একজন উমেদার

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার কিছু মানুষের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের পত্রিকায় গতকাল মঙ্গলবার ‘৬০ টাকা “উমেদারের” রাজধানীতেই জমিদারি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

উমেদার পদের সেই ব্যক্তির নাম আব্দুস সোবহান। তিনি দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেন ২০১৪ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। ২০১৪ সালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি না থাকলেও এই টাকা দিয়ে পরিবার কেন, একজনের চলাও সম্ভব না। কিন্তু তিনি দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এটা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব এ কারণেই যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি হলো সব সম্ভবের দেশ। এখানে একটু চালাক-চতুর হলে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া কঠিন কোনো ব্যাপার না। সম্পদ বাড়ানোর জন্য বেশি লেখাপড়া জানারও দরকার নেই, শুধু সিস্টেম করে কাজ করার মতো ধুরন্ধর হতে হবে। তাহলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাইয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক বক্তব্যে হাস্যোচ্ছলে বলেছিলেন তাঁর অফিসের একজন পিয়নই ৪০০ কোটি টাকার মালিক। তাঁর এ বক্তব্য মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। 

তো, আব্দুস সোবহান কীভাবে উমেদার থেকে জমিদার হয়ে উঠলেন? 

ব্যাপারটি খুবই সহজ। আব্দুস সোবহান অফিসে ঘুষ, তদবির-বাণিজ্যের একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। এই চক্র দিয়ে তিনি বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি শুধু নন, তাঁর স্ত্রী ও মায়ের নামেও ১৫ কোটি টাকার সম্পদ আছে। যদিও তাঁরা গৃহিণী। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকার মতো। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় ছাড়া নিশ্চয় আব্দুস সোবহান এত অপরাধ সংঘটিত করতে পারেননি। প্রশ্ন হলো, তাঁকে প্রশ্রয়দাতারা এখন কোথায়? 

আমাদের দেশে সামাজিক ব্যাধিগুলোর মধ্যে দুর্নীতি হলো অন্যতম। একবার কোনো ব্যাধি দেখা দিলে তা সারিয়ে তোলার মতো চিকিৎসাব্যবস্থা দেশে দেখা যায় না। বরং তা গাণিতিক হারে বাড়ে। সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যাধিগুলোর নিরাময় হয় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক নামের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও, তাকে নখদন্তহীন বলেই অভিহিত করা হয়। দুদকে কর্মরতদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে ভূত তাড়ানো তো কঠিনই বটে? 

নজরদারির অভাব এবং জবাবদিহি না থাকার কারণে মূলত আমাদের দেশে দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা রোধ করা যায় না। বড় বিষয় হচ্ছে, নজরদারি ও জবাবদিহি। এই যে এখন গণমাধ্যমে বিভিন্ন জনের ‘আঙুল ফুলে গলাগাছ’ হওয়ার খবর ছাপা হচ্ছে, তাতে কি আমাদের নীতিনির্ধারকদের কানে পানি ঢুকছে? নজরদারি ও জবাবদিহি বাড়ানোর উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হচ্ছে? শক্ত হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া শুধু ব্যক্তির সততা ও মূল্যবোধ দিয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধ করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত