Ajker Patrika

কেসিসির বিতর্কিত উদ্যোগ ও কাদের সিদ্দিকীর নারীবিদ্বেষী অবস্থান

কেসিসির বিতর্কিত উদ্যোগ ও কাদের সিদ্দিকীর নারীবিদ্বেষী অবস্থান

খুলনা সিটি করপোরেশন নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তনের একটি উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক পরে জানিয়েছেন, এই নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।

গত ৩০ এপ্রিল খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ১৯তম সাধারণ সভায় আমন্ত্রিত সদস্যদের কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত যে চিঠি পাঠানো হয়, তাতে বিবিধসহ ১৪টি আলোচ্যসূচি উল্লেখ করা হয়েছিল। ৫ নম্বর সূচিতে ছিল, নগরীর শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর করা প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

এ তথ্যটি জানাজানি হলে কয়েক দিন ধরে খুলনা মহানগরীর আলোচিত বিষয় ছিল শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন। এ নিয়ে দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনা হচ্ছিল।

নগরীর ভৈরব নদের তীরে ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো জোড়া শিবমন্দির। এই মন্দিরে যেতে মানুষ রাস্তার যে মোড়টি ব্যবহার করে, সেটিই শিববাড়ী মোড় হিসেবে পরিচিত; অর্থাৎ এই নামকরণের ইতিহাস প্রাচীন। কয়েক বছর আগেও স্থানটির নাম পরিবর্তন করে বাবরী চত্বর করার দাবি জানিয়েছিল একটি পক্ষ, কিন্তু আরেক পক্ষের বিরোধিতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এবার খোদ কেসিসিই নাম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আছে, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘একটা জায়গার নামের সঙ্গে থাকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ছাড়া শিববাড়ী নামটির সঙ্গে স্পর্শকাতরতা ও ধর্মীয় অনুভূতিও রয়েছে। তাই একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক হবে না।’

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। তাই এ ধরনের অ্যাজেন্ডা তোলার আগে আমাদের সঙ্গে একটু কথা বললে ভালো হতো। আগামী ১২ জুন কেসিসি নির্বাচন। এখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের আড়াই থেকে ৩ লাখ মানুষ রয়েছে। ফলে মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’

সম্ভবত এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণেই খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নাম পরিবর্তন না করার কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত ভালো। তবে প্রশ্ন হলো, যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারের এই দুর্বুদ্ধি কার বা কাদের মাথা থেকে বের হয়? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বড় কোনো স্থাপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দিলেই তিনি বড় হবেন বা কোনো প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত না থাকলেই তিনি ছোট হবেন—এমনটা যাঁরা মনে করেন, তাঁরা আসলে আহাম্মক। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য কম অপচেষ্টা হয়নি। কিন্তু ওই অপচেষ্টাকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায়নি, যারা পাকিস্তানের গোলামি করাকেই পবিত্র কর্তব্য মনে করেছিল, তারা ছাড়া আর সব বাঙালির হৃদয়জুড়েই রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নাম যেখানে-সেখানে জুড়ে দেওয়া একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা হীন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশে পরিণত করা কোনোভাবেই সুবিবেচনার পরিচয় বহন করে না। বঙ্গবন্ধু দলমতের ঊর্ধ্বে, তিনি বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়ার একধরনের অশুভ ও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেছে। তার পরও কয়েকটি বড় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত হওয়াটা মানুষ একেবারে মন্দভাবে দেখেনি। কিন্তু যত্রতত্র তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়ার নয়। বছর কয়েক আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পূর্ব দিকে যে সড়কদ্বীপটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা-ও ছিল একটি অনুচিত কাজ।

বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নামবদলের রাজনীতি করেছে বলেই আওয়ামী লীগকেও তাই করতে হবে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ বানানোর অপচেষ্টা একধরনের মতলববাজ করেছেন, করছেন। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে। তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। তিনি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা নন, বন্দুকেরজোরে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তিনি রাজনীতিবিদ হননি। বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াকে এক পাল্লায় মাপার মূঢ়তা যাঁরা দেখায়, ইতিহাস তাদের মার্জনা করবে না। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। 

সে জন্যই অলিগলি, মোড়, বাঁকের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়া অগ্রহণযোগ্য, এগুলো স্রেফ মতলববাজি। এসব নিন্দনীয় অপচেষ্টা বঙ্গবন্ধুকে বড় না করে বরং ছোট করার অপকৌশল। এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশনা প্রয়োজন।  

দুই. টাঙ্গাইলের সখীপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহকে গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় মর্যাদা) দেওয়ার সময় আপত্তি জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কাদের সিদ্দিকীর চরম নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। কাদের সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান নয়া মুন্সি গত ২৮ এপ্রিল রাতে মারা যান। পরের দিন জোহরের নামাজের পর সখীপুর পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। জানাজার আগে ইউএনও ফারজানা আলম মরদেহের পাশে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেন। তখন কাদের সিদ্দিকী তাঁকে অনুরোধ করেন, তিনি সামনে না থেকে তাঁর অন্য কোনো পুরুষ প্রতিনিধি দিয়ে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। কারণ, তিনি একজন নারী, আর একজন নারীর এভাবে হাজার হাজার মুসল্লির সামনে একজন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানানোটা বেমানান দেখায়, যা ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী।
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘মেয়ে মানুষ যত বড়ই হোক, পুরুষের সঙ্গে তাঁর জানাজায় শামিল হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ইউএনও সাহেব খুব ভালো মানুষ বলে শুনেছি, তাঁর মর্যাদায় হয়তো লেগেছে। আমার মেয়ের বয়সও তাঁর চাইতে বেশি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার কারণে আগামীকালের মধ্যেই যেন এই ইউএনওকে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশটা নিয়ন্ত্রণে চললে নাকি ‘এমন বেয়াদব তৈরি হতো না।’ প্রশ্ন উঠেছে, কাদের সিদ্দিকী দেশে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন? তিনি কি আফগানিস্তানের মতো নিয়ন্ত্রণ চাইছেন, যেখানে পুরো দেহ অতিরিক্ত কাপড়ে আবৃত না হয়ে নারীরা রাস্তায় বের হতে পারেন না; এমনকি নারীদের কোনো পুরুষের সঙ্গে চাকরি করা নিষিদ্ধ; শিক্ষাদীক্ষাও চলে না?

গার্ড অব অনারের প্রসঙ্গ টেনে ইউএনওকে ‘বেয়াদব’ বলাটা কাদের সিদ্দিকীর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে কি? অনেকেই বলছেন, গার্ড অব অনার এবং জানাজা দুটি আলাদা বিষয়। নারী ইউএনও জানাজায় অংশ নেননি। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় রীতি অনুযায়ী গার্ড অব অনার দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তথা সংসদ নেতা নারী। স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতা নারী। সরকারি চাকরিতেও নারীর সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশে কর্মরত ইউএনওর ৩৪ শতাংশ নারী। ৬৪ জেলার মধ্যে ১০টিতে নারী ডিসি কর্তব্যরত। ৭৯ সচিবের মধ্যে ১০ জন নারী। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য রয়েছেন। এর বাইরে বেশ কয়েকজন সরাসরি নির্বাচিত সদস্য; এমনকি মন্ত্রীও রয়েছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নারী ইউএনও কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদানে বাধা দিয়ে কাদের সিদ্দিকী আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নারী-পুরুষ হিসেবে বিভাজন কোনোভাবেই কাম্য নয়। কাদের সিদ্দিকী শুধু নারীর অগ্রযাত্রাকে অবজ্ঞাই করেননি, একাত্তরে বীর নারীদের অবদান এবং আত্মত্যাগকেও অসম্মান করেছেন। 

বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক  আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত