পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে গতকাল শুক্রবার রাতেই বরিশাল নৌবন্দর থেকে ৯টি বিলাসবহুল লঞ্চ গন্তব্যে গেছে। এই অঞ্চল থেকে এ উপলক্ষে ৪৮টি লঞ্চ ছুটেছে পদ্মার পাড়ে। বিশাল এ নৌবহরে বিভাগের লক্ষাধিক যাত্রী শামিল হচ্ছেন। অবশ্য বরিশালেও দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজন চলছে।

বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাওয়া ৪৮টি লঞ্চের নোঙর করার ব্যবস্থা করা হয়েছে পদ্মা সেতুসংলগ্ন বাংলাবাজার ঘাটে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলার সর্বোচ্চ ১৪টি লঞ্চ যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোলা থেকে ৯টি লঞ্চ, পটুয়াখালী থেকে ৬টি, ঝালকাঠি থেকে ২টি, বরগুনা থেকে ১টি, পিরোজপুর থেকে ৪টি, শরীয়তপুর থেকে ৮টিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ৪টি লঞ্চে যাত্রীরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থলে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ নেবে।

জানা গেছে, বরিশাল থেকে পদ্মা পাড়ে গেছে এমভি কীর্তনখোলা-১০, এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১, এমভি সুন্দরবন-৮, এমভি পারাবত-১০, এমভি পারাবত-১২, এমভি সুরভী-৮, এমভি কুয়াকাটা-২, এমভি সুন্দরবন-১০ ও এমভি সুন্দরবন-৯। এ ছাড়া জেলার শিকারপুর সন্ধ্যা নদী থেকে এমভি মানামী, মুলাদী থেকে এমভি মানিক-৯, মেহেন্দীগঞ্জের ভাসানচর থেকে এমভি রাজহংস-১০, এমভি সম্রাট-৭ এবং উজিরপুর থেকে গেছে এমভি প্রিন্স আওলাদ-৪।

বরিশালের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং তাঁর ছেলে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বরিশাল নদীবন্দর থেকে ৯টি বিলাসবহুল লঞ্চ শুক্রবার রাতে ছেড়ে গেছে পদ্মা পাড়ে। এমভি সুন্দরবন-৮-এর আরোহী একাধিক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী জানান, এটি দেশের মানুষের বড় বিজয়। এ কাঙ্ক্ষিত দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। নেতা-কর্মীরা জানান, শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করে বিশ্বকে চমক দেখিয়ে দিলেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও লঞ্চমালিক নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লঞ্চে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরিশাল থেকে নৌপথে ঢাকায় যেতে যে সময় লাগে, সমাবেশে যেতেও একই সময় লাগবে। তাই ২৪ জুন রাতেই অধিকাংশ লঞ্চ বরিশাল থেকে পদ্মা পাড়ের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এ জন্য বরিশাল নদীবন্দরসহ সব ঘাটে লঞ্চগুলো নোঙর করা ছিল।

বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে এ অঞ্চলের মানুষ গভীর আগ্রহে আছে। বরিশাল থেকে ১৪টিসহ মোট ৪৮টি লঞ্চ যাচ্ছে। প্রতিটি এলাকা থেকে যেসব মানুষ যাবেন, সেখানে তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করবেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এদিকে পদ্মার পাড়ের মতো বরিশালেও নানা আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিন স্মরণীয় করে রাখতে আজ শনিবার সকাল ৯টায় নগরে শোভাযাত্রা বের হবে। এ ছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে লেজার শো ও আতশবাজি প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বরিশাল পুলিশ লাইনসে বেলুন ওড়ানো ও শোভাযাত্রা হবে আজ শনিবার। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ রুমি জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দুপুর ১২টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে ক্যাম্পাসে।