মহিউদ্দিন খান মোহন
সিলেটের ছক্কা ছয়ফুরের কথা মনে পড়ে? সেই যে চালচুলোহীন একজন সহজ-সরল মানুষ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন! নামের গোড়ায় ‘ছক্কা’ শব্দটি লেগেছিল তা থেকেই। ১৯৯০ সালে শক্তিশালী একজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে তিনি যখন সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন, তখন সবাই এই বলে মন্তব্য করেছিলেন, ছয়ফুর রহমান ‘ছক্কা’ মেরেছেন। সে থেকে তাঁর পরিচিতি হয়ে গেল ‘ছক্কা ছয়ফুর’ হিসেবে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন ছয়ফুর রহমান। তিনি পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ভোট, আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ভোট। পেশায় তিনি ছিলেন একজন বাবুর্চি। তা-ও বড়সড় কোনো শহর-বন্দরে নয়, সিলেট সদর উপজেলার শালুটিকর নামের এক গ্রাম্য বাজারে। যখন বাবুর্চির কাজ থাকত না, তখন ঠেলাগাড়ি চালিয়ে পেট চালাতেন। বাজারের পাশেই ছিল তাঁর ছাপরানিবাস। সেই ছয়ফুর রহমান প্রথম আলোচনায় আসেন ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।
না, ছয়ফুর রহমান সেই নির্বাচনে তেমন কোনো সাড়া জাগাতে পারেননি। পারার কথাও নয়। বিএনপিদলীয় প্রার্থী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের মহা ভোট-রণের ময়দানে ছয়ফুর রহমান গণনার মধ্যে ছিলেন না। তবে তিনি তাঁর বক্তব্য-মন্তব্যের দ্বারা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন। ছয়ফুর রহমান একটি রাজনৈতিক দলও করেছিলেন ‘ইসলামী সমাজতান্ত্রিক দল’ নামে। সেই দলের তিনিই ছিলেন একমাত্র সদস্য। আর কাউকে তিনি দলের সদস্য করেননি। এমনকি তাঁর স্ত্রীকেও না। এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যাও ছিল।
একবার এক সাংবাদিক গিয়েছিলেন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। সকালবেলা গিয়ে দেখেন তিনি ঘর ঝাঁট দিচ্ছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় বলেছিলেন, নিজের কাজটা নিজেরই করা উচিত। দলের সদস্যসংখ্যা বাড়াচ্ছেন না কেন—এই প্রশ্নের জবাবে ছয়ফুর বলেছিলেন, বেশি লোক হলেই ঝামেলা। দুজন হলেও দল ভাগ হয়ে যেতে পারে। বহুল আলোচিত ছয়ফুর রহমান ওরফে ছক্কা ছয়ফুর আজ দুনিয়ায় নেই।
সম্প্রতি ছক্কা ছয়ফুরের মতোই দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন আরেক তরুণ। তাঁর নাম হিরো আলম। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত নাম। তাঁকে এখন আর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। নিজ নামেই পরিচিত। হিরো আলম তাঁর আসল নাম নয়। আসল নাম আশরাফুল হোসেন আলম। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে নিজের নামের গোড়ায় ‘হিরো’ শব্দটি বসিয়ে নিয়েছেন। বেসুরো গলায় এবং উদ্ভট কথা ও সুরে গান গেয়ে হিরো আলম দেশব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছেন ভালোই। ইউটিউবে মানুষ তাঁর গান শোনে, লাইক দেয়, শেয়ার করে। শোনা যায় ইউটিউব থেকে তাঁর আয়-ইনকামও খারাপ না। তার চেয়ে বড় কথা, সবাই তাঁকে চেনে। এটাই তাঁর আত্মতৃপ্তির বিষয়। এই গান গাওয়া নিয়ে তাঁকে কম ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। থানা-পুলিশও হয়েছে। পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেলেও কর্মকর্তারা ছেড়ে দিয়েছেন শুদ্ধ করে গান গাওয়ার পরামর্শ দিয়ে।
এত দিন যে হিরো আলম মানুষের কাছে ছিল হাস্যরসের পাত্র, তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁকে নিয়ে এখন পত্রিকায় হেডিং হয়, টিভিতে তাঁর খবর প্রচার করা হয়। টক শোতেও দাওয়াত পান কথা বলার জন্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে পরাজিত হয়েছেন, অন্যটিতে জয়ী হতে হতে হেরে গেছেন। বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি। একটি বিষয় অবশ্যই স্বীকার্য যে বর্তমান সময়ে অন্য দশজন প্রার্থী যেভাবে নির্বাচন করেন, হিরো আলম তা করেননি বা করতে পারেননি। এখন নির্বাচন মানেই তো কোটি কোটি টাকার কারবার। হিরো আলমের তো সে রকম টাকা নেই। তারপরও ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীর সঙ্গে যেভাবে তিনি পাল্লা দিয়েছেন, তাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। নিজে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় হেঁটে হেঁটে ভোট চেয়েছেন। মানুষ যে হিরো আলমকে ভালোবাসে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষের তাঁর জন্য বিভিন্ন উপহার নিয়ে যাওয়ার ঘটনায়। অনেকে অবশ্য হিরো আলমের প্রার্থী হওয়া, এত ভোট পাওয়া ইত্যাদিকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখতে চান। তাঁদের কথা, বিএনপি যেহেতু নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে, তাই হিরো আলম এ সুযোগটি পেয়েছেন এবং নিয়েছেনও। এ বিষয়ে একটি কথা না বললেই নয়। কোনো শূন্যস্থানই অপূর্ণ থাকে না। বিএনপি নির্বাচনে না এলে যে নির্বাচনী মাঠ খালি থাকবে না, হিরো আলমের প্রার্থী হওয়া এবং ভোটের মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তার প্রমাণ। অবশ্য হিরো আলম নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে বগুড়া-৪ আসনের ৪৯টি কেন্দ্রের ফলাফল পুনর্গণনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে হিরো আলমকে নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল লিপ্ত হয়েছে চিরাচরিত বাগ্যুদ্ধে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে ঘায়েল করতে হিরো আলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে হিরো আলম হিরো হয়েছে একটি মাত্র কারণে। সে প্রমাণ করেছে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাদের টিকে থাকতে হয়’। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেই হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদকে ছোট করার উদ্দেশ্যে উপনির্বাচনে বিএনপি হিরো আলমকে প্রার্থী করেছিল।’ তাঁর এ বক্তব্যে জনমনে প্রশ্ন ওঠায় পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, হিরো আলমকে তিনি কিছু বলেননি। বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই প্রসঙ্গক্রমে হিরো আলমের নাম এসে গেছে।
যেভাবেই এসে থাকুক, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না, হিরো আলমের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াকে ওবায়দুল কাদেরের কাছে ‘সংসদকে ছোট করার চেষ্টা’ বলেই মনে হয়েছে। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কেননা, একটি কথা বা বিষয়ের অর্থ বা ব্যাখ্যা কে কীভাবে করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তবে একটি বিষয় অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের দেশের রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তাঁরা যা বলেন বা করেন, তার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তার প্রমাণ দিতে হয় না।
এই সুবিধার সুযোগ নিয়ে তাঁরা যা খুশি বলতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের যেকোনো যোগ্য নাগরিক সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার রাখেন, যদি আইনত তিনি অযোগ্য না হন। তাহলে হিরো আলম প্রার্থী হওয়া কেন সংসদকে ছোট করার চেষ্টা হবে? অথচ নানা কারণে আমাদের সংসদের মর্যাদা খর্ব হয়েছে, হচ্ছে। বর্তমান সংসদেই এমন সংসদ সদস্যও রয়েছেন, যিনি লিখিত কাগজও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে পড়তে পারেন না। এ সংসদেরই সদস্য ছিলেন শহীদুল ইসলাম পাপুলের মতো চিহ্নিত অপরাধী, যিনি মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধে বিদেশের আদালতে দণ্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন।
ছক্কা ছয়ফুর কিংবা হিরো আলমদের রাজনীতির অঙ্গনে চমক সৃষ্টি করা কারও কারও কাছে বিসদৃশ মনে হতেই পারে। তবে, এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের রাজনীতির দৈন্যদশাই তাঁদের নিয়ে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সিলেটের ছক্কা ছয়ফুরের কথা মনে পড়ে? সেই যে চালচুলোহীন একজন সহজ-সরল মানুষ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন! নামের গোড়ায় ‘ছক্কা’ শব্দটি লেগেছিল তা থেকেই। ১৯৯০ সালে শক্তিশালী একজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে তিনি যখন সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন, তখন সবাই এই বলে মন্তব্য করেছিলেন, ছয়ফুর রহমান ‘ছক্কা’ মেরেছেন। সে থেকে তাঁর পরিচিতি হয়ে গেল ‘ছক্কা ছয়ফুর’ হিসেবে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন ছয়ফুর রহমান। তিনি পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ভোট, আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ভোট। পেশায় তিনি ছিলেন একজন বাবুর্চি। তা-ও বড়সড় কোনো শহর-বন্দরে নয়, সিলেট সদর উপজেলার শালুটিকর নামের এক গ্রাম্য বাজারে। যখন বাবুর্চির কাজ থাকত না, তখন ঠেলাগাড়ি চালিয়ে পেট চালাতেন। বাজারের পাশেই ছিল তাঁর ছাপরানিবাস। সেই ছয়ফুর রহমান প্রথম আলোচনায় আসেন ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।
না, ছয়ফুর রহমান সেই নির্বাচনে তেমন কোনো সাড়া জাগাতে পারেননি। পারার কথাও নয়। বিএনপিদলীয় প্রার্থী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের মহা ভোট-রণের ময়দানে ছয়ফুর রহমান গণনার মধ্যে ছিলেন না। তবে তিনি তাঁর বক্তব্য-মন্তব্যের দ্বারা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন। ছয়ফুর রহমান একটি রাজনৈতিক দলও করেছিলেন ‘ইসলামী সমাজতান্ত্রিক দল’ নামে। সেই দলের তিনিই ছিলেন একমাত্র সদস্য। আর কাউকে তিনি দলের সদস্য করেননি। এমনকি তাঁর স্ত্রীকেও না। এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যাও ছিল।
একবার এক সাংবাদিক গিয়েছিলেন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। সকালবেলা গিয়ে দেখেন তিনি ঘর ঝাঁট দিচ্ছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় বলেছিলেন, নিজের কাজটা নিজেরই করা উচিত। দলের সদস্যসংখ্যা বাড়াচ্ছেন না কেন—এই প্রশ্নের জবাবে ছয়ফুর বলেছিলেন, বেশি লোক হলেই ঝামেলা। দুজন হলেও দল ভাগ হয়ে যেতে পারে। বহুল আলোচিত ছয়ফুর রহমান ওরফে ছক্কা ছয়ফুর আজ দুনিয়ায় নেই।
সম্প্রতি ছক্কা ছয়ফুরের মতোই দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন আরেক তরুণ। তাঁর নাম হিরো আলম। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত নাম। তাঁকে এখন আর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। নিজ নামেই পরিচিত। হিরো আলম তাঁর আসল নাম নয়। আসল নাম আশরাফুল হোসেন আলম। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে নিজের নামের গোড়ায় ‘হিরো’ শব্দটি বসিয়ে নিয়েছেন। বেসুরো গলায় এবং উদ্ভট কথা ও সুরে গান গেয়ে হিরো আলম দেশব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছেন ভালোই। ইউটিউবে মানুষ তাঁর গান শোনে, লাইক দেয়, শেয়ার করে। শোনা যায় ইউটিউব থেকে তাঁর আয়-ইনকামও খারাপ না। তার চেয়ে বড় কথা, সবাই তাঁকে চেনে। এটাই তাঁর আত্মতৃপ্তির বিষয়। এই গান গাওয়া নিয়ে তাঁকে কম ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। থানা-পুলিশও হয়েছে। পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেলেও কর্মকর্তারা ছেড়ে দিয়েছেন শুদ্ধ করে গান গাওয়ার পরামর্শ দিয়ে।
এত দিন যে হিরো আলম মানুষের কাছে ছিল হাস্যরসের পাত্র, তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁকে নিয়ে এখন পত্রিকায় হেডিং হয়, টিভিতে তাঁর খবর প্রচার করা হয়। টক শোতেও দাওয়াত পান কথা বলার জন্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে পরাজিত হয়েছেন, অন্যটিতে জয়ী হতে হতে হেরে গেছেন। বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি। একটি বিষয় অবশ্যই স্বীকার্য যে বর্তমান সময়ে অন্য দশজন প্রার্থী যেভাবে নির্বাচন করেন, হিরো আলম তা করেননি বা করতে পারেননি। এখন নির্বাচন মানেই তো কোটি কোটি টাকার কারবার। হিরো আলমের তো সে রকম টাকা নেই। তারপরও ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীর সঙ্গে যেভাবে তিনি পাল্লা দিয়েছেন, তাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। নিজে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় হেঁটে হেঁটে ভোট চেয়েছেন। মানুষ যে হিরো আলমকে ভালোবাসে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষের তাঁর জন্য বিভিন্ন উপহার নিয়ে যাওয়ার ঘটনায়। অনেকে অবশ্য হিরো আলমের প্রার্থী হওয়া, এত ভোট পাওয়া ইত্যাদিকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখতে চান। তাঁদের কথা, বিএনপি যেহেতু নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে, তাই হিরো আলম এ সুযোগটি পেয়েছেন এবং নিয়েছেনও। এ বিষয়ে একটি কথা না বললেই নয়। কোনো শূন্যস্থানই অপূর্ণ থাকে না। বিএনপি নির্বাচনে না এলে যে নির্বাচনী মাঠ খালি থাকবে না, হিরো আলমের প্রার্থী হওয়া এবং ভোটের মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তার প্রমাণ। অবশ্য হিরো আলম নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে বগুড়া-৪ আসনের ৪৯টি কেন্দ্রের ফলাফল পুনর্গণনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে হিরো আলমকে নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল লিপ্ত হয়েছে চিরাচরিত বাগ্যুদ্ধে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে ঘায়েল করতে হিরো আলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে হিরো আলম হিরো হয়েছে একটি মাত্র কারণে। সে প্রমাণ করেছে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাদের টিকে থাকতে হয়’। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেই হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদকে ছোট করার উদ্দেশ্যে উপনির্বাচনে বিএনপি হিরো আলমকে প্রার্থী করেছিল।’ তাঁর এ বক্তব্যে জনমনে প্রশ্ন ওঠায় পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, হিরো আলমকে তিনি কিছু বলেননি। বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই প্রসঙ্গক্রমে হিরো আলমের নাম এসে গেছে।
যেভাবেই এসে থাকুক, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না, হিরো আলমের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াকে ওবায়দুল কাদেরের কাছে ‘সংসদকে ছোট করার চেষ্টা’ বলেই মনে হয়েছে। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কেননা, একটি কথা বা বিষয়ের অর্থ বা ব্যাখ্যা কে কীভাবে করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তবে একটি বিষয় অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের দেশের রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তাঁরা যা বলেন বা করেন, তার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তার প্রমাণ দিতে হয় না।
এই সুবিধার সুযোগ নিয়ে তাঁরা যা খুশি বলতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের যেকোনো যোগ্য নাগরিক সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার রাখেন, যদি আইনত তিনি অযোগ্য না হন। তাহলে হিরো আলম প্রার্থী হওয়া কেন সংসদকে ছোট করার চেষ্টা হবে? অথচ নানা কারণে আমাদের সংসদের মর্যাদা খর্ব হয়েছে, হচ্ছে। বর্তমান সংসদেই এমন সংসদ সদস্যও রয়েছেন, যিনি লিখিত কাগজও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে পড়তে পারেন না। এ সংসদেরই সদস্য ছিলেন শহীদুল ইসলাম পাপুলের মতো চিহ্নিত অপরাধী, যিনি মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধে বিদেশের আদালতে দণ্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন।
ছক্কা ছয়ফুর কিংবা হিরো আলমদের রাজনীতির অঙ্গনে চমক সৃষ্টি করা কারও কারও কাছে বিসদৃশ মনে হতেই পারে। তবে, এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের রাজনীতির দৈন্যদশাই তাঁদের নিয়ে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে