টানাটানির মধ্যে শঙ্কার বাজেট

আবু সাইম, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ০৯: ০৪
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১০: ৪০

এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ত্রাহি অবস্থা সাধারণ মানুষের। নুন থেকে শুরু করে তেল, চাল থেকে ডাল, আলু-পেঁয়াজসহ প্রায় সব পণ্যের দাম লাগামহীন। এই অবস্থায় নতুন বাজেটে স্বস্তির বার্তা চেয়েছিল মানুষ, কিন্তু তা হচ্ছে না। উল্টো করের বোঝা চাপানোর বড় আয়োজন নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে মধ্যবিত্তের সংসারে যেমন টানাটানি চলছে, সরকারের অর্থের ঝুলির অবস্থাও অনেকটা তেমন। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করা হবে। তার আগে আজ থেকেই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বিকেল পাঁচটা থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন শুরু হবে। আজকের অধিবেশনে বাজেট পেশের সময়, সম্পূরক ও মূল বাজেটের ওপর আলোচনার ঘণ্টা, পাসের দিনক্ষণসহ সংসদের মেয়াদ ঠিক করা হবে। আগামী ২৫ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে তৈরি প্রস্তাবনায় খরচের বহর লম্বা হলেও আয়ের বিষয়টি অনেকটাই ধোঁয়াশা। বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অর্থনীতি একটা কঠিন সময় পার করছে। রাজস্ব আয় ঠিকমতো হচ্ছে না। বিদেশি ঋণ আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে খরচ মেটাতে হচ্ছে। ডলার-সংকট আর আমদানি পণ্যের বাড়তি দাম বাজারে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সীমিত করে তুলেছে।

এর মধ্যে বড় বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, এর অর্থের সংস্থান কীভাবে হবে, তারও কোনো ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা জানান, টানাটানির অর্থনীতিতে বিশাল বাজেটে আয় কোথা থেকে আসবে, সেখানেই অনিশ্চয়তা বেশি। বিষয়টি অনেকটা দুই দিকে ধার দেওয়া তলোয়ারের মতো। বাড়তি রাজস্বের জন্য কর বাড়ালে চাপে পড়বে মানুষ। রাজস্ব আয় না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। এ রকম নানান জটিলতায় আসছে বাজেটের রূপরেখা তৈরি হয়েছে।

এনবিআর সূত্র বলছে, আগামী এক বছরে এনবিআরকে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। সংস্থাটির কাঁধে চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। গত ১০ মাসে আদায় হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। বছর শেষে ৫০-৭০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির শঙ্কা করেছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা।

আগামী বাজেটের সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি হবে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা। কারণ, সরকার এ টাকা আদায় করবে ব্যক্তির ওপর আয়কর, ভ্যাট ও পণ্যের ওপর শুল্ক-হার বাড়িয়ে। আবার রাজস্ব আয় নির্ভর করবে অর্থনীতির চাকা ঠিকমতো ঘুরছে কি না তার ওপর। আমদানি কম হলে এ খাত থেকে শুল্ক কমে যাবে। আমদানি না হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাবে। এতে পণ্যের দাম বাড়বে। রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যক্তি খাতের আয় কমে যাবে; এর পরিণামে রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরেই রাজস্ব আহরণে বিরাট ঘাটতি থাকবে। এই অবস্থায় আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের এত বড় লক্ষ্য অর্জন কল্পনাই থেকে যাবে। ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এনবিআর লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করলেও সরকারের ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি থাকবে। এই অর্থ আসবে ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণের মাধ্যমে। বিশাল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ (নিট) নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে ২৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এখানে মালের ঘাটতি রয়েছে, টাকার নয়। টাকার অভাব হবে না। বিশ্বব্যাংক, জাইকা, আইএমএফ, এডিবিসহ দ্বিপক্ষীয়ভাবেও অনেক দেশ আমাদের টাকা দিতে প্রস্তুত।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত