রহস্যময় চরিত্র সেলিম প্রধান: রাজনীতিতে নীতি নেই, তাই তিনি ডন

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ০৭
Thumbnail image

‘আই এম ব্যাক’, ‘স্টে উইথ মি’, ‘ডন ইজ ব্যাক’—এমন নানান হাঁকডাক দিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন দেশের অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধান। দীর্ঘ চার বছর জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়েই ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। চারজন বডিগার্ড আর বাহারি পোশাক পরে বের হন সড়কে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন রূপগঞ্জের মাদক কারবারি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করার। পাশাপাশি রূপগঞ্জকে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করার আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি।

সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সেলিম প্রধান। পরে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মদ, টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও হরিণের চামড়া। চারটি অভিযোগে করা হয় মামলা। এসব মামলায় মোট চার বছর জেল খেটে জামিনে বের হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো তিনটি মামলা চলমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিম প্রধান মাঝেমধ্যেই নিজের বডিগার্ডসহ বহর নিয়ে হাজির হন রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণায় বিতরণ করেন লিফলেট। ৮-১০টি ক্যামেরা ভাড়ায় নিয়ে নিজের চালানো কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ করে রাখেন তিনি।

নিজের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম প্রধান ওরফে ডন সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আমার আইডিয়া কাউকে বলিনি, বলবও না। কারণ দুষ্টচক্রের লোকজন যদি সেটা বুঝে যায়, তাহলে সামনে এগিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করবে। চার বছর জেলে থাকার সময় আমি রূপগঞ্জের প্রতি বাড়তি টান অনুভব করেছি। তখন রূপগঞ্জের কাউকে দেখলে আপন মনে হতো। সেই অনুভূতি থেকেই ভালো কিছু করার চেষ্টা শুরু করেছি।’

ঠিক কাদের দুষ্টচক্র হিসেবে চিহ্নিত করছেন—এমন প্রশ্নে সেলিম প্রধান বলেন, ‘দুষ্টচক্র হচ্ছে তারাই, যারা আপনার-আমার ক্ষতি করতে চায়। যারা কারও ভালো দেখলে তাকে টেনে পেছনে নামানোর চেষ্টা করে। তারা দেশের শত্রু ও আইনের চোখে অন্যায়কারী। এদের আমি দুষ্টচক্র বলি।’

সামাজিক কার্যক্রম থেকে রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা আছে কি না—জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘রাজনীতি হচ্ছে নীতির বিষয়। নীতিটা কি এখন আছে? থাকলে আসার বিষয় থাকত। যেহেতু এখন নীতির অভাব, তাই রাজনীতিতে প্রবেশের কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’

মামলার বিষয়ে সেলিম প্রধান বলেন, ‘মাদক, মানি লন্ডারিং, অনলাইন ক্যাসিনো, ঋণখেলাপিতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সরকারের চাকরিজীবী কিছু লোক নিজেদের স্বার্থের কারণে এই কাজ করেছে। অনেকটা ভিলেজ পলিটিকসের মতো।’

 ‘ডন সেলিম’ নামকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ডন নাম পছন্দ করি এমন নয়, আপনারা (মিডিয়া) আমাকে ডন বানিয়েছেন। আমি কারাগার থেকে বেরিয়ে তাদের জানান দিচ্ছি যে আমি গরিবের ডন।’ তবে নিজেকে ডন পরিচয় দিলেও অপরাধ করেননি বলে দাবি সেলিম প্রধানের।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় সেলিম প্রধানকে। পরে তাঁর গুলশান ও বনানীর অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৯ লাখ টাকা, ৭৭ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২ চেক, ৪৮ বোতল মদ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। ওই সময় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সেলিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত