বিভুরঞ্জন সরকার
খুলনা সিটি করপোরেশন নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তনের একটি উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক পরে জানিয়েছেন, এই নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।
গত ৩০ এপ্রিল খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ১৯তম সাধারণ সভায় আমন্ত্রিত সদস্যদের কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত যে চিঠি পাঠানো হয়, তাতে বিবিধসহ ১৪টি আলোচ্যসূচি উল্লেখ করা হয়েছিল। ৫ নম্বর সূচিতে ছিল, নগরীর শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর করা প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এ তথ্যটি জানাজানি হলে কয়েক দিন ধরে খুলনা মহানগরীর আলোচিত বিষয় ছিল শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন। এ নিয়ে দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনা হচ্ছিল।
নগরীর ভৈরব নদের তীরে ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো জোড়া শিবমন্দির। এই মন্দিরে যেতে মানুষ রাস্তার যে মোড়টি ব্যবহার করে, সেটিই শিববাড়ী মোড় হিসেবে পরিচিত; অর্থাৎ এই নামকরণের ইতিহাস প্রাচীন। কয়েক বছর আগেও স্থানটির নাম পরিবর্তন করে বাবরী চত্বর করার দাবি জানিয়েছিল একটি পক্ষ, কিন্তু আরেক পক্ষের বিরোধিতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এবার খোদ কেসিসিই নাম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আছে, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘একটা জায়গার নামের সঙ্গে থাকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ছাড়া শিববাড়ী নামটির সঙ্গে স্পর্শকাতরতা ও ধর্মীয় অনুভূতিও রয়েছে। তাই একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক হবে না।’
পূজা উদ্যাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। তাই এ ধরনের অ্যাজেন্ডা তোলার আগে আমাদের সঙ্গে একটু কথা বললে ভালো হতো। আগামী ১২ জুন কেসিসি নির্বাচন। এখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের আড়াই থেকে ৩ লাখ মানুষ রয়েছে। ফলে মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’
সম্ভবত এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণেই খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নাম পরিবর্তন না করার কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত ভালো। তবে প্রশ্ন হলো, যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারের এই দুর্বুদ্ধি কার বা কাদের মাথা থেকে বের হয়? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বড় কোনো স্থাপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দিলেই তিনি বড় হবেন বা কোনো প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত না থাকলেই তিনি ছোট হবেন—এমনটা যাঁরা মনে করেন, তাঁরা আসলে আহাম্মক। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য কম অপচেষ্টা হয়নি। কিন্তু ওই অপচেষ্টাকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায়নি, যারা পাকিস্তানের গোলামি করাকেই পবিত্র কর্তব্য মনে করেছিল, তারা ছাড়া আর সব বাঙালির হৃদয়জুড়েই রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নাম যেখানে-সেখানে জুড়ে দেওয়া একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা হীন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশে পরিণত করা কোনোভাবেই সুবিবেচনার পরিচয় বহন করে না। বঙ্গবন্ধু দলমতের ঊর্ধ্বে, তিনি বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়ার একধরনের অশুভ ও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেছে। তার পরও কয়েকটি বড় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত হওয়াটা মানুষ একেবারে মন্দভাবে দেখেনি। কিন্তু যত্রতত্র তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়ার নয়। বছর কয়েক আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পূর্ব দিকে যে সড়কদ্বীপটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা-ও ছিল একটি অনুচিত কাজ।
বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নামবদলের রাজনীতি করেছে বলেই আওয়ামী লীগকেও তাই করতে হবে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ বানানোর অপচেষ্টা একধরনের মতলববাজ করেছেন, করছেন। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে। তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। তিনি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা নন, বন্দুকেরজোরে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তিনি রাজনীতিবিদ হননি। বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াকে এক পাল্লায় মাপার মূঢ়তা যাঁরা দেখায়, ইতিহাস তাদের মার্জনা করবে না। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না।
সে জন্যই অলিগলি, মোড়, বাঁকের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়া অগ্রহণযোগ্য, এগুলো স্রেফ মতলববাজি। এসব নিন্দনীয় অপচেষ্টা বঙ্গবন্ধুকে বড় না করে বরং ছোট করার অপকৌশল। এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশনা প্রয়োজন।
দুই. টাঙ্গাইলের সখীপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহকে গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় মর্যাদা) দেওয়ার সময় আপত্তি জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কাদের সিদ্দিকীর চরম নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। কাদের সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান নয়া মুন্সি গত ২৮ এপ্রিল রাতে মারা যান। পরের দিন জোহরের নামাজের পর সখীপুর পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। জানাজার আগে ইউএনও ফারজানা আলম মরদেহের পাশে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেন। তখন কাদের সিদ্দিকী তাঁকে অনুরোধ করেন, তিনি সামনে না থেকে তাঁর অন্য কোনো পুরুষ প্রতিনিধি দিয়ে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। কারণ, তিনি একজন নারী, আর একজন নারীর এভাবে হাজার হাজার মুসল্লির সামনে একজন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানানোটা বেমানান দেখায়, যা ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী।
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘মেয়ে মানুষ যত বড়ই হোক, পুরুষের সঙ্গে তাঁর জানাজায় শামিল হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ইউএনও সাহেব খুব ভালো মানুষ বলে শুনেছি, তাঁর মর্যাদায় হয়তো লেগেছে। আমার মেয়ের বয়সও তাঁর চাইতে বেশি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার কারণে আগামীকালের মধ্যেই যেন এই ইউএনওকে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশটা নিয়ন্ত্রণে চললে নাকি ‘এমন বেয়াদব তৈরি হতো না।’ প্রশ্ন উঠেছে, কাদের সিদ্দিকী দেশে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন? তিনি কি আফগানিস্তানের মতো নিয়ন্ত্রণ চাইছেন, যেখানে পুরো দেহ অতিরিক্ত কাপড়ে আবৃত না হয়ে নারীরা রাস্তায় বের হতে পারেন না; এমনকি নারীদের কোনো পুরুষের সঙ্গে চাকরি করা নিষিদ্ধ; শিক্ষাদীক্ষাও চলে না?
গার্ড অব অনারের প্রসঙ্গ টেনে ইউএনওকে ‘বেয়াদব’ বলাটা কাদের সিদ্দিকীর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে কি? অনেকেই বলছেন, গার্ড অব অনার এবং জানাজা দুটি আলাদা বিষয়। নারী ইউএনও জানাজায় অংশ নেননি। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় রীতি অনুযায়ী গার্ড অব অনার দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তথা সংসদ নেতা নারী। স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতা নারী। সরকারি চাকরিতেও নারীর সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশে কর্মরত ইউএনওর ৩৪ শতাংশ নারী। ৬৪ জেলার মধ্যে ১০টিতে নারী ডিসি কর্তব্যরত। ৭৯ সচিবের মধ্যে ১০ জন নারী। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য রয়েছেন। এর বাইরে বেশ কয়েকজন সরাসরি নির্বাচিত সদস্য; এমনকি মন্ত্রীও রয়েছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নারী ইউএনও কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদানে বাধা দিয়ে কাদের সিদ্দিকী আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নারী-পুরুষ হিসেবে বিভাজন কোনোভাবেই কাম্য নয়। কাদের সিদ্দিকী শুধু নারীর অগ্রযাত্রাকে অবজ্ঞাই করেননি, একাত্তরে বীর নারীদের অবদান এবং আত্মত্যাগকেও অসম্মান করেছেন।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা
খুলনা সিটি করপোরেশন নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তনের একটি উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক পরে জানিয়েছেন, এই নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।
গত ৩০ এপ্রিল খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ১৯তম সাধারণ সভায় আমন্ত্রিত সদস্যদের কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত যে চিঠি পাঠানো হয়, তাতে বিবিধসহ ১৪টি আলোচ্যসূচি উল্লেখ করা হয়েছিল। ৫ নম্বর সূচিতে ছিল, নগরীর শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর করা প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এ তথ্যটি জানাজানি হলে কয়েক দিন ধরে খুলনা মহানগরীর আলোচিত বিষয় ছিল শিববাড়ী মোড়ের নাম পরিবর্তন। এ নিয়ে দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোচনা হচ্ছিল।
নগরীর ভৈরব নদের তীরে ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো জোড়া শিবমন্দির। এই মন্দিরে যেতে মানুষ রাস্তার যে মোড়টি ব্যবহার করে, সেটিই শিববাড়ী মোড় হিসেবে পরিচিত; অর্থাৎ এই নামকরণের ইতিহাস প্রাচীন। কয়েক বছর আগেও স্থানটির নাম পরিবর্তন করে বাবরী চত্বর করার দাবি জানিয়েছিল একটি পক্ষ, কিন্তু আরেক পক্ষের বিরোধিতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এবার খোদ কেসিসিই নাম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আছে, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘একটা জায়গার নামের সঙ্গে থাকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ ছাড়া শিববাড়ী নামটির সঙ্গে স্পর্শকাতরতা ও ধর্মীয় অনুভূতিও রয়েছে। তাই একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক হবে না।’
পূজা উদ্যাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। তাই এ ধরনের অ্যাজেন্ডা তোলার আগে আমাদের সঙ্গে একটু কথা বললে ভালো হতো। আগামী ১২ জুন কেসিসি নির্বাচন। এখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের আড়াই থেকে ৩ লাখ মানুষ রয়েছে। ফলে মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’
সম্ভবত এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণেই খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নাম পরিবর্তন না করার কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত ভালো। তবে প্রশ্ন হলো, যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারের এই দুর্বুদ্ধি কার বা কাদের মাথা থেকে বের হয়? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বড় কোনো স্থাপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দিলেই তিনি বড় হবেন বা কোনো প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত না থাকলেই তিনি ছোট হবেন—এমনটা যাঁরা মনে করেন, তাঁরা আসলে আহাম্মক। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য কম অপচেষ্টা হয়নি। কিন্তু ওই অপচেষ্টাকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায়নি, যারা পাকিস্তানের গোলামি করাকেই পবিত্র কর্তব্য মনে করেছিল, তারা ছাড়া আর সব বাঙালির হৃদয়জুড়েই রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নাম যেখানে-সেখানে জুড়ে দেওয়া একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা হীন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশে পরিণত করা কোনোভাবেই সুবিবেচনার পরিচয় বহন করে না। বঙ্গবন্ধু দলমতের ঊর্ধ্বে, তিনি বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়ার একধরনের অশুভ ও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেছে। তার পরও কয়েকটি বড় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত হওয়াটা মানুষ একেবারে মন্দভাবে দেখেনি। কিন্তু যত্রতত্র তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হওয়ার নয়। বছর কয়েক আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পূর্ব দিকে যে সড়কদ্বীপটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা-ও ছিল একটি অনুচিত কাজ।
বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নামবদলের রাজনীতি করেছে বলেই আওয়ামী লীগকেও তাই করতে হবে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ বানানোর অপচেষ্টা একধরনের মতলববাজ করেছেন, করছেন। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে। তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। তিনি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা নন, বন্দুকেরজোরে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তিনি রাজনীতিবিদ হননি। বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াকে এক পাল্লায় মাপার মূঢ়তা যাঁরা দেখায়, ইতিহাস তাদের মার্জনা করবে না। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না।
সে জন্যই অলিগলি, মোড়, বাঁকের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়া অগ্রহণযোগ্য, এগুলো স্রেফ মতলববাজি। এসব নিন্দনীয় অপচেষ্টা বঙ্গবন্ধুকে বড় না করে বরং ছোট করার অপকৌশল। এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশনা প্রয়োজন।
দুই. টাঙ্গাইলের সখীপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহকে গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় মর্যাদা) দেওয়ার সময় আপত্তি জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কাদের সিদ্দিকীর চরম নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। কাদের সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান নয়া মুন্সি গত ২৮ এপ্রিল রাতে মারা যান। পরের দিন জোহরের নামাজের পর সখীপুর পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। জানাজার আগে ইউএনও ফারজানা আলম মরদেহের পাশে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেন। তখন কাদের সিদ্দিকী তাঁকে অনুরোধ করেন, তিনি সামনে না থেকে তাঁর অন্য কোনো পুরুষ প্রতিনিধি দিয়ে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। কারণ, তিনি একজন নারী, আর একজন নারীর এভাবে হাজার হাজার মুসল্লির সামনে একজন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানানোটা বেমানান দেখায়, যা ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী।
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘মেয়ে মানুষ যত বড়ই হোক, পুরুষের সঙ্গে তাঁর জানাজায় শামিল হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ইউএনও সাহেব খুব ভালো মানুষ বলে শুনেছি, তাঁর মর্যাদায় হয়তো লেগেছে। আমার মেয়ের বয়সও তাঁর চাইতে বেশি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার কারণে আগামীকালের মধ্যেই যেন এই ইউএনওকে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশটা নিয়ন্ত্রণে চললে নাকি ‘এমন বেয়াদব তৈরি হতো না।’ প্রশ্ন উঠেছে, কাদের সিদ্দিকী দেশে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন? তিনি কি আফগানিস্তানের মতো নিয়ন্ত্রণ চাইছেন, যেখানে পুরো দেহ অতিরিক্ত কাপড়ে আবৃত না হয়ে নারীরা রাস্তায় বের হতে পারেন না; এমনকি নারীদের কোনো পুরুষের সঙ্গে চাকরি করা নিষিদ্ধ; শিক্ষাদীক্ষাও চলে না?
গার্ড অব অনারের প্রসঙ্গ টেনে ইউএনওকে ‘বেয়াদব’ বলাটা কাদের সিদ্দিকীর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে কি? অনেকেই বলছেন, গার্ড অব অনার এবং জানাজা দুটি আলাদা বিষয়। নারী ইউএনও জানাজায় অংশ নেননি। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় রীতি অনুযায়ী গার্ড অব অনার দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তথা সংসদ নেতা নারী। স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতা নারী। সরকারি চাকরিতেও নারীর সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশে কর্মরত ইউএনওর ৩৪ শতাংশ নারী। ৬৪ জেলার মধ্যে ১০টিতে নারী ডিসি কর্তব্যরত। ৭৯ সচিবের মধ্যে ১০ জন নারী। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য রয়েছেন। এর বাইরে বেশ কয়েকজন সরাসরি নির্বাচিত সদস্য; এমনকি মন্ত্রীও রয়েছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নারী ইউএনও কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদানে বাধা দিয়ে কাদের সিদ্দিকী আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নারী-পুরুষ হিসেবে বিভাজন কোনোভাবেই কাম্য নয়। কাদের সিদ্দিকী শুধু নারীর অগ্রযাত্রাকে অবজ্ঞাই করেননি, একাত্তরে বীর নারীদের অবদান এবং আত্মত্যাগকেও অসম্মান করেছেন।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে