মহিউদ্দিন খান মোহন
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ‘ভাই ভাই’তে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া একটি গান ‘ইস্ দুনিয়া মে সব চোর চোর, ইস্ দুনিয়া মে সব চোর/ কোই পয়সা চোর, কোই মুরগি চোর/ অউর কোই দিল কা চোর/…কোই চোরি করে খাজানে কি, কোই আনে ইয়া দো আনে কি/ কোই ছোটা চোর কোই বড়া চোর/ ইয়ে ব্যায়ঠে চোর, ও খাড়া চোর/ ইস্ দুনিয়া মে সব চোর চোর...’। প্রায় সাত দশক আগে লেখা গানটির কথা এতকাল পরেও আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কত প্রাসঙ্গিক! আজ আপনি যদি চারদিকে তাকান, ছোট-বড় নানা কিসিমের চোর চোখে পড়বে। এসব চোরের কেউ লুটছে ভান্ডার, কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে যতটুকু পারছে।
কাউকে সরাসরি চোর বলা অনুচিত বা কারও ওপর চুরির অভিযোগ আনাও ঠিক নয় সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া। এখানে মান-সম্মানের ব্যাপার জড়িত। গোপনে চৌর্যবৃত্তিতে নিয়োজিত ভদ্রবেশী ব্যক্তিটিকে চোর বললে তিনি মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারেন। তাই চুরি নামের আদিতম পেশাটির আধুনিক প্রতিশব্দ বেরিয়েছে—‘আত্মসাৎ’, ‘তছরুপ’, ‘অনিয়ম’ এবং সর্বোপরি ‘দুর্নীতি’। প্রকারান্তরে এসবই চুরি। আমরা কতগুলো অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলি। যেমন কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে ভদ্রতার খাতিরে, তাঁকে নাকি বলা যাবে না ‘আপনি মিথ্যা বলছেন।’ বলতে হবে, ‘আপনি “অসত্য” বলছেন।’ অথচ মিথ্যা আর অসত্যের মধ্যে অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। কয়েক বছর আগে ঢাকায় একটি দেয়াল লিখন (চিকা) দেখেছিলাম, ‘ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ খাওয়া আর পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাই করা সমান অপরাধ’। কথাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে নানা কিসিমের চোর। এদের কেউ ছিঁচকে, কেউ প্রতাপশালী। যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে, চুরির রাজত্ব কায়েম করছে নানা নামে, নানা কায়দায়। এমনই কয়েকটি চুরির খবর অতিসম্প্রতি আজকের পত্রিকায় বেরিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন দিনে প্রকাশিত খবরগুলো পাঠ করলে যে কারও হিন্দি সিনেমার ওই গানটির কথা মনে পড়বে নির্ঘাত।
একটি খবর বেরিয়েছে ৩১ মে। শিরোনাম, ‘ভিসি শারফুদ্দিনের পদে পদে অনিয়ম’। ঘটনার ‘নায়ক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ভিসি সাহেবের দুর্নীতির হাত তাশরিফ আনেনি। নিজে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই চার শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষক হয়েও ক্লাসপ্রতি দুই হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। দরপত্র ছাড়াই দুই কোটি টাকার প্রকাশনার কাজ করিয়েছেন। সাতটি ক্যানটিন থেকে আয়ের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন না। বড় ছেলেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নয় বছরের শিক্ষা ছুটি দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দুদকে দায়ের করা অভিযোগে জানা গেছে এসব তথ্য। অবশ্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘দুদক যেভাবে আগায় আগাক। এ ব্যাপারে আমি পত্রপত্রিকায় আর কথা বলতে চাই না।’ তাঁর কথার মধ্যে একধরনের ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব লক্ষণীয়। হয়তো তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে যাঁদের আশীর্বাদে তিনি ভিসি পদে আরোহণ করেছেন, তাঁরাই তাঁকে রক্ষা করবেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, ‘একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। যেহেতু দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ, দুদক অবস্থান বা ব্যক্তির দিক বিবেচনা না করে অনুসন্ধান করবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে মনে করি।’ ড. ইফতেখারুজ্জামান যে দৃষ্টান্তের কথা বলেছেন, তা এ দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়া। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফল হয় উল্টো। এ ক্ষেত্রেও সে রকম হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে আরেকটি চমকপ্রদ খবর এসেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি থেকে। ১ জুন আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, জেলার বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম ফোনে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ৮ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন; যার অডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। এতে বেজায় খেপেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। বলেছেন, ‘অডিওটি ছড়িয়েছে একজন সাংবাদিক। আমি তাঁকে দেখে নেব। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করব।’ বোধকরি একেই বলে ‘চুরির ওপর সিনাজুরী’। কোথায় ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে তিনি মামলার আসামি হবেন, তা না, উল্টো তিনি দিচ্ছেন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি!
অপরদিকে গত ২০ মের আজকের পত্রিকার একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘ডিজিটাল চোরের গ্রাম ডুমাইন’। খবরে বলা হয়েছে, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন নামের গ্রামের অন্তত তিন শ যুবকের পেশা প্রতারণা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। খবরেই বলা হয়েছে, ওই প্রতারকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় সাবেক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান-মেম্বররা। যে কারণে পুলিশ তাঁদের দমন করতে পারে না। দেশের বড় বড় চুরির কাছে ডুমাইন গ্রামের ঘটনা অতিতুচ্ছ। তাই এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তবে চুরির উন্নতির কারণে গ্রামটি উদাহরণ হতে পারে। একেবারে সিঁধেল থেকে ডিজিটাল। এ ক্ষেত্রে ডুমাইন গ্রাম হতে পারে মডেল। খেয়াল করলে দেখা যাবে শুধু ডুমাইন নামের গ্রামটি নয়, সর্বত্র আজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চুরি হচ্ছে। এমনকি ব্যাংকের টাকাও হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
অনেক ছোটবেলার কথা। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম, আমাদের পাশের বাড়িতে এক ঘরে রাতে চোরে শিং (সিঁধ) দিয়েছে। শিং দেওয়া কাকে বলে তখনো পর্যন্ত জানি না। ভাবলাম, বোধ হয় চোরের মাথায় শিং থাকে, সেটাই ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলাম সেই বাড়ির দিকে। গিয়ে দেখলাম, দরজার সামনে মাটি খুঁড়ে একটি গর্ত করা হয়েছে, যেটা দিয়ে একজন মাঝারি সাইজের মানুষ সহজেই যাওয়া-আসা করতে পারে। বুঝলাম এই গর্ত খুঁড়ে ঘরে ঢুকে গেরস্থের মালসামানা হাতিয়ে নেওয়াকেই ‘শিং দেওয়া’ চুরি, মানে প্রমিত বাংলায় ‘সিঁধেল চুরি’ বলে। এই সিঁধেল চুরি যারা একসময় করত, তারা কিন্তু পেটের দায়েই করত। স্কুলজীবনে একটি গল্প পড়েছিলাম। দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন রাতে ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ খুট করে একটি শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখলেন, ঘরের এক কোণে লিকলিকে শরীরের একটি মানুষ দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে চুরি করতে এসেছে। লোকটি জানাল, সে পেশাদার চোর নয়। সে একজন দিনমজুর। গত তিন দিন সে কোনো কাজ পায়নি। ঘরে তার স্ত্রী ও পাঁচটি শিশুসন্তান। গত তিন দিন তারা কিছুই খেতে পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সে চুরি করতে এ ঘরে ঢুকেছে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন এ কথা শুনে লোকটিকে কিছু অর্থ দিলেন দোকান করার জন্য। গল্পটি এখানেই শেষ। এরপর সে লোকটি আর কখনো চুরি করেছে কি না, আমরা জানি না। হয়তো দোকান করে তার সংসার চালানোর ব্যবস্থা হওয়ার পর সে আর কোনো দিকে চোখ দেয়নি।
কিন্তু আমরা আজ কী দেখি? খেয়ে-পরে শুধু ভালো নয়, খুব ভালো আছে, এমন ব্যক্তিরাও অসৎ উপার্জন, মানে চুরিতে প্রবৃত্ত হয়। আর সে কারণেই আমাদের সমাজের নানা স্তরে আজ চোরের উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এই চোরদের উৎপাত থেকে আমরা কবে রেহাই পাব তা বোধকরি সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ‘ভাই ভাই’তে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া একটি গান ‘ইস্ দুনিয়া মে সব চোর চোর, ইস্ দুনিয়া মে সব চোর/ কোই পয়সা চোর, কোই মুরগি চোর/ অউর কোই দিল কা চোর/…কোই চোরি করে খাজানে কি, কোই আনে ইয়া দো আনে কি/ কোই ছোটা চোর কোই বড়া চোর/ ইয়ে ব্যায়ঠে চোর, ও খাড়া চোর/ ইস্ দুনিয়া মে সব চোর চোর...’। প্রায় সাত দশক আগে লেখা গানটির কথা এতকাল পরেও আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কত প্রাসঙ্গিক! আজ আপনি যদি চারদিকে তাকান, ছোট-বড় নানা কিসিমের চোর চোখে পড়বে। এসব চোরের কেউ লুটছে ভান্ডার, কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে যতটুকু পারছে।
কাউকে সরাসরি চোর বলা অনুচিত বা কারও ওপর চুরির অভিযোগ আনাও ঠিক নয় সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া। এখানে মান-সম্মানের ব্যাপার জড়িত। গোপনে চৌর্যবৃত্তিতে নিয়োজিত ভদ্রবেশী ব্যক্তিটিকে চোর বললে তিনি মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারেন। তাই চুরি নামের আদিতম পেশাটির আধুনিক প্রতিশব্দ বেরিয়েছে—‘আত্মসাৎ’, ‘তছরুপ’, ‘অনিয়ম’ এবং সর্বোপরি ‘দুর্নীতি’। প্রকারান্তরে এসবই চুরি। আমরা কতগুলো অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলি। যেমন কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে ভদ্রতার খাতিরে, তাঁকে নাকি বলা যাবে না ‘আপনি মিথ্যা বলছেন।’ বলতে হবে, ‘আপনি “অসত্য” বলছেন।’ অথচ মিথ্যা আর অসত্যের মধ্যে অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। কয়েক বছর আগে ঢাকায় একটি দেয়াল লিখন (চিকা) দেখেছিলাম, ‘ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ খাওয়া আর পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাই করা সমান অপরাধ’। কথাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে নানা কিসিমের চোর। এদের কেউ ছিঁচকে, কেউ প্রতাপশালী। যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে, চুরির রাজত্ব কায়েম করছে নানা নামে, নানা কায়দায়। এমনই কয়েকটি চুরির খবর অতিসম্প্রতি আজকের পত্রিকায় বেরিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন দিনে প্রকাশিত খবরগুলো পাঠ করলে যে কারও হিন্দি সিনেমার ওই গানটির কথা মনে পড়বে নির্ঘাত।
একটি খবর বেরিয়েছে ৩১ মে। শিরোনাম, ‘ভিসি শারফুদ্দিনের পদে পদে অনিয়ম’। ঘটনার ‘নায়ক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ভিসি সাহেবের দুর্নীতির হাত তাশরিফ আনেনি। নিজে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই চার শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষক হয়েও ক্লাসপ্রতি দুই হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। দরপত্র ছাড়াই দুই কোটি টাকার প্রকাশনার কাজ করিয়েছেন। সাতটি ক্যানটিন থেকে আয়ের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন না। বড় ছেলেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নয় বছরের শিক্ষা ছুটি দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দুদকে দায়ের করা অভিযোগে জানা গেছে এসব তথ্য। অবশ্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘দুদক যেভাবে আগায় আগাক। এ ব্যাপারে আমি পত্রপত্রিকায় আর কথা বলতে চাই না।’ তাঁর কথার মধ্যে একধরনের ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব লক্ষণীয়। হয়তো তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে যাঁদের আশীর্বাদে তিনি ভিসি পদে আরোহণ করেছেন, তাঁরাই তাঁকে রক্ষা করবেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, ‘একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। যেহেতু দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ, দুদক অবস্থান বা ব্যক্তির দিক বিবেচনা না করে অনুসন্ধান করবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে মনে করি।’ ড. ইফতেখারুজ্জামান যে দৃষ্টান্তের কথা বলেছেন, তা এ দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়া। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফল হয় উল্টো। এ ক্ষেত্রেও সে রকম হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে আরেকটি চমকপ্রদ খবর এসেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি থেকে। ১ জুন আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, জেলার বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম ফোনে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ৮ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন; যার অডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। এতে বেজায় খেপেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। বলেছেন, ‘অডিওটি ছড়িয়েছে একজন সাংবাদিক। আমি তাঁকে দেখে নেব। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করব।’ বোধকরি একেই বলে ‘চুরির ওপর সিনাজুরী’। কোথায় ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে তিনি মামলার আসামি হবেন, তা না, উল্টো তিনি দিচ্ছেন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি!
অপরদিকে গত ২০ মের আজকের পত্রিকার একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘ডিজিটাল চোরের গ্রাম ডুমাইন’। খবরে বলা হয়েছে, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন নামের গ্রামের অন্তত তিন শ যুবকের পেশা প্রতারণা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। খবরেই বলা হয়েছে, ওই প্রতারকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় সাবেক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান-মেম্বররা। যে কারণে পুলিশ তাঁদের দমন করতে পারে না। দেশের বড় বড় চুরির কাছে ডুমাইন গ্রামের ঘটনা অতিতুচ্ছ। তাই এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তবে চুরির উন্নতির কারণে গ্রামটি উদাহরণ হতে পারে। একেবারে সিঁধেল থেকে ডিজিটাল। এ ক্ষেত্রে ডুমাইন গ্রাম হতে পারে মডেল। খেয়াল করলে দেখা যাবে শুধু ডুমাইন নামের গ্রামটি নয়, সর্বত্র আজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চুরি হচ্ছে। এমনকি ব্যাংকের টাকাও হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
অনেক ছোটবেলার কথা। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম, আমাদের পাশের বাড়িতে এক ঘরে রাতে চোরে শিং (সিঁধ) দিয়েছে। শিং দেওয়া কাকে বলে তখনো পর্যন্ত জানি না। ভাবলাম, বোধ হয় চোরের মাথায় শিং থাকে, সেটাই ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলাম সেই বাড়ির দিকে। গিয়ে দেখলাম, দরজার সামনে মাটি খুঁড়ে একটি গর্ত করা হয়েছে, যেটা দিয়ে একজন মাঝারি সাইজের মানুষ সহজেই যাওয়া-আসা করতে পারে। বুঝলাম এই গর্ত খুঁড়ে ঘরে ঢুকে গেরস্থের মালসামানা হাতিয়ে নেওয়াকেই ‘শিং দেওয়া’ চুরি, মানে প্রমিত বাংলায় ‘সিঁধেল চুরি’ বলে। এই সিঁধেল চুরি যারা একসময় করত, তারা কিন্তু পেটের দায়েই করত। স্কুলজীবনে একটি গল্প পড়েছিলাম। দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন রাতে ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ খুট করে একটি শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখলেন, ঘরের এক কোণে লিকলিকে শরীরের একটি মানুষ দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে চুরি করতে এসেছে। লোকটি জানাল, সে পেশাদার চোর নয়। সে একজন দিনমজুর। গত তিন দিন সে কোনো কাজ পায়নি। ঘরে তার স্ত্রী ও পাঁচটি শিশুসন্তান। গত তিন দিন তারা কিছুই খেতে পায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সে চুরি করতে এ ঘরে ঢুকেছে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন এ কথা শুনে লোকটিকে কিছু অর্থ দিলেন দোকান করার জন্য। গল্পটি এখানেই শেষ। এরপর সে লোকটি আর কখনো চুরি করেছে কি না, আমরা জানি না। হয়তো দোকান করে তার সংসার চালানোর ব্যবস্থা হওয়ার পর সে আর কোনো দিকে চোখ দেয়নি।
কিন্তু আমরা আজ কী দেখি? খেয়ে-পরে শুধু ভালো নয়, খুব ভালো আছে, এমন ব্যক্তিরাও অসৎ উপার্জন, মানে চুরিতে প্রবৃত্ত হয়। আর সে কারণেই আমাদের সমাজের নানা স্তরে আজ চোরের উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এই চোরদের উৎপাত থেকে আমরা কবে রেহাই পাব তা বোধকরি সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে