নোংরা পরিবেশে পশু জবাই

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১২: ৪৯
Thumbnail image

বাইরের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু জবাইখানা’। অথচ ভেতরে ভেজা স্যাঁতসেঁতে মেঝে। ঘরটির এক পাশে গোবরের স্তূপ। জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে আছে জমাট রক্ত আর জবাই করা পশুর নাড়িভুঁড়ি। ড্রেনের সংযোগস্থলে আটকে আছে পশুর বর্জ্য। উৎকট দুর্গন্ধে নাক-মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার দশা। এমন পরিবেশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন মিরপুর ১১-এর নিউমার্কেট সোসাইটির জবাইখানায়।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাইয়ের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। জবাইখানায় প্রতিদিন গরু জবাই করতে আসেন মাংস ব্যবসায়ী ও নিউ সোসাইটি মার্কেট সমবায় সমিতির সভাপতি চাঁন মিয়া। আজকের পত্রিকাকে চাঁন মিয়া বলেন, ‘এখানের পরিবেশ খুবই নোংরা। ডাক্তার আসার কথা থাকলেও, ডাক্তার আসার নাম নেই।’

জবাইখানার লাগোয়া ঘরে বসবাস করে অন্তত তিনটি বিহারি পরিবার। ৭০ বছর বয়সী খায়রুন নেছা বলেন, ‘জবাইখানার পরিবেশ সুন্দর থাকলে ভালো হতো। নোংরা পরিবেশ থাকলে আমরাই বেশি সমস্যায় থাকি। নানান রোগ-শোকে ভুগতে হয়।’ জবাইখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়টি নজরে রয়েছে জানিয়ে ডিএনসিসির ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. হেমায়েত রহমান বলেন, ‘এক মাস হয়েছে, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অনেক কিছু এখনো জানি না। আমিও চাই, পরিবেশ ভালো হোক।’

রাজধানীতে ডিএনসিসির তিনটি জবাইখানা রয়েছে। এর মধ্যে মহাখালীরটা বন্ধ। চালু আছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও মিরপুর-১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেটের পশু জবাইখানা। ডিএনসিসির ২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে দুটি জবাইখানা থেকে ইজারা বাবদ রাজস্ব আদায় করা হয়েছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে ৫ লাখ করে দুই জবাইখানা থেকে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। দুই জবাইখানায় প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ পশু জবাই করার ব্যবস্থা আছে। প্রতি গরু জবাই করতে ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭৫ টাকা, ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১০ টাকা করে দিতে হয় ব্যবসায়ীদের।

দুটি পশু জবাইখানায় দৈনিক ৪০০ পশু জবাই করা যায়। অথচ ডিএনসিসি এলাকায় দৈনিক ২ হাজারের বেশি পশু জবাই হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী গরু জবাইখানায় না নিয়ে, দোকানেই জবাই করে দেন। তবু ইজারাদারেরা অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন, কিন্তু কোনো রসিদ দেন না। জবাইখানার বাইরের এসব গরুর হিসেব তালিকাতেও ওঠে না। এদিকে জবাইখানার ভেতরে কম গরু জবাই হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে কম মূল্য দেন ইজারাদারেরা। ফলে প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিটি করপোরেশন। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

সরেজমিনে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর জবাইখানার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে মে মাসে (২০২১) জানিয়েছিলেন, ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জবাইখানা সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার এক বছর পেরিয়ে গেলেও জবাইখানার চিত্র বদলায়নি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজধানীতে মানসম্মত জবাইখানা এখন সময়ের দাবি। জবাইখানাগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করলে মাংসবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর নোংরা জায়গায় গরু বা পশু জবাই করলে, পশুর মাংসের সঙ্গে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত