মুনতাসীর মঈন
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় নেটফ্লিক্সে। এশিয়ান স্ট্রিট ফুডের দারুণ একটি ডকুমেন্টারি আছে এ ওটিটি প্ল্যাটফর্মটিতে। সেখানে স্কি গগলস পরা এক বৃদ্ধার আইকনিক রান্নার দৃশ্য দেখানো হয়! সেটিই তাঁর গল্প। স্ট্রিট ফুড দিয়ে মিশেলিন স্টার পৃথিবীতে আর কেউ পাননি তিনি ছাড়া। এই তিনি হলেন ‘মোস্ট ফেমাস স্ট্রিট ফুড শেফ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং থাইল্যান্ডের ‘কুইন অব স্ট্রিট ফুড’ খ্যাত জে ফাই। তাঁর বিখ্যাত খাবার ক্র্যাব ওমলেটের জন্য তাঁকে ‘ওমলেট লেডি’ নামেও ডাকা হয়।
দারুণ লড়াকু এই বৃদ্ধার জীবন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। গরিব এক পরিবারে জন্ম জে ফাইয়ের। ছোটবেলা থেকে তাঁকে তাঁর মা বলতেন, ‘আজ কাজ না করলে খাওয়া কিন্তু জুটবে না।’ জে ফাইয়ের মা রাইস পরেজ আর চিকেন নুডলস বিক্রি করতেন। তাঁর বাবা ছিলেন আফিমসেবী ও ভবঘুরে, মাঝে মাঝেই যাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত না।
১৯৫০-এর দশকে ব্যাংককের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। তাঁদের পরিবারের একটি দরজি দোকান ছিল। হঠাৎ একদিন আগুনে পুড়ে যায় সে দোকান। পথে বসে যায় পুরো পরিবার। তখন জে ফাইয়ের মা ফেরি করে নুডলস বিক্রি শুরু করেন। জে ফাই তাঁর মাকে বলেন, তিনি নুডলস রাঁধতে চান। মা তাঁকে নিরুৎসাহিত করেন। একধরনের জিদের বসে জে ফাই নুডলস রান্না করতে শুরু করেন।
প্রতিদিন রাতে তিনি নুডলস রান্নার অনুশীলন করতে থাকেন। একদিন এক অবাক কাণ্ড ঘটে। জে ফাই কড়াইয়ে তেল গরম করতে দিয়ে ভুলে যান এবং তেল পুড়ে যায়। সেই তেল ফেলে দিতে হয় বলে নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে সে কড়াইয়ে কিছু নুডলস ছুড়ে মারেন। তিনি লক্ষ করেন, বেশি গরমের কারণে নুডলস তেল ছাড়াই দারুণ বাদামি রঙে রান্না হচ্ছে। খেতে গিয়ে দেখেন, স্বাদও দারুণ হয়েছে। পরদিন সেই নুডলস কাস্টমারদের খেতে দেওয়া হলে তারাও দারুণ পছন্দ করল। সেদিনই জে ফাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য স্থির করলেন—তিনি শেফ হবেন। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় তাঁর। এরপর কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। কখনো কখনো সকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাঁকে রাঁধতে হতো। তখন তাঁর বয়স ৩০ বছর এবং তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ।
ধীরে ধীরে সঞ্চয় করে একটি দোকান দেন জে ফাই। কিছু ঋণ নিয়ে কাঁকড়া আর প্রন কিনে নতুন নতুন ডিশের নিরীক্ষা চালাতে থাকেন।অবস্থা ভালো হতে থাকে। কিন্তু ‘কাজ না করলে খাবার নেই’ মায়ের এ কথা ভুলে যাননি তিনি। প্রচণ্ড নিষ্ঠা নিয়ে নিজ হাতে খাবার বানাতে থাকেন জে ফাই। তাঁর খাবার ভালো লাগতে থাকে থাইদের। তারা তাঁর নাম দেয় ‘মোজার্ট অব থাই ফুড’। তাঁর মতো টম ইয়াম স্যুপ নাকি পুরো ব্যাংককে কেউ বানাতে পারে না! এই টম ইয়াম স্যুপের একটি নিরীক্ষামূলক সংস্করণ তৈরি করেছেন জে ফাই। সেটির নাম ড্রাই টম ইয়াম। এ ছাড়া তাঁর ক্র্যাব বা কাঁকড়ার ওমলেটের জুড়ি মেলা ভার।
দীর্ঘ দিন রান্নাবান্না করে, মানুষজনকে খাইয়ে অবশেষে মেলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—মিশেলিন স্টার। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শেফরাই কেবল ভীষণ দুর্লভ এই স্টারের অধিকারী। হু হু করে খ্যাতি বাড়তে থাকে জে ফাইয়ের। ৭৩ বছর বয়সী জে ফাই এখনো ভীষণ সক্রিয় তাঁর কাজে। কম বয়সী শেফদের তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার চেয়ে ইয়ংগার হতে পারো, কিন্তু আমি স্ট্রংগার।’
আমি তাঁর খাবার চেখে দেখতে গিয়েছিলাম। তাঁর রেস্টুরেন্ট খোলে সকাল নয়টায়। ঠিক নয়টায় গিয়ে দেখি আমার নম্বর ৪১! ভোর ছয়টা থেকে সিরিয়াল দিয়ে রেখেছে লোকজন। জে ফাইয়ের রেস্তোরাঁয় রিজারভেশনের কোনো সিস্টেম নেই, আগে আসলে আগে পাবেন ব্যবস্থা। শুরু হলো অপেক্ষা। জে ফাই এলেন। কড়াইয়ে তেল ঢেলে ওমলেট তৈরি করা শুরু করলেন।
লাল কয়লার আগুনে লোহার কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছে। মোট ৫০ জনের বুকিং নিলেন তিনি। এই ৫০ জনের খাবার তিনি নিজেই বানিয়েছেন!একে একে ডাক শুরু হলো। আমার ওমলেট আসতে চার ঘণ্টা লেগে গেল! ওমলেট মুখে দিয়ে বুঝলাম, এসে ভুল করিনি। তারপর এল টম ইয়াম। চেখে বুঝলাম, সবুরে মেওয়া ফলেছে। সকালবেলা এসব সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে মনে হলো, ৭৩ বছর বয়সের জে ফাই যেন আমাদের বলছেন, ‘কাজ নেই তো, খাবার নেই।’
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় নেটফ্লিক্সে। এশিয়ান স্ট্রিট ফুডের দারুণ একটি ডকুমেন্টারি আছে এ ওটিটি প্ল্যাটফর্মটিতে। সেখানে স্কি গগলস পরা এক বৃদ্ধার আইকনিক রান্নার দৃশ্য দেখানো হয়! সেটিই তাঁর গল্প। স্ট্রিট ফুড দিয়ে মিশেলিন স্টার পৃথিবীতে আর কেউ পাননি তিনি ছাড়া। এই তিনি হলেন ‘মোস্ট ফেমাস স্ট্রিট ফুড শেফ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং থাইল্যান্ডের ‘কুইন অব স্ট্রিট ফুড’ খ্যাত জে ফাই। তাঁর বিখ্যাত খাবার ক্র্যাব ওমলেটের জন্য তাঁকে ‘ওমলেট লেডি’ নামেও ডাকা হয়।
দারুণ লড়াকু এই বৃদ্ধার জীবন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। গরিব এক পরিবারে জন্ম জে ফাইয়ের। ছোটবেলা থেকে তাঁকে তাঁর মা বলতেন, ‘আজ কাজ না করলে খাওয়া কিন্তু জুটবে না।’ জে ফাইয়ের মা রাইস পরেজ আর চিকেন নুডলস বিক্রি করতেন। তাঁর বাবা ছিলেন আফিমসেবী ও ভবঘুরে, মাঝে মাঝেই যাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত না।
১৯৫০-এর দশকে ব্যাংককের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। তাঁদের পরিবারের একটি দরজি দোকান ছিল। হঠাৎ একদিন আগুনে পুড়ে যায় সে দোকান। পথে বসে যায় পুরো পরিবার। তখন জে ফাইয়ের মা ফেরি করে নুডলস বিক্রি শুরু করেন। জে ফাই তাঁর মাকে বলেন, তিনি নুডলস রাঁধতে চান। মা তাঁকে নিরুৎসাহিত করেন। একধরনের জিদের বসে জে ফাই নুডলস রান্না করতে শুরু করেন।
প্রতিদিন রাতে তিনি নুডলস রান্নার অনুশীলন করতে থাকেন। একদিন এক অবাক কাণ্ড ঘটে। জে ফাই কড়াইয়ে তেল গরম করতে দিয়ে ভুলে যান এবং তেল পুড়ে যায়। সেই তেল ফেলে দিতে হয় বলে নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে সে কড়াইয়ে কিছু নুডলস ছুড়ে মারেন। তিনি লক্ষ করেন, বেশি গরমের কারণে নুডলস তেল ছাড়াই দারুণ বাদামি রঙে রান্না হচ্ছে। খেতে গিয়ে দেখেন, স্বাদও দারুণ হয়েছে। পরদিন সেই নুডলস কাস্টমারদের খেতে দেওয়া হলে তারাও দারুণ পছন্দ করল। সেদিনই জে ফাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য স্থির করলেন—তিনি শেফ হবেন। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় তাঁর। এরপর কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। কখনো কখনো সকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাঁকে রাঁধতে হতো। তখন তাঁর বয়স ৩০ বছর এবং তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ।
ধীরে ধীরে সঞ্চয় করে একটি দোকান দেন জে ফাই। কিছু ঋণ নিয়ে কাঁকড়া আর প্রন কিনে নতুন নতুন ডিশের নিরীক্ষা চালাতে থাকেন।অবস্থা ভালো হতে থাকে। কিন্তু ‘কাজ না করলে খাবার নেই’ মায়ের এ কথা ভুলে যাননি তিনি। প্রচণ্ড নিষ্ঠা নিয়ে নিজ হাতে খাবার বানাতে থাকেন জে ফাই। তাঁর খাবার ভালো লাগতে থাকে থাইদের। তারা তাঁর নাম দেয় ‘মোজার্ট অব থাই ফুড’। তাঁর মতো টম ইয়াম স্যুপ নাকি পুরো ব্যাংককে কেউ বানাতে পারে না! এই টম ইয়াম স্যুপের একটি নিরীক্ষামূলক সংস্করণ তৈরি করেছেন জে ফাই। সেটির নাম ড্রাই টম ইয়াম। এ ছাড়া তাঁর ক্র্যাব বা কাঁকড়ার ওমলেটের জুড়ি মেলা ভার।
দীর্ঘ দিন রান্নাবান্না করে, মানুষজনকে খাইয়ে অবশেষে মেলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—মিশেলিন স্টার। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শেফরাই কেবল ভীষণ দুর্লভ এই স্টারের অধিকারী। হু হু করে খ্যাতি বাড়তে থাকে জে ফাইয়ের। ৭৩ বছর বয়সী জে ফাই এখনো ভীষণ সক্রিয় তাঁর কাজে। কম বয়সী শেফদের তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার চেয়ে ইয়ংগার হতে পারো, কিন্তু আমি স্ট্রংগার।’
আমি তাঁর খাবার চেখে দেখতে গিয়েছিলাম। তাঁর রেস্টুরেন্ট খোলে সকাল নয়টায়। ঠিক নয়টায় গিয়ে দেখি আমার নম্বর ৪১! ভোর ছয়টা থেকে সিরিয়াল দিয়ে রেখেছে লোকজন। জে ফাইয়ের রেস্তোরাঁয় রিজারভেশনের কোনো সিস্টেম নেই, আগে আসলে আগে পাবেন ব্যবস্থা। শুরু হলো অপেক্ষা। জে ফাই এলেন। কড়াইয়ে তেল ঢেলে ওমলেট তৈরি করা শুরু করলেন।
লাল কয়লার আগুনে লোহার কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছে। মোট ৫০ জনের বুকিং নিলেন তিনি। এই ৫০ জনের খাবার তিনি নিজেই বানিয়েছেন!একে একে ডাক শুরু হলো। আমার ওমলেট আসতে চার ঘণ্টা লেগে গেল! ওমলেট মুখে দিয়ে বুঝলাম, এসে ভুল করিনি। তারপর এল টম ইয়াম। চেখে বুঝলাম, সবুরে মেওয়া ফলেছে। সকালবেলা এসব সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে মনে হলো, ৭৩ বছর বয়সের জে ফাই যেন আমাদের বলছেন, ‘কাজ নেই তো, খাবার নেই।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে