বাসব রায়
আমরা ভদ্রতার খাতিরে অনেক কিছু এড়িয়ে চলি। এমনকি অনেক সময় সঠিক পর্যবেক্ষণকেও পাত্তা দিই না। সামাজিক বা পারিপার্শ্বিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে চাই। কিন্তু কখনো কখনো অপ্রিয় সত্যকে অস্বীকার করার উপায় থাকে না। কবি-সাহিত্যিকদের সমাজের বোদ্ধা মানুষের সঙ্গে তুলনা করা হয় এবং অনেকাংশেই এটা ঠিক। কবি-সাহিত্যিকেরা চলমান সময় এবং জীবনবোধের অনুপম আলেখ্য প্রকাশ করে নান্দনিক ভঙ্গিতে, যা পৃথিবীসুদ্ধ গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়।জীবনকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত করতে পারেন কবি বা সাহিত্যিকেরাই।
বর্তমান সময়েও কবি আছেন, কবিতা আছে এবং সাহিত্যচর্চা অবিরাম ধারায় বহমানও আছে। কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতা কবি ও কবিতার স্বকীয়তাকে কোথাও কোথাও নষ্ট করে ফেলছে, যা হয়তো আমাদের অবচেতন মনেই ঘটে চলেছে। যে কারণেই হোক, কবি-সাহিত্যিকেরা দিন দিন রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন। ফলে কবি ও কবিতা তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে লেখালেখির প্রসার ব্যাপকভাবে ঘটছে। তবে ভাব ও ভাষার দক্ষতা যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। একটা অস্পষ্ট অথচ খুব চেনাজানা অস্থিরতা চলছে, যা ডিঙিয়ে চলাও কবি-সাহিত্যিকদের জন্য কঠিন ব্যাপার। ক্রমেই কবি-সাহিত্যিকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। অবাক হতে হয় তখন, যখন দেখি আমলাতান্ত্রিক ফাঁদে কবির কলম চব্বিশ তলা ভবনে চানাচুর চিবোয়! ভবনের নিচে উদীয়মান প্রজন্ম হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষায় থাকে। তোষামোদি করে অথবা তোষামোদকারীদের পৃষ্ঠপোষক হয়ে কবি বা সাহিত্যিক হওয়া বেশ সহজ ব্যাপার এখন।
কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে নামকরা কিছু হওয়ার কামনা থেকেই অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। নীরবভাবে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাহিত্যে নিবেদিত থাকার মানসিকতা দ্রুতলয়ে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। লেখালেখিতে দলবাজির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেটা কখনো কখনো সাহিত্যের আদর্শকে ধ্বংস করে ফেলছে। জগাখিচুড়ি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং উপঢৌকন যথাযথ না হওয়ায় ‘মান’ শব্দটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সাহিত্য-সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান আর বিয়েবাড়ির ডেকোরেশন যখন প্রতিযোগিতায় নামে, তখন বুঝতে হবে সাহিত্যের অবস্থান নিশ্চিত মৃতপ্রায়। জাতির বিবেক বলে পরিচিত সাহিত্যিক যখন হাত পেতে পুরস্কার নিতে হয় আমলাদের স্যালুট দিয়ে, তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ প্রবাদটি প্রাণ ফিরে পায় পুনরায়। যে মাথা কোথাও নিচু হওয়ার কথা ছিল না, সেই মাথা এখন দেদার বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ আমরা এখন কাঁচুমাচু আর জবুথবু হয়ে বসে থাকা কবিদের বেশি দেখতে পাচ্ছি। এ জন্য বলা যায়, ‘ইজাদারকে মনুষ্য বলিয়া ঠাওরানো বেশ শক্ত বলিয়াই মনে হয়!’
কবিরা সমাজের দর্পণ হিসেবে পথের দিশা দেখিয়ে চলেন। কবিরা নানাবিধ কল্পরূপ, শব্দের ব্যঞ্জনা, অভিনব নির্মাণশৈলী দিয়ে মানুষের অন্তরে তাদের অব্যক্ত কথাগুলোরই ঝংকার তুলে থাকেন। পাঠকেরা আপন হৃদয়ের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখেন এবং বিস্মিত হন। কবি বা সাহিত্যিকদের সেখানেই তাঁদের সফলতা দেখার কথা ছিল।
অবশ্য ‘সব কবি কবি নন, কেউ কেউ কবি’—এ কথাটিও মানতে হবে। কবিতা তো জগাখিচুড়ির কোনো বিষয় নয়। পাঠকের অন্তরে আবেগ সৃষ্টি করে চরম কৌতূহল সৃষ্টি করতে না পারলে, লেখা কোনো দিনও সার্থক হয় না। পাঠকের আগ্রহের মাঝেই কবি ও সাহিত্যিকেরা বেঁচে থাকেন অনন্তকাল।
যেকোনো নান্দনিক সৃষ্টিকর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। মানুষ তার নিজের অপরিণত সৃজনশীলতা অন্যের মাঝে দেখতে পেলে সেটিকে লালন করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজস্ব বোধের মাঝে প্রাপ্তিকে খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হয়। এভাবেই মানুষ আলোকিত হওয়ার পথে পরিচালিত হয়।
মানুষ নিজের অন্ধকার দিকটাকে যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করে এবং শুধু আলোকিত প্রতিরূপকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে—এটিই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু তার হাতে বা অন্তরে যখন অনন্য সৃষ্টিকর্ম উদ্ভাসিত হয়, তখন সে মহৎ ও উদার হয়ে যায়। নিজের অসত্য অস্তিত্বকে অকপটে স্বীকার করে। আর সেই অনুভূতিকে ব্যক্ত করে জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, আর এখানেই সে কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার বা ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
তাই সম্মান বা সংবর্ধনা হোক যথাযথ প্রক্রিয়ায়। সেটিকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর দরকার নেই। সম্মান বা সংবর্ধনা হোক নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের জন্য, যা দেখে আমরা আপ্লুত হতে পারি।
লেখক: কবি
আমরা ভদ্রতার খাতিরে অনেক কিছু এড়িয়ে চলি। এমনকি অনেক সময় সঠিক পর্যবেক্ষণকেও পাত্তা দিই না। সামাজিক বা পারিপার্শ্বিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে চাই। কিন্তু কখনো কখনো অপ্রিয় সত্যকে অস্বীকার করার উপায় থাকে না। কবি-সাহিত্যিকদের সমাজের বোদ্ধা মানুষের সঙ্গে তুলনা করা হয় এবং অনেকাংশেই এটা ঠিক। কবি-সাহিত্যিকেরা চলমান সময় এবং জীবনবোধের অনুপম আলেখ্য প্রকাশ করে নান্দনিক ভঙ্গিতে, যা পৃথিবীসুদ্ধ গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়।জীবনকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত করতে পারেন কবি বা সাহিত্যিকেরাই।
বর্তমান সময়েও কবি আছেন, কবিতা আছে এবং সাহিত্যচর্চা অবিরাম ধারায় বহমানও আছে। কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতা কবি ও কবিতার স্বকীয়তাকে কোথাও কোথাও নষ্ট করে ফেলছে, যা হয়তো আমাদের অবচেতন মনেই ঘটে চলেছে। যে কারণেই হোক, কবি-সাহিত্যিকেরা দিন দিন রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন। ফলে কবি ও কবিতা তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাদে লেখালেখির প্রসার ব্যাপকভাবে ঘটছে। তবে ভাব ও ভাষার দক্ষতা যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। একটা অস্পষ্ট অথচ খুব চেনাজানা অস্থিরতা চলছে, যা ডিঙিয়ে চলাও কবি-সাহিত্যিকদের জন্য কঠিন ব্যাপার। ক্রমেই কবি-সাহিত্যিকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। অবাক হতে হয় তখন, যখন দেখি আমলাতান্ত্রিক ফাঁদে কবির কলম চব্বিশ তলা ভবনে চানাচুর চিবোয়! ভবনের নিচে উদীয়মান প্রজন্ম হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষায় থাকে। তোষামোদি করে অথবা তোষামোদকারীদের পৃষ্ঠপোষক হয়ে কবি বা সাহিত্যিক হওয়া বেশ সহজ ব্যাপার এখন।
কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে নামকরা কিছু হওয়ার কামনা থেকেই অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। নীরবভাবে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাহিত্যে নিবেদিত থাকার মানসিকতা দ্রুতলয়ে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। লেখালেখিতে দলবাজির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেটা কখনো কখনো সাহিত্যের আদর্শকে ধ্বংস করে ফেলছে। জগাখিচুড়ি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং উপঢৌকন যথাযথ না হওয়ায় ‘মান’ শব্দটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সাহিত্য-সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান আর বিয়েবাড়ির ডেকোরেশন যখন প্রতিযোগিতায় নামে, তখন বুঝতে হবে সাহিত্যের অবস্থান নিশ্চিত মৃতপ্রায়। জাতির বিবেক বলে পরিচিত সাহিত্যিক যখন হাত পেতে পুরস্কার নিতে হয় আমলাদের স্যালুট দিয়ে, তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ প্রবাদটি প্রাণ ফিরে পায় পুনরায়। যে মাথা কোথাও নিচু হওয়ার কথা ছিল না, সেই মাথা এখন দেদার বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ আমরা এখন কাঁচুমাচু আর জবুথবু হয়ে বসে থাকা কবিদের বেশি দেখতে পাচ্ছি। এ জন্য বলা যায়, ‘ইজাদারকে মনুষ্য বলিয়া ঠাওরানো বেশ শক্ত বলিয়াই মনে হয়!’
কবিরা সমাজের দর্পণ হিসেবে পথের দিশা দেখিয়ে চলেন। কবিরা নানাবিধ কল্পরূপ, শব্দের ব্যঞ্জনা, অভিনব নির্মাণশৈলী দিয়ে মানুষের অন্তরে তাদের অব্যক্ত কথাগুলোরই ঝংকার তুলে থাকেন। পাঠকেরা আপন হৃদয়ের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখেন এবং বিস্মিত হন। কবি বা সাহিত্যিকদের সেখানেই তাঁদের সফলতা দেখার কথা ছিল।
অবশ্য ‘সব কবি কবি নন, কেউ কেউ কবি’—এ কথাটিও মানতে হবে। কবিতা তো জগাখিচুড়ির কোনো বিষয় নয়। পাঠকের অন্তরে আবেগ সৃষ্টি করে চরম কৌতূহল সৃষ্টি করতে না পারলে, লেখা কোনো দিনও সার্থক হয় না। পাঠকের আগ্রহের মাঝেই কবি ও সাহিত্যিকেরা বেঁচে থাকেন অনন্তকাল।
যেকোনো নান্দনিক সৃষ্টিকর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। মানুষ তার নিজের অপরিণত সৃজনশীলতা অন্যের মাঝে দেখতে পেলে সেটিকে লালন করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজস্ব বোধের মাঝে প্রাপ্তিকে খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হয়। এভাবেই মানুষ আলোকিত হওয়ার পথে পরিচালিত হয়।
মানুষ নিজের অন্ধকার দিকটাকে যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করে এবং শুধু আলোকিত প্রতিরূপকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে—এটিই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু তার হাতে বা অন্তরে যখন অনন্য সৃষ্টিকর্ম উদ্ভাসিত হয়, তখন সে মহৎ ও উদার হয়ে যায়। নিজের অসত্য অস্তিত্বকে অকপটে স্বীকার করে। আর সেই অনুভূতিকে ব্যক্ত করে জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, আর এখানেই সে কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার বা ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
তাই সম্মান বা সংবর্ধনা হোক যথাযথ প্রক্রিয়ায়। সেটিকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর দরকার নেই। সম্মান বা সংবর্ধনা হোক নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের জন্য, যা দেখে আমরা আপ্লুত হতে পারি।
লেখক: কবি
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে