জাহীদ রেজা নূর
নিউইয়র্কের পারসন্স বুলভার্ড দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি অ্যাপার্টমেন্ট হাউস দেখিয়ে আমার নিউইয়র্কপ্রবাসী ভাই বলেছিলেন, ‘এইখানে কবি শহীদ কাদরী থাকতেন।’
সদাজাগ্রত নিউইয়র্ক শহরের এ এলাকাটিতে বহু বাঙালির বাস। দোকানগুলোর নাম বাংলা। বাঙালিদের নিয়মিত আড্ডা বসে এখানে। আমি সেই অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম, ইশ্! যদি বছর দুয়েক আগে নিউইয়র্কে আসতে পারতাম, তাহলে কবিকে দেখতে পেতাম।
২০১৮ সালের শীতের সকালে মৃদু তুষারে ঢাকা পথে চলতে গিয়ে কবির কথা ভেবেছি। সেই যে নির্বাসনে গেলেন কবি, দেশে ফিরলেন না আর! অথচ কবিতার পাশাপাশি তাঁর জীবনচর্চা নিয়ে ভেবেছি কত! শহীদ কাদরী নামটা শুনলেই মনে উঠে এসেছে একটি শব্দ—আড্ডা।আড্ডা ছাড়া শহীদ কাদরীকে কল্পনাই করা যায় না। ঢাকায় যেমন, বোস্টন বা নিউইয়র্কেও চলেছে তাঁর আড্ডার রথ।
২.আড্ডা বাঙালির জীবনের এক বিশাল অনুষঙ্গ। প্রতিটি আড্ডায়ই একজন প্রাণপুরুষ থাকেন। শিক্ষায়-জ্ঞানে আলো ছড়ান যিনি, তিনি হয়ে ওঠেন আড্ডার মধ্যমণি। আর তাঁর কথাবার্তায় থাকতে হয় হিউমার। একটা সার্থক আড্ডার জন্য চাই প্রস্তুতি। আড্ডায় কথারা তো আর আলোচনা সভার মতো পূর্বনির্ধারিত নয়, তাই কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, সেটা আগে থেকে জানা থাকে না। শহীদ কাদরী এই ‘কোথাকার জল’কে নিজের পথে স্রোতের মতো বইয়ে দিতে পারতেন। আর তাতে বন্ধুজনেরা ভেসে বেড়াতে পছন্দ করতেন। আড্ডার মেজাজ তৈরি করার ক্ষমতা ছিল শহীদ কাদরীর।
৩. প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন একবার বললেন, ‘আমি শহীদ কাদরীর একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ক্যাসেট
থেকে তুলে দিবি?’
আমার মন ছেয়ে গেল রোমাঞ্চে। শহীদ কাদরীর কণ্ঠ শুনব! হোক না সেটা সুমনা শারমীনের নেওয়া সাক্ষাৎকার, হোক না তাতে আমার নাম থাকবে না, কিন্তু আমি যখন তাঁর বলা শব্দগুলো কম্পিউটারের মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে লিখব, তখন আমারও কি প্রাপ্তি কিছু থাকবে না? মূলত সেই ক্যাসেটেই শহীদ কাদরীর উদাত্ত হাসি, দেশ ছাড়ার কারণ, অন্য কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তাঁর কবিতাগুলো আবার পড়ার চেষ্টা করি। তাঁকে নিয়ে যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের লেখার সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হই।
৪. শহীদ কাদরী আমার মনকে টেনে নিয়েছিলেন আড্ডাবাজ হিসেবে তাঁর অমূল্য উপস্থিতির কারণে। লোভ হয়, ইশ্! যদি এ রকম কোনো এক আড্ডায় উপস্থিত থাকতে পারতাম! বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর আড্ডাগুলো ছিল অন্তহীন। কিছুক্ষণের বিরতি দিয়ে আড্ডাগুলো চলত দিনের পর দিন।
সেই আড্ডার সময় নিয়ে বন্ধুদের অনেকেই লিখেছেন। সেই লেখাগুলো এক করা হলে শহীদ কাদরীর আড্ডার প্যাটার্নটা বের করা যায়।
শহীদ কাদরীর ভোর হতো দুপুর ১২টার দিকে। এরপর মোটামুটি ঠিক ছিল কীভাবে দিন এবং রাতটা শেষ হবে। তবে ঢাকা শহরের অগুনতি ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান অপেক্ষা করে থাকত, কখন আসবেন কবি। চায়ের পেয়ালাগুলো দোকানির হাত থেকে কাদরীর হাতে আসার যেন ফুরসত পেত না। মনে হতো একটা কাপই বুঝি তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কত কাপ চা ধ্বংস হতো, সে হিসাব করবে কে?
ভরদুপুরে সিদ্দিকবাজারের বাড়িতে যখন শহীদ কাদরীর ভোর হতো, তখন কোনোভাবে চোখে-মুখে জলের ছিটে দিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়তেন আড্ডার খোঁজে। ওয়ারীর কোনো একখানে আড্ডা দিতেন দুপুরবেলায়। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া সেরে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ছুটতেন নতুন কোনো আড্ডার খোঁজে। এবারের গন্তব্য বাংলাবাজার। হ্যাঁ, বিউটি বোর্ডিংয়ে কিংবা গোবিন্দ ধামে তখন শহীদ কাদরীর সরব উপস্থিতি। সেখানে আড্ডা চলত রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। এরপর কি তিনি সুবোধ বালকের মতো ঘরে ফিরে আসতেন?
আরে না! রাত ১২টার পর আড্ডা জমত ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের চায়ের স্টলে। সে আড্ডা ভাঙত ভোর ৫টার দিকে। এরপর কেবল বাড়ির পথে রওনা হতেন। ঘুম এবং দুপুর ১২টাকে ভোর বানিয়ে আবার নতুন দিন শুরু করা। আড্ডাস্থল হিসেবে ‘রেকস’-এর নামও এসেছিল। যৌবনের শহীদ কাদরী বলতে এই রুটিনে এগিয়ে চলা একজন কবির সাক্ষাৎ পাই আমরা।
৫. কম লিখেছেন শহীদ কাদরী। কিন্তু কবিতাগুলো একজন খাঁটি কবির লেখা। বিংশ শতাব্দীর শহুরে মানুষের রুদ্ধশ্বাস নাগরিক জীবন নিপুণভাবে তুলে এনেছেন তিনি তাঁর কাব্যে। কবিতাগুলো ঝকঝকে—যেন কোথাও আলস্য নিয়ে দাঁড়ায় না, এগিয়ে যেতে থাকে তীব্র গতিতে। প্রেমের কবিতাগুলোও যেন পূর্ণ নতুনত্বের সম্ভারে।
একটি ছোট্ট উদাহরণ: ‘তোমার নাম লেখার জন্য আমি/ নিসর্গের কাছ থেকে ধার করছি বর্ণমালা/ আগুন, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ ঝড়—আর/ সভ্যতার কাছ থেকে—একটি ছুরি।’ (এই সব অক্ষর)। কিংবা, ‘ভয় নেই/ আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চপাস্ট করে চলে যাবে/ এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।; (তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)।
‘সঙ্গতি’ কবিতাটি বারবার কেন পড়ি, জানি না, কিন্তু এই পঙ্ক্তিগুলোর কাছ থেকে কি সরে আসা যায়? ‘ব্যারাকে ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ/ ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীল গাই/ গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ/ মেয়েলি গানের—তোমরা দুজন একঘরে পাবে ঠাঁই।’ এখানে তৃতীয় পঙ্ক্তিতে এসে ছন্দ ভাঙার এই দোলা উপভোগ করতে ভালো লাগে।
৬. শহীদ কাদরীর প্রতি আমার পক্ষপাতিত্বের কথাটা বলি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু কবিতা লেখা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো কবিতা কালোত্তীর্ণ হবে। সেই কবিতাগুলোর মধ্যে শামসুর রাহমানের লেখা ‘কাক’ কবিতাটি আমার সবচেয়ে প্রিয়। চার পঙ্ক্তির ছোট্ট একটি কবিতা, যুদ্ধ নিয়ে একটি শব্দও নেই, অথচ তা যেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো জেনোসাইডকে মূর্ত করে তোলে। তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে, কিন্তু শহীদ কাদরীর ‘হন্তারকদের প্রতি’ কবিতাটিকে মনে হয় যেন ১৫ আগস্টের সংহত দলিল। কবিতাটি তুলে দিতে চাই পাঠকের জন্য:
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোনো উপমায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে না
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিলো,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনোদিন।
৭. ‘আমার চুম্বনগুলি পৌঁছে দাও’ ছিল কবির শেষ কবিতার বই। এ বইটি নিয়ে দীর্ঘ একটি স্বতন্ত্র লেখা লিখতে হবে। এ বইয়ে এমন কয়েকটি কবিতা রয়েছে, যাতে ওই সময়ের রাজনীতি বিষয়ে কবির মনোভাবের প্রকাশ রয়েছে; বিশেষ করে ‘বিপ্লব’, ‘তুমি’, ‘একে বলতে পারো একুশের কবিতা’, ‘তাই এই দীর্ঘ পরবাস’ কবিতাগুলোর বিশ্লেষণ করা দরকার।
২০১৬ সালের এই দিনটিতেই চলে গেছেন কবি। কিডনি বিকল হয়েছিল অনেক আগেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরও কিছু অসুখ। তাই ‘কোনো নির্বাসনই কাম্য নয় আর’-এর কবি চলে গেলেন বটে, কিন্তু নির্বাসিত হলেন না। এই তো রয়েছেন আমাদের মাঝে তাঁর সৃষ্টি নিয়ে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নিউইয়র্কের পারসন্স বুলভার্ড দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি অ্যাপার্টমেন্ট হাউস দেখিয়ে আমার নিউইয়র্কপ্রবাসী ভাই বলেছিলেন, ‘এইখানে কবি শহীদ কাদরী থাকতেন।’
সদাজাগ্রত নিউইয়র্ক শহরের এ এলাকাটিতে বহু বাঙালির বাস। দোকানগুলোর নাম বাংলা। বাঙালিদের নিয়মিত আড্ডা বসে এখানে। আমি সেই অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম, ইশ্! যদি বছর দুয়েক আগে নিউইয়র্কে আসতে পারতাম, তাহলে কবিকে দেখতে পেতাম।
২০১৮ সালের শীতের সকালে মৃদু তুষারে ঢাকা পথে চলতে গিয়ে কবির কথা ভেবেছি। সেই যে নির্বাসনে গেলেন কবি, দেশে ফিরলেন না আর! অথচ কবিতার পাশাপাশি তাঁর জীবনচর্চা নিয়ে ভেবেছি কত! শহীদ কাদরী নামটা শুনলেই মনে উঠে এসেছে একটি শব্দ—আড্ডা।আড্ডা ছাড়া শহীদ কাদরীকে কল্পনাই করা যায় না। ঢাকায় যেমন, বোস্টন বা নিউইয়র্কেও চলেছে তাঁর আড্ডার রথ।
২.আড্ডা বাঙালির জীবনের এক বিশাল অনুষঙ্গ। প্রতিটি আড্ডায়ই একজন প্রাণপুরুষ থাকেন। শিক্ষায়-জ্ঞানে আলো ছড়ান যিনি, তিনি হয়ে ওঠেন আড্ডার মধ্যমণি। আর তাঁর কথাবার্তায় থাকতে হয় হিউমার। একটা সার্থক আড্ডার জন্য চাই প্রস্তুতি। আড্ডায় কথারা তো আর আলোচনা সভার মতো পূর্বনির্ধারিত নয়, তাই কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, সেটা আগে থেকে জানা থাকে না। শহীদ কাদরী এই ‘কোথাকার জল’কে নিজের পথে স্রোতের মতো বইয়ে দিতে পারতেন। আর তাতে বন্ধুজনেরা ভেসে বেড়াতে পছন্দ করতেন। আড্ডার মেজাজ তৈরি করার ক্ষমতা ছিল শহীদ কাদরীর।
৩. প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন একবার বললেন, ‘আমি শহীদ কাদরীর একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ক্যাসেট
থেকে তুলে দিবি?’
আমার মন ছেয়ে গেল রোমাঞ্চে। শহীদ কাদরীর কণ্ঠ শুনব! হোক না সেটা সুমনা শারমীনের নেওয়া সাক্ষাৎকার, হোক না তাতে আমার নাম থাকবে না, কিন্তু আমি যখন তাঁর বলা শব্দগুলো কম্পিউটারের মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে লিখব, তখন আমারও কি প্রাপ্তি কিছু থাকবে না? মূলত সেই ক্যাসেটেই শহীদ কাদরীর উদাত্ত হাসি, দেশ ছাড়ার কারণ, অন্য কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তাঁর কবিতাগুলো আবার পড়ার চেষ্টা করি। তাঁকে নিয়ে যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের লেখার সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হই।
৪. শহীদ কাদরী আমার মনকে টেনে নিয়েছিলেন আড্ডাবাজ হিসেবে তাঁর অমূল্য উপস্থিতির কারণে। লোভ হয়, ইশ্! যদি এ রকম কোনো এক আড্ডায় উপস্থিত থাকতে পারতাম! বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর আড্ডাগুলো ছিল অন্তহীন। কিছুক্ষণের বিরতি দিয়ে আড্ডাগুলো চলত দিনের পর দিন।
সেই আড্ডার সময় নিয়ে বন্ধুদের অনেকেই লিখেছেন। সেই লেখাগুলো এক করা হলে শহীদ কাদরীর আড্ডার প্যাটার্নটা বের করা যায়।
শহীদ কাদরীর ভোর হতো দুপুর ১২টার দিকে। এরপর মোটামুটি ঠিক ছিল কীভাবে দিন এবং রাতটা শেষ হবে। তবে ঢাকা শহরের অগুনতি ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান অপেক্ষা করে থাকত, কখন আসবেন কবি। চায়ের পেয়ালাগুলো দোকানির হাত থেকে কাদরীর হাতে আসার যেন ফুরসত পেত না। মনে হতো একটা কাপই বুঝি তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কত কাপ চা ধ্বংস হতো, সে হিসাব করবে কে?
ভরদুপুরে সিদ্দিকবাজারের বাড়িতে যখন শহীদ কাদরীর ভোর হতো, তখন কোনোভাবে চোখে-মুখে জলের ছিটে দিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়তেন আড্ডার খোঁজে। ওয়ারীর কোনো একখানে আড্ডা দিতেন দুপুরবেলায়। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া সেরে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ছুটতেন নতুন কোনো আড্ডার খোঁজে। এবারের গন্তব্য বাংলাবাজার। হ্যাঁ, বিউটি বোর্ডিংয়ে কিংবা গোবিন্দ ধামে তখন শহীদ কাদরীর সরব উপস্থিতি। সেখানে আড্ডা চলত রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। এরপর কি তিনি সুবোধ বালকের মতো ঘরে ফিরে আসতেন?
আরে না! রাত ১২টার পর আড্ডা জমত ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের চায়ের স্টলে। সে আড্ডা ভাঙত ভোর ৫টার দিকে। এরপর কেবল বাড়ির পথে রওনা হতেন। ঘুম এবং দুপুর ১২টাকে ভোর বানিয়ে আবার নতুন দিন শুরু করা। আড্ডাস্থল হিসেবে ‘রেকস’-এর নামও এসেছিল। যৌবনের শহীদ কাদরী বলতে এই রুটিনে এগিয়ে চলা একজন কবির সাক্ষাৎ পাই আমরা।
৫. কম লিখেছেন শহীদ কাদরী। কিন্তু কবিতাগুলো একজন খাঁটি কবির লেখা। বিংশ শতাব্দীর শহুরে মানুষের রুদ্ধশ্বাস নাগরিক জীবন নিপুণভাবে তুলে এনেছেন তিনি তাঁর কাব্যে। কবিতাগুলো ঝকঝকে—যেন কোথাও আলস্য নিয়ে দাঁড়ায় না, এগিয়ে যেতে থাকে তীব্র গতিতে। প্রেমের কবিতাগুলোও যেন পূর্ণ নতুনত্বের সম্ভারে।
একটি ছোট্ট উদাহরণ: ‘তোমার নাম লেখার জন্য আমি/ নিসর্গের কাছ থেকে ধার করছি বর্ণমালা/ আগুন, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ ঝড়—আর/ সভ্যতার কাছ থেকে—একটি ছুরি।’ (এই সব অক্ষর)। কিংবা, ‘ভয় নেই/ আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চপাস্ট করে চলে যাবে/ এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।; (তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা)।
‘সঙ্গতি’ কবিতাটি বারবার কেন পড়ি, জানি না, কিন্তু এই পঙ্ক্তিগুলোর কাছ থেকে কি সরে আসা যায়? ‘ব্যারাকে ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ/ ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীল গাই/ গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ/ মেয়েলি গানের—তোমরা দুজন একঘরে পাবে ঠাঁই।’ এখানে তৃতীয় পঙ্ক্তিতে এসে ছন্দ ভাঙার এই দোলা উপভোগ করতে ভালো লাগে।
৬. শহীদ কাদরীর প্রতি আমার পক্ষপাতিত্বের কথাটা বলি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু কবিতা লেখা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো কবিতা কালোত্তীর্ণ হবে। সেই কবিতাগুলোর মধ্যে শামসুর রাহমানের লেখা ‘কাক’ কবিতাটি আমার সবচেয়ে প্রিয়। চার পঙ্ক্তির ছোট্ট একটি কবিতা, যুদ্ধ নিয়ে একটি শব্দও নেই, অথচ তা যেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো জেনোসাইডকে মূর্ত করে তোলে। তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে, কিন্তু শহীদ কাদরীর ‘হন্তারকদের প্রতি’ কবিতাটিকে মনে হয় যেন ১৫ আগস্টের সংহত দলিল। কবিতাটি তুলে দিতে চাই পাঠকের জন্য:
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোনো উপমায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে না
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিলো,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনোদিন।
৭. ‘আমার চুম্বনগুলি পৌঁছে দাও’ ছিল কবির শেষ কবিতার বই। এ বইটি নিয়ে দীর্ঘ একটি স্বতন্ত্র লেখা লিখতে হবে। এ বইয়ে এমন কয়েকটি কবিতা রয়েছে, যাতে ওই সময়ের রাজনীতি বিষয়ে কবির মনোভাবের প্রকাশ রয়েছে; বিশেষ করে ‘বিপ্লব’, ‘তুমি’, ‘একে বলতে পারো একুশের কবিতা’, ‘তাই এই দীর্ঘ পরবাস’ কবিতাগুলোর বিশ্লেষণ করা দরকার।
২০১৬ সালের এই দিনটিতেই চলে গেছেন কবি। কিডনি বিকল হয়েছিল অনেক আগেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরও কিছু অসুখ। তাই ‘কোনো নির্বাসনই কাম্য নয় আর’-এর কবি চলে গেলেন বটে, কিন্তু নির্বাসিত হলেন না। এই তো রয়েছেন আমাদের মাঝে তাঁর সৃষ্টি নিয়ে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে