অরুণ কর্মকার
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বাংলাদেশে (প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবীতে) এর বিরূপ প্রভাব এখন সবার সামনে দৃশ্যমান। আবহাওয়ার যে রুক্ষ-রুদ্ররূপ আমরা দেখছি, তা যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে এমনও নয় যে এর আগে কখনো বৈশাখে আবহাওয়ার এই বিরূপতা দেখা যায়নি। অবশ্য বৈশাখের প্রথম দুই সপ্তাহে এবারের মতো এত কম কালবৈশাখী এবং বৃষ্টিপাত এর আগে কখনো হয়েছে, তা খুঁজে দেখার বিষয়। কারণ স্মরণকালের মধ্যে তেমন ঘটনা বিশেষ একটা ঘটেনি।
আবহাওয়ার এই রুক্ষতা ও বিরূপতা শুধু বাংলাদেশে কিংবা এই উপমহাদেশে হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তা তো নয়। পৃথিবীজুড়েই আবহাওয়া উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করেছে। সুতরাং এ যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই হচ্ছে, তা এখন সবাই মানে। বিশ্বখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী জেমস লাভলক কয়েক বছর আগেই বলে দিয়েছেন, অব্যাহতভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর পরিবেশ ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ পৌঁছে গেছে। এই পর্যায় থেকে পৃথিবীকে আর সুস্থ করে তোলা এবং বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ বিষয়েও এখন আর সন্দেহ পোষণ করা যায় না। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করার যে বৈশ্বিক উদ্যোগ, তা আড়াই-তিন দশক ধরে অশ্বডিম্ব প্রসব করে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ২৮টি ‘কপ’ (কনফারেন্স অব পার্টিস)-এর ফলাফলের কথা। এককথায় বললে, ওই ফলাফল হলো বিরাট একটি শূন্য। কিন্তু অব্যাহতভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি তো এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে আছে মানুষ। মানুষের কৃতকর্ম। আছে তার আয়েশি জীবনযাপনকেন্দ্রিক জৌলুশ। তার সভ্যতা এবং অসভ্যতা। ১৯০০ সালে শুরু হওয়া শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের গড়ে তোলা আজকের আধুনিক সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান উপকরণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বিস্তারের ঘটনাও ঘটে চলেছে তখন থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এই গ্যাস সৃষ্টির প্রধান অনুঘটক। আজকের অবস্থায় পৌঁছে জানা যাচ্ছে যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং এখনো হচ্ছে।
জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে কয়লা। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনকে (ইআইএ) উদ্ধৃত করে বিশ্বব্যাংকের ‘ডেটা ব্যাংক’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও কয়লার ব্যবহার বাড়ছিল সবচেয়ে দ্রুত। ওই সময় পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন হতো কয়লা পুড়িয়ে। এখন ২০২৪ সাল পর্যন্ত কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন তখনকার চেয়ে কমেছে বলে কোনো তথ্য কোথাও নেই। পৃথিবীতে যত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার শতকরা ৭৩ ভাগের বেশি করছে মাত্র চারটি দেশ। চীন (মোট বৈশ্বিক ব্যবহারের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ), ভারত (১১ দশমিক ৩ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (৮ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জার্মানি (৩ শতাংশ)। এর পরেই অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার।
বলা বাহুল্য যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার আরও বেড়ে চলেছে। কারণ উল্লিখিত দেশগুলো যেমন কয়লার ব্যবহার কমায়নি, তেমনি বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার শুরু করেছে। কয়লার পরেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি হচ্ছে ফার্নেস তেল ও ডিজেল। এই দুটি জ্বালানিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এক গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য শতকরা ৭০ ভাগ দায় হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের। কিন্তু বিদ্যুৎ ছাড়া তো আধুনিক সভ্যতা অচল হয়ে পড়বে। তাই এ খাতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানির (ক্লিন এনার্জি) ব্যবহার বাড়ানো বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু হচ্ছেও। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এ ক্ষেত্রে রাজনীতি হচ্ছে, বিশ্ব মোড়লেরা নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালেও কয়লার মতো ‘ডার্টি ফুয়েল’-এর ব্যবহার কমাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বলছে ডার্টি ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে। কিন্তু নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ব্যয় এখনো অনেক বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো অনেক দেশই রয়েছে, যারা কয়লা ও তরল জ্বালানি ব্যবহার করে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার প্রভাব অতিনগণ্য, যা কোনো গণনার মধ্যে আসে না; অর্থাৎ আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছি এবং জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তার সম্পূর্ণ দায় বিশ্ব মোড়লদের। এ জন্য তারা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েও তা দিচ্ছে না। মোড়লদের এসব অনৈতিক রাজনীতিই পৃথিবীকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
বাংলাদেশ এখনো তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ করছে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালিয়ে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু আমাদেরও তো উন্নয়ন দরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি দরকার। বিশ্ব মোড়লদের সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি আমাদের যে পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে জীবন ধারণের জন্যও বেশি করে বিদ্যুৎ দরকার। তাই আমাদের পক্ষে কয়লা এবং তরল জীবাশ্ম জ্বালানি একেবারে পরিহার করা সম্ভব নয়। তবে নবায়নযোগ্য এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। যদিও প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে তার অগ্রগতি যথেষ্ট কম। সরকারের উচিত এদিকে আরও বেশি নজর দেওয়া।
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবেশ বিধ্বংসী ও দুর্নীতিপ্রবণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে আমরা নদী-খাল-বিল-ঝিল দূষিত ও ধ্বংস করে চলেছি। আমরা নির্বিচারে বন-বৃক্ষ-পাহাড় নিধন করে চলেছি। মাটি, পানি ও বায়ু—পরিবেশের এই তিনটি প্রধান ও মৌলিক উপকরণ মারাত্মকভাবে দূষিত করে চলেছি। ভূগর্ভের পানির অপচয় এবং দূষণের ক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমরা আমাদের সামর্থ্য হারাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংকটাপন্ন করে ফেলেছি। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা আমাদের অস্তিত্বকে বিপদাপন্ন করে ফেলেছে। আমাদের যেমন বিদ্যুৎ দরকার, উন্নয়ন দরকার, তেমনি দরকার একটি সুস্থ, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশও। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু নিজেদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ করে উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমরা মোকাবিলা করতে পারি। সেটাই আমাদের জন্য টেকসই পন্থা—এ কথা আমাদের বুঝতে হবে।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বাংলাদেশে (প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবীতে) এর বিরূপ প্রভাব এখন সবার সামনে দৃশ্যমান। আবহাওয়ার যে রুক্ষ-রুদ্ররূপ আমরা দেখছি, তা যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে এমনও নয় যে এর আগে কখনো বৈশাখে আবহাওয়ার এই বিরূপতা দেখা যায়নি। অবশ্য বৈশাখের প্রথম দুই সপ্তাহে এবারের মতো এত কম কালবৈশাখী এবং বৃষ্টিপাত এর আগে কখনো হয়েছে, তা খুঁজে দেখার বিষয়। কারণ স্মরণকালের মধ্যে তেমন ঘটনা বিশেষ একটা ঘটেনি।
আবহাওয়ার এই রুক্ষতা ও বিরূপতা শুধু বাংলাদেশে কিংবা এই উপমহাদেশে হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তা তো নয়। পৃথিবীজুড়েই আবহাওয়া উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করেছে। সুতরাং এ যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই হচ্ছে, তা এখন সবাই মানে। বিশ্বখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী জেমস লাভলক কয়েক বছর আগেই বলে দিয়েছেন, অব্যাহতভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর পরিবেশ ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ পৌঁছে গেছে। এই পর্যায় থেকে পৃথিবীকে আর সুস্থ করে তোলা এবং বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ বিষয়েও এখন আর সন্দেহ পোষণ করা যায় না। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করার যে বৈশ্বিক উদ্যোগ, তা আড়াই-তিন দশক ধরে অশ্বডিম্ব প্রসব করে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ২৮টি ‘কপ’ (কনফারেন্স অব পার্টিস)-এর ফলাফলের কথা। এককথায় বললে, ওই ফলাফল হলো বিরাট একটি শূন্য। কিন্তু অব্যাহতভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি তো এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে আছে মানুষ। মানুষের কৃতকর্ম। আছে তার আয়েশি জীবনযাপনকেন্দ্রিক জৌলুশ। তার সভ্যতা এবং অসভ্যতা। ১৯০০ সালে শুরু হওয়া শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের গড়ে তোলা আজকের আধুনিক সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান উপকরণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বিস্তারের ঘটনাও ঘটে চলেছে তখন থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এই গ্যাস সৃষ্টির প্রধান অনুঘটক। আজকের অবস্থায় পৌঁছে জানা যাচ্ছে যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং এখনো হচ্ছে।
জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে কয়লা। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনকে (ইআইএ) উদ্ধৃত করে বিশ্বব্যাংকের ‘ডেটা ব্যাংক’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও কয়লার ব্যবহার বাড়ছিল সবচেয়ে দ্রুত। ওই সময় পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন হতো কয়লা পুড়িয়ে। এখন ২০২৪ সাল পর্যন্ত কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন তখনকার চেয়ে কমেছে বলে কোনো তথ্য কোথাও নেই। পৃথিবীতে যত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার শতকরা ৭৩ ভাগের বেশি করছে মাত্র চারটি দেশ। চীন (মোট বৈশ্বিক ব্যবহারের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ), ভারত (১১ দশমিক ৩ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (৮ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জার্মানি (৩ শতাংশ)। এর পরেই অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার।
বলা বাহুল্য যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার আরও বেড়ে চলেছে। কারণ উল্লিখিত দেশগুলো যেমন কয়লার ব্যবহার কমায়নি, তেমনি বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার শুরু করেছে। কয়লার পরেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি হচ্ছে ফার্নেস তেল ও ডিজেল। এই দুটি জ্বালানিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এক গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য শতকরা ৭০ ভাগ দায় হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের। কিন্তু বিদ্যুৎ ছাড়া তো আধুনিক সভ্যতা অচল হয়ে পড়বে। তাই এ খাতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানির (ক্লিন এনার্জি) ব্যবহার বাড়ানো বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু হচ্ছেও। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এ ক্ষেত্রে রাজনীতি হচ্ছে, বিশ্ব মোড়লেরা নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালেও কয়লার মতো ‘ডার্টি ফুয়েল’-এর ব্যবহার কমাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বলছে ডার্টি ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে। কিন্তু নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ব্যয় এখনো অনেক বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো অনেক দেশই রয়েছে, যারা কয়লা ও তরল জ্বালানি ব্যবহার করে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার প্রভাব অতিনগণ্য, যা কোনো গণনার মধ্যে আসে না; অর্থাৎ আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছি এবং জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তার সম্পূর্ণ দায় বিশ্ব মোড়লদের। এ জন্য তারা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েও তা দিচ্ছে না। মোড়লদের এসব অনৈতিক রাজনীতিই পৃথিবীকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
বাংলাদেশ এখনো তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ করছে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালিয়ে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু আমাদেরও তো উন্নয়ন দরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি দরকার। বিশ্ব মোড়লদের সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি আমাদের যে পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে জীবন ধারণের জন্যও বেশি করে বিদ্যুৎ দরকার। তাই আমাদের পক্ষে কয়লা এবং তরল জীবাশ্ম জ্বালানি একেবারে পরিহার করা সম্ভব নয়। তবে নবায়নযোগ্য এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। যদিও প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে তার অগ্রগতি যথেষ্ট কম। সরকারের উচিত এদিকে আরও বেশি নজর দেওয়া।
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবেশ বিধ্বংসী ও দুর্নীতিপ্রবণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে আমরা নদী-খাল-বিল-ঝিল দূষিত ও ধ্বংস করে চলেছি। আমরা নির্বিচারে বন-বৃক্ষ-পাহাড় নিধন করে চলেছি। মাটি, পানি ও বায়ু—পরিবেশের এই তিনটি প্রধান ও মৌলিক উপকরণ মারাত্মকভাবে দূষিত করে চলেছি। ভূগর্ভের পানির অপচয় এবং দূষণের ক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমরা আমাদের সামর্থ্য হারাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংকটাপন্ন করে ফেলেছি। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা আমাদের অস্তিত্বকে বিপদাপন্ন করে ফেলেছে। আমাদের যেমন বিদ্যুৎ দরকার, উন্নয়ন দরকার, তেমনি দরকার একটি সুস্থ, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশও। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু নিজেদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ করে উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমরা মোকাবিলা করতে পারি। সেটাই আমাদের জন্য টেকসই পন্থা—এ কথা আমাদের বুঝতে হবে।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে