অধ্যক্ষ-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৩
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৩

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে শিক্ষকদের হয়রানি, শিক্ষিকাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভর্তি-বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী, তাঁদের অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা।

এ নিয়ে ১৯ জানুয়ারি কলেজের ২৪ শিক্ষকের মধ্যে ২০ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত চার দফার একটি লিখিত অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনের কপি স্থানীয় সাংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অধ্যক্ষের ভর্তি-বাণিজ্যের বিষয়টি জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে তদন্ত করছে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অভিযোগ ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনের কোনো কাগজপত্র আমি পাইনি। আর একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তা তদন্ত করবে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড নয়। কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অর্থায়নে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজ ২০১৭ সালে সরকারি করা হয়। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন এমদাদুল হক। তাঁর যোগদানের পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে নগরীর শাকতলা এলাকার সুলেমান আহমেদ নামের একজন অভিভাবকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১৯ ডিসেম্বর কলেজ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি ১০ জানুয়ারি ৯ পাতার একটি প্রতিবেদন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করেন।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে (বিজ্ঞান) মোট ১৮ জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রকৃত ভর্তি কমিটি আড়াল করে বাংলা বিভাগের প্রভাষক ফাহিমা আক্তার, জীববিজ্ঞানের প্রদর্শক জগলুল হাসান পাটোয়ারী ও করণিক আলী মর্তুজাকে সদস্য দেখিয়ে একটি ভুয়া কমিটি উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অধ্যক্ষ ভুয়া দৈনিক হাজিরা শিট তৈরি করে তদন্ত কমিটির কাছে সরবরাহ করেন।

শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘কলেজে তদন্ত চলাকালে অধ্যক্ষের দাম্ভিকতাপূর্ণ রূঢ় ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ একজন সরকারি কর্মকর্তার আচরণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।’

কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক কাজী মো. ফারুক বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষ নানা কৌশলে স্কুল শাখায় অতিরিক্ত ভর্তি করান। অধ্যক্ষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াসহ কলেজটির সুনাম দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। অধ্যক্ষের কারসাজির কারণে আমরা ১৫ জন শিক্ষক দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছি। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পেয়ে আমরা কষ্টে আছি।’

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. আবদুছ সালাম বলেন, স্থানীয় একজন অভিভাবকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেয়। তদন্ত টিম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় সাংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত