টিকিট বিক্রেতা ডাবলুর এত সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৫৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। আওয়ামী লীগ আমলের আগে তিনি ছিলেন বিআরটিসি বাসের টিকিট বিক্রেতা। অথচ এখন তিনি বিপুল সম্পদের মালিক।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডাবলু সরকারের বাবা আবদুর রশিদ সরকার ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সাত্তার ওরফে টিপুর সহযোগী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে রশিদ সরকারকেও রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ডাবলু ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন ভগ্নিপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইকবালের হাত ধরে। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হন। এ পদে থাকা অবস্থায় নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে উপদপ্তর সম্পাদকের পদ পান। তখনো ডাবলু বাসের টিকিট বিক্রেতাই ছিলেন।

ডাবলুর কপাল খুলে যায় ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে। ২০২০ সালে আবার নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রথম মেয়াদেই ডাবলু সরকার সংখ্যালঘুদের জমি দখল ও টেন্ডারবাজি করে বিপুল সম্পদের মালিক হন। সবকিছু জেনেও কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁকেই আবার বেছে নেন।

জমি দখল-টেন্ডারবাজি
রাজশাহী শহরের যে জমিতে ডাবলু সরকারের চোখ পড়েছে, সেটিই তিনি দখল করেছেন বলে অভিযোগ আছে। কিছু জায়গার জন্য পরিশোধ করেছেন নামমাত্র মূল্য। আবার কোনো বিনিয়োগ না করেই মার্কেট ও হোটেল ব্যবসার শেয়ার নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

নগরের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসগর আলী বলেন, ‘কিছুদিন আগেও কুমারপাড়া এলাকার রঘু সাহা নামের এক ব্যক্তি ৫ কাঠা জমির বাড়িতে বসবাস করতেন। তাঁদের উচ্ছেদ করে জমিটি দখল করেছেন ডাবলু সরকার। কুমারপাড়া ও আলুপট্টি এলাকায় ডাবলু বেশ কিছু জমি দখল করেছেন বলে শুনেছি। রঘুর পরিবারটি এখন কোথায়, তা কেউ জানে না।’

স্থানীয় লোকজন জানান, কুমারপাড়ায় ‘সখিনা বোর্ডিং’ নামে একটি পুরোনো আবাসিক হোটেল ছিল। সেটি দখল করে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে দেশছাড়া করেন ডাবলু। সখিনা বোর্ডিংয়ের স্থানে ১৬ তলা ‘সরকার টাওয়ার’ নির্মাণ করেন ডাবলু। কয়েক বছর আগে রাতের অন্ধকারে নগরের ছোট বনগ্রামের বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করে ১২ বিঘা জমি দখল করেন তিনি। কুমারপাড়ার বিআরটিসি বাস ডিপোর জায়গাটিও এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে দখলে নেন ডাবলু সরকার। কুমারপাড়া বরোদা মন্দিরের সামনে আরেকটি জায়গা দখল করে তিনি গ্যারেজ করেছেন। নগরের সাহেববাজার এলাকায় নামমাত্র মূল্যে আবদুল জলিল বিশ্বাস মার্কেট দখলে নিয়েছেন ডাবলু। সপুরা এলাকায় সুখানদিঘি নামের একটি বড় পুকুর ভরাট করে দেওয়ার চুক্তিতে বিনা টাকায় অংশীদার হন ডাবলু। পুকুরটিতে পাওয়া ভাগের অংশ বিক্রি করে মোটা টাকা নিয়ে কেটে পড়েন তিনি।

রাজশাহীর বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে একচেটিয়া টেন্ডারবাজি করেছেন ডাবলু সরকার। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত, ওয়াসা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ নিতেন ডাবলু। তবে তিনি নিজে কোনো কাজ করতেন না। বিভিন্ন লাইসেন্সে কাজ নেওয়ার পর লাভ নিয়ে কাজ বিক্রি করে দিতেন। এতেই বিপুল টাকার মালিক হয়ে যান ডাবলু।

হত্যা মামলার আসামি
রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে নিহত শিবির নেতা আলী রায়হান হত্যা মামলায় ডাবলু সরকারকে দুই দফায় পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (ডাবলু) অনেক তথ্যই দিয়েছেন।’

ছয় দিনের রিমান্ডে ডাবলু সরকার
বিএনপি কার্যালয়ে হামলা মামলায় গতকাল বিকেলে ডাবলু সরকারের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক ফয়সাল তারেক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই শহরের মালোপাড়ায় মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান মন্টু মামলা করেন।

নওগাঁ থেকে ৪ অক্টোবর ডাবলু সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে নিহত আলী রায়হান হত্যা মামলায় তাঁকে দুই দফায় ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে গতকাল তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত