নদী খননের পর মাঠ ভরল সবুজ ফসলে

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০৮: ৩৪

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কংস নদ খননের বালু-মাটি দিয়ে দুই পাশের কয়েক শ একর নিচু জমি ভরাট করা হয়েছে। আগে এসব নিচু জমিতে শুধু ধান চাষ করা যেত। এ ছাড়া অনেক সময় পতিত থাকত জমি। কিন্তু জমি ভরাট করে উঁচু করায় এখন এসব জমিতে ধানের পাশাপাশি নানান ধরনের সবজি চাষ করছেন কৃষকেরা। এতে ভাগ্য বদলেছে হাজারো কৃষকের। 

সম্প্রতি উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কংস নদের দুই পাড়ে থাকা ধারাম, ইসলামপুর, মল্লিকপুর, চন্দ্রপুর, দুর্গাপুর, দারিয়াপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে সবজি চাষের এ চিত্র দেখা গেছে। নদীর দুই পাশের জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, কাঁচা মরিচ, শসা, ডাঁটা, করলা, পুঁইশাক, লালশাকসহ নানা ধরনের সবজি দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে আবার ড্রাগন বাগান করছেন, অনেকে চাষ করেছেন গম। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ সালে সরকারিভাবে বারহাট্টা অংশে কংস নদ খনন করা হয়। খননের মাটিতে নদীর দুই পাশে কয়েক শ একর নিচু জমি ভরাট করা হয়। তবে এসব কৃষির বিষয়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে। 

উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের সবজিচাষি মো. আব্দুল হক বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। আগে এই জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম। নদী খননের মাটিতে জমিটা উঁচু হওয়ায় সবজি চাষ করতে পারছি। দাম ভালো পাচ্ছি। কপি তুলে আবার ধান রোপণ করব। তবে সবজি চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহায়তা পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, নদী খননের ফলে কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ একর জমি উঁচু হয়েছে। সবাই সেখানে সবজি চাষ করছেন। এতে বাজারে প্রচুর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে বাজারে কম দামে সবজি পাচ্ছে মানুষ। 

আব্দুল হকের ছোট দুই ভাই মাওলানা আলমগীর ও আব্দুল ওয়াহাব। তাঁরাও দুই একরের বেশি জমিতে বেগুন, মরিচ, টমেটো চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এদিকে বাজারে বিক্রি করে দামও ভালো পাচ্ছেন। তারাও কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন। 

তিন একর জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন ধারাম গ্রামের মনিরুল ইসলাম লিটন। তিনি বলেন, এই জমিতে আগে একবার ধান হতো। কিছু জমি গর্ত ছিল। তাতে কিছুই হতো না। ২০২১ সালে নদী খননের মাটি দিয়ে ভরাট করে এতে ড্রাগন চাষ করেছি। এতে পুরোটা জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। এদিকে ড্রাগন চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হচ্ছি। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এখন আমার ড্রাগন বাগান দেখতে আসে। 

ইসলামপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান বলেন, নদী খননের ফলে বাড়ির আশপাশের নিচু জমিগুলো উঁচু হয়েছে। এসব জমিতে ফুলকপি, টমেটো, বেগুন চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে এসব সবজি বিক্রি করে ভালো দর পাওয়া গেছে। চরমল্লিকপুর গ্রামের মাসুদ আহমেদ জানান, ‘আমাদের বাড়িটা নদীর কাছাকাছি। সেখানে বিশাল মাঠ নিচু ছিল। বছরের প্রায় সময় পানি জমে থাকত। একবার ধান ছাড়া তেমন ফসল হতো না। নদী খননের মাটি দিয়ে উঁচু করার পর থেকে ব্যাপকভাবে নানা ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে।’ 

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। গমসহ নানা সবজি চাষ দেখে এসেছি।’ কৃষকদের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে সবজির বীজ কৃষকদের দিই না। শুধু পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। তাঁরা চাইলে আমরা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করব। তবে ওই এলাকায় আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত