জানান দিয়ে আত্মহত্যা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০৭: ৪৩

ফেসবুক লাইভে এসে কষ্টের কথা জানিয়ে রহিমা আক্তার নামের এক গৃহবধূ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুন) ভোরে রাজশাহীর চারঘাট পৌর এলাকার হলের মোড়ের একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে খবরটি প্রকাশ হয়েছে।
২৪ বছর বয়সী গৃহবধূ রহিমা আক্তারের স্বামীর নাম সায়েম ইসলাম সাগর। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা।

স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য বা বিরোধের জেরে সাধারণত মেয়েরা আত্মহত্যা করে থাকেন। কিন্তু রহিমা আক্তারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, রহিমা আক্তারের বাবার সঙ্গে মায়ের ছাড়াছাড়ি হলে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। এতে একা হয়ে পড়েন রহিমা। এ নিয়ে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

মঙ্গলবার ভোরে রহিমা ফেসবুক লাইভে আসেন। এ সময় তিনি দুঃখের কথাগুলো বলেন। মা-বাবাকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন তিনি। লাইভ শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।

বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আগের দিন ঈদ হয়েছে। ঈদ মানে আনন্দ। রহিমার পরিবারে কি ঈদ উপলক্ষে কোনো আনন্দ আয়োজন ছিল না? হয়তো ছিল না। আর সে জন্যই রহিমা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই যে মা-বাবার কারণে রহিমার মধ্যে বিষণ্নতা দেখা দিয়েছিল এবং আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। রহিমার এই বিষণ্নতার কথা নিশ্চয়ই আত্মীয়স্বজনেরা জানতেন। কিন্তু তাঁর এই সমস্যা কারও মনোযোগ কাড়তে পারেনি।

আমাদের দেশে বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল, বিষয়টি তো তা নয়। আত্মহত্যার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগের নাম বিষণ্নতা। গবেষকেরা বলছেন, গুরুতর বিষণ্নতা বা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দিনের পর দিন অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে থাকে, কোনো কাজে উৎসাহ-মনোযোগ পায় না, ঘুম, খাওয়ার রুচি, উদ্যম, গতি কমে যায়। রহিমার ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হয়েছিল।

অতিরিক্ত ডিউটির কারণে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত একজন পুলিশ সদস্য সম্প্রতি সহকর্মী পুলিশকে গুলি করে হত্যা করেছেন। অবসাদ ও বিষণ্নতা যে মানুষের জীবনের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দেয়, এটা আমরা অনেক সময় বুঝতেও পারি না। কোনো দুর্ঘটনা যখন ঘটে যায়, তখন এটা নিয়ে আমরা একটু কথা চালাচালি করি, তারপর আবার সব নীরব।

অথচ এটা তো জানা কথা যে বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গেই মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করালে আত্মহত্যার ঘটনা কমবে না। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাইলে অবসাদ ও বিষণ্নতা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কবি বলেছেন, মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।—এই কবি-বাক্য উপেক্ষা করে যারা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়, তাদের প্রতি অবহেলা-উপেক্ষা করা চলবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত