টিকে থাকার লড়াইয়ে মতির হাতিয়ার গান

রকিব হাসান নয়ন, মেলান্দহ (জামালপুর)
Thumbnail image

বাজছে একতারা। আর সঙ্গে ভেসে আসছে একটি কণ্ঠ। গাইছেন, ‘কেন যে মওলা আমায় বাউলা বানাইল’। কাছে যেতেই দেখা গেল বেশ কিছু মানুষের জটলা। সবাই ঘিরে আছেন ওই শিল্পীকে। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মাথায় পাগড়ি পরা শিল্পীর গান শেষ হতেই করতালি। অনেকে দেন বকশিশ।

এ দৃশ্য জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মানকি বাজারে, গত শুক্রবার বিকেলের। শিল্পীর নাম মতিউর রহমান খান। মতি বাউল নামেই পরিচিত তিনি। বয়স ৬৩ বছর। জন্ম উপজেলার রায়ের বাকাই গ্রামে।

মতি বাউল যে শুধু এলাকাতেই পরিচিত তা নয়, জেলাজুড়েই রয়েছে পরিচিতি। জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ডাকও পান। তবে এখন বয়স বেড়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে অনেক অসুখ। তাই প্রতিদিন একতারা হাতে বের হতেও পারেন না। বের না হতে পারলে চুলায় হাঁড়িও ওঠে না। 

মানকি বাজারে বসেই কথাগুলো বলছিলেন মতি বাউল। হিসাব করে দেখা গেল, গানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের। বললেন, বয়স তখন ১২ বছর। বাবা অনেক কষ্ট করে সেই সময় একটা রেডিও কিনেছিলেন। রেডিওতে গান শুনতেন সব সময়। এর মধ্যেই একদিন পালাগানের আসরে দেখা হয় চাঁন বয়াতির সঙ্গে। এরপর থেকেই বয়াতির সঙ্গে বিভিন্ন গানের আসরে যেতেন। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন চাঁন বয়াতির শিষ্য। হাতে তুলে নেন একতারা। শুরু করেন গান গাওয়া। কিশোর মতিউর হয়ে ওঠেন বাউল মতি।

মতি বাউল বলেন, ‘কিশোর বয়স থেকেই গান শুরু করেছিলাম। এখনো গান গেয়ে যাচ্ছি। সংসার আর জীবনে গান ছাড়া নেই কিছুই। যেভাবে চলছে এভাবেই হয়তো চলবে। তবে লোকজন এখন আর গান শুনে পয়সা দেয় না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যদি প্রতি মাসে সামান্য কিছু অর্থের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে একটু ভালো থাকতাম।’

মতি বাউলের সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে পড়াশোনা করছে নবম শ্রেণিতে। বাউল এখন ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। না, ছেলেকে বাউল বানাতে চান না, ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আর নিজে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গান গেয়ে যেতে চান। কেননা গান ছাড়া কিছু নেই তাঁর, বলতে বলতেই গান ধরেন—‘সে জানে আর আমি জানি, আর কে জানবে মনের কথা’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত