্র ধরে নীতা আম্বানির একটা নেকলেস কোন কোন দেশের জিডিপি থেকে বেশি, সেটাও উঠে এসেছে।
একজন মুকেশ আম্বানির অনেক সম্পদ, ধনদৌলত, অর্থবিত্ত আছে। তিনি বিশ্বসেরা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যেটা বিশ্বের কমবেশি সবাই জানে। তার সম্পদ লুকিয়ে রাখা, গোপন করার কখনো কোনো প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবসায়ী বাবা মুকেশ আম্বানি সেসব থেকে তাঁর ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়েতে কিংবা অন্য কোনো কাজে খরচ করবেন, তাতে কার কী? কারও তো কোনো কিছু এসে যাওয়ার কথা নয় এ বিষয়ে, তাই না? বাবা তো তাঁর ছেলের বিয়েতেই খরচ করছেন। অন্যের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে কিংবা চুরি করে তো করছেন না। আবার বারো শ কোটি টাকা খরচ করবেন, নাকি বারো হাজার কোটি টাকা খরচ করবেন, কিংবা মাত্র বারো হাজার টাকা খরচ করে ছেলের বিয়ে দেবেন অথবা কোনো অর্থই ব্যয় করবেন না—এটা সম্পূর্ণ মুকেশ আম্বানির ইচ্ছা, সক্ষমতা ও সামর্থ্যের বিষয়। ভারতের একজন ব্যবসায়ীর ছেলের বিয়ের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার অতি অর্থহীন গল্পচারিতা, বাড়াবাড়ি ছিল দৃষ্টিকটু এবং সুস্থ সাংবাদিকতার বিপরীত। হতাশ হতে হয় বৈকি।
আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি, কর ফাঁকি, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণগতমান সুরক্ষিত না করে অবৈধভাবে টাকা কামাই করার মানসিকতা, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানান ধরনের অপকর্মের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটিপতি পয়দা হচ্ছে। কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। অতিমারি করোনার সময়ও বিত্তবানদের বিত্ত বেড়েছে, অর্থসম্পদ বেড়েছে, অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্র, অতিদরিদ্র হয়েছে। গবেষণা হলে এই ওঠানামার সঠিক চিত্র ও কারণ জানা সম্ভব হতো। মিডিয়াকে এসব বিষয়ে খুব একটা তৎপর হতে দেখা যায় না। তৎপর হলে এক অনন্ত আম্বানির বিয়েকে কেন্দ্র করে আম্বানির পরিবার সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য জানা গেছে, তার অর্ধেক তথ্য জানা সম্ভব হতো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিত্তবান ও তাদের পরিবার সম্পর্কে। এটা তো বলাই যায় যে, আজ মুকেশ আম্বানি পরিবারের খবর সেইভাবে প্রচারে আধিক্য পাচ্ছে বলে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থাটা সাধারণ মানুষ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে অনুধাবন করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা কীভাবে তাঁদের সন্তানদের বিয়ে দেন বা দিচ্ছেন, কারা আমন্ত্রিত হন সেই সব অনুষ্ঠানে, কে কী উপহার দেন বা নাচগান করেন—এ বিষয়গুলো কিন্তু আসে না। একজন বলছিলেন, মিডিয়ার মালিকেরাই তো এ দেশের বড় বড় সাংবাদিক। আর প্রকৃত সাংবাদিকেরা হলেন তাদের হুকুম মানা কর্মচারী। তাঁর অভিমত, কোটিপতিদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে ‘ব্যবসায়িক সাংবাদিক’দের সংখ্যা কম হবে না।
না, ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে এই লেখা ভারতের মুকেশ আম্বানির গুণগান গাওয়ার জন্য লেখা। মোটেও তা নয়। এই লেখাটা এ দেশের জনগণকে অনধিকারচর্চা থেকে নিরুৎসাহিত করা এবং রাষ্ট্রের প্রতি মিডিয়ার দায় ও দায়িত্ব কেমন হওয়া দরকার, তার জবাব খোঁজা। আমাদের দেশের সাংবাদিকেরা কী কখনো এ দেশের কোনো গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক তাঁর ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে কত টাকা খরচ করেছেন, কারা কারা দাওয়াত পেয়েছেন, কারা নাচগান করেছেন ইত্যাদি বিষয়ে লাগাতার সংবাদ পরিবেশন করেছেন? কিংবা এক ব্যক্তি অগোচরে কীভাবে হাজার কোটির মালিক হয়ে যাচ্ছেন, কী ভয়াবহ অপরাধ করে যাচ্ছেন, আইন ভঙ্গ করে চলেছেন, তারও তো লাগাতার অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন নেই! কারণ সম্ভবত একটা, প্রায় সব কটি গ্রুপ অব কোম্পানির একটা করে সংবাদপত্র কিংবা চ্যানেল রয়েছে, যা নিজেদের কার্যকলাপকে রক্ষা করার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিশোধ নেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে প্রস্তুত থাকে। বাজারে একটা কথার প্রচলন রয়েছে যে, সাংবাদিকদের অনেকেই পকেটজাত হন মোটা অর্থের বিনিময়ে। হোক সেটা ব্যক্তি-গোষ্ঠীর গুণগানে অথবা নিন্দা প্রচারে।
বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গকে ছেলের বিয়ের অজুহাতে একজন মুকেশ আম্বানি ভারতে আনতে পেরেছেন, এতে কিন্তু ভারতবাসী গর্ববোধ করেছে। মোটেও বিরক্ত হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, মিস্টার আম্বানির এটা একটা নেহাত বাণিজ্যিক আচরণ। নিশ্চয়ই এর আড়ালে বড় কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। বড়লোকের তো বড় উদ্দেশ্য থাকেই, তাই না? আর থাকলে আমাদের দেশের মানুষের সমস্যা কোথায়? উপরন্তু এখানকার মিডিয়া তো বড় ব্যবসায়ীদের বড় ও ভালো কোনো পরামর্শ দিতে পারেন, যেন এ দেশে বিল গেটস বা জাকারবার্গের মতো বিশ্বখ্যাত মানুষের আগমন ঘটতে পারে। আর তাতে বাণিজ্যের কোনো জানালা খোলার আভাস পাওয়া যেতে পারে।
মুকেশ আম্বানি গোটা বলিউড, ক্রিকেট খেলোয়াড়সহ প্রায় সব পেশার প্রতিষ্ঠিতজনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেউ এমন কাজ কখনো করেছেন কি না বা করার মানসিকতা রাখেন কি না, কার পক্ষে জোর দিয়ে তা বলা সম্ভব? কারও কারও অভিমত, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। তাঁদের পছন্দ ও আগ্রহের তালিকায় হয় হলিউড কিংবা বলিউড। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও মঞ্চশিল্পী, চারুশিল্পী কিংবা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেয়াড়দের এ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা খুব একটা চেনেন না। চিনলেও তা হাতে গোনা। ভারতে একটা বিষয় লক্ষণীয়, দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে ভারতের সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে শামিল হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্নতা থাকলেও রাষ্ট্রের স্বার্থে এক হয়।
ভারত বা যেকোনো রাষ্ট্রের দেশপ্রেম, ভালো কিছু আমাদের মিডিয়া যতটা না কৌতূহল, উৎসাহ নিয়ে প্রচার করে, তার চেয়ে বেশি উৎসাহ ও কৌতূহল বোধ করে নেতিবাচক ও অর্থহীন সংবাদ পরিবেশনে। একজন মুকেশ আম্বানি শুধু নিজের দেশই নয়, বিশ্বকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁর সামর্থ্য আকাশচুম্বী হয়েছে, তাঁর কৌশল ও কারণগুলো অন্যের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আসুক মিডিয়ার বদৌলতে।
শেষ করছি অনন্ত আম্বানির কথা দিয়ে। তাঁর ৩ হাজার একরের বন ও হাতির পুনর্বাসন কেন্দ্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছিলেন, সৃষ্টিকর্তা তাঁকে পশুসেবার সক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে