মৃৎশিল্পের হাল নারীর হাতে

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ১৭
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ১৪

সিরামিকস, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, প্লাস্টিক পণ্যের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। তবে গাজীপুরের কাপাসিয়ার কড়িহাতা ইউনিয়নের কুমারপাড়ায় মৃৎশিল্প টিকিয়ে রেখেছেন নারীরা। এ কাজে পুরুষদের অনীহা ও অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় হাল ধরেছেন নারীরাই।

মাটির নানা পণ্য তৈরি থেকে শুরু করে বিক্রি, সব কাজই করছেন নারীরা। আগে এ কাজে তাঁরা পুরুষদের সাহায্য করতেন। এখন সহযোগী নয়, তাঁরাই মূল ভূমিকায়। কড়িহাতার কুমারপাড়ায় প্রায় ৪০ পরিবারের নারীরা টিকিয়ে রেখেছেন মৃৎশিল্প।

কুমারপাড়ার রিনা রানী পাল বলেন, ‘মা-বাবার কাছ থেকে শিখে ৩০ বছর এই কাজ করছি। ঢাকনা, পাখির বাসা, পিঠার সরা, কলস, টাকা জমানোর ব্যাংকসহ বিভিন্ন জিনিস বানাই। এই পেশায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা কাজ করতেন। আয়-রোজগার কমে যাওয়ার কারণে তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। সংসারের অন্যান্য কাজ সেরে অলস সময় বসে না থেকে আমাদের বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি।’

রিনা বলেন, ‘মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে শুকানোর পর রং দিয়ে বাড়ির খালি জায়গায় সাজিয়ে রাখি। বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে দেখে পছন্দ হলে তা কিনে নিয়ে যান। এসব জিনিস ৬ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা পর্যন্ত পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারি।’

এ কুমার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে এসব জিনিসের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এখন এসব জিনিস প্লাস্টিকের তৈরি হচ্ছে। যে কারণে মাটির জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক কমে গেছে। মাটির জিনিস কেউ কিনতে চান না।’

দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রীতি পাল বাড়ির উঠোনে খেলনা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করছিল। এ কাজ কীভাবে শিখেছে, জানতে চাইলে প্রীতি বলে, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো বিশেষ করে বাচ্চাদের খেলনা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করি। এই কাজ আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য।’

স্থানীয় মনোহরদী বাজারে মৃৎশিল্পের পণ্য পাইকারি বিক্রি করেন সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘মাটির তৈরি ব্যাংক কিনতে এসেছি। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক রকম জিনিস তাঁরা তৈরি করতেন, চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এখন আর বানান না। মানুষ আগের মতো আর এগুলো কিনতে চান না। সবাই এখন প্লাস্টিকের দিকে ঝুঁকেছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত