মামুনুর রশীদ
ছাত্রছাত্রীদের বেশ কয়েক দিন ধরেই নানা ধরনের প্রতিবাদী ভাষা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কফিন মিছিল, নানা ধরনের ব্যঙ্গচিত্র আঁকা এবং একের পর এক দাবিসংবলিত ঘোষণা আমাদের নজরে পড়ছে। যে কাজগুলো আমাদের করার কথা ছিল, সেই কাজগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে অথচ পথেঘাটে কোনো শৃঙ্খলা তো আসছেই না; বরং মৃত্যুর হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
প্রতিটি ঈদে স্থলপথে, নৌপথে সর্বত্র মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে। পথে, বিশেষ করে হাইওয়েতে মৃত্যু কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। আর নৌপথে একটা লঞ্চডুবি হলেই অনেক মানুষের একসঙ্গে মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুর মিছিল না কমার পেছনে রয়েছে একটা ব্যাপক দুর্নীতির ইতিহাস। এই বাস বা ট্রাকগুলোর মালিক কারা? এগুলোর খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বেশির ভাগ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা। গাড়িটি কেনার মুহূর্তেই ব্যাংক, বিআরটিএ এসব সংস্থাকে ঘুষ দিয়ে হিসাবের খাতাটি খোলে। এরপর আছে পুলিশ। পুলিশকে টাকা না দিয়ে গণপরিবহন চালানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহনমালিক এবং শ্রমিক সমিতির প্রতিদিনের চাঁদা। এই চাঁদার আবার শেষ নেই, ক্ষমতাসীনদের তৈরি করা নানা সিন্ডিকেটের চাঁদা। যেসব ব্যবসায়ী ট্রাকে পণ্য পরিবহন করেন, তাঁদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। যে কারণে রংপুরে যে সবজির দাম ৩ টাকা কেজি, ঢাকায় এসে তার দাম পড়ে যায় ১৫ টাকা। কারণ, একটা পথেই অনেককে চাঁদা দিতে হয়েছে।
বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে গাড়ির ফিটনেসের জন্য। যেসব গাড়ি আমরা সড়কে দেখতে পাই, তার গায়ে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। মিরর নেই বললেই চলে। অধিকাংশ যানবাহনের সামনের মিরর, পেছনের লাইট নেই অথচ ট্রাফিক পুলিশ সেই গাড়িটিকে কিছু বলছে না। শোনা যায়, চট্টগ্রামে অসংখ্য ট্রাক আছে, যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের হাতে থাকে একটা টোকেন। এই টোকেনটা দেখালেই পুলিশ কিছু বলবে না। এই গাড়িগুলোর ফিটনেস তো দূরের কথা, কোনো কাগজপত্রই নেই। এরপর আছে মোবাইল ফোনের কারবার। পুলিশ ধরলে সঙ্গে সঙ্গে মালিক একটা মোবাইল ফোনে কলের ব্যবস্থা করেন। এই কলটি যাওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বিআরটিএতেও একই ব্যবস্থা। গাড়ির ফিটনেসের জন্য আবার মোবাইলেই ফোন যায়। যখন মোবাইল ছিল না, তখন ল্যান্ডফোনে ব্যবস্থাটা একটু কঠিন ছিল। যতই প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, ততই মোবাইল ফোনটি আরও বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। একবার আমি বিপদে পড়ে ট্রাকে ঢাকায় এসেছিলাম। টাঙ্গাইল থেকে একটু এগোতেই ট্রাকের হেডলাইট নষ্ট হয়ে যায়। ওই নষ্ট হেডলাইট নিয়ে ঢাকা শহর পর্যন্ত চলে আসি। পথে কেউ কোনো জায়গায় ট্রাকটিকে আটকায়নি। কয়েক বছর ধরে হাইওয়ে পুলিশের কথা শোনা যাচ্ছে; কিন্তু তার অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পাইনি। যখন হাইওয়েতে বড় বড় যানজট হয়, তখনো কাউকে দেখতে পাই না। তাহলে কোথায় থাকে এই হাইওয়ে পুলিশ?
বর্তমানে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রচুর মোটরসাইকেলসহ সার্জেন্টদের দেখতে পাই। বেচারারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে গলদঘর্ম হচ্ছেন বটে; কিন্তু যানজটের কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। মূলত এই ট্রাফিক সার্জেন্টরা ভিআইপি ডিউটিতে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। আর ঢাকা শহরে ভিআইপিদের তো অন্তই নেই। অথচ রাজধানীতে কথা ছিল ভিআইপি থাকবেন দু-একজন—মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখন সে ক্ষেত্রে ভিআইপির সংখ্যা এত বেশি যে, অ্যাম্বুলেন্সগুলোও দ্রুতগতিতে চলার সুযোগ পায় না।
এসব গণপরিবহনের যাঁরা চালক, তাঁরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। একেবারেই কখনো শিশুশ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়ে নানা নির্যাতন সহ্য করে ড্রাইভারের সহকারী অথবা কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পান। এরপর ভাগ্যটাই খুলে যায়, যখন তাঁরা ড্রাইভার হয়ে যান। পারিবারিক জীবনটাও খুব সুখের নয়। অর্থ উপার্জন করেন বটে, তবে তাতে সঞ্চয় থাকে না। যথেচ্ছ অপচয়েরও একটা দিক থাকে। জীবিকার জায়গাটিও এত বিশৃঙ্খল যে, সন্তানের মুখটাও সময়মতো দেখতে পান না। একেকটা ট্রিপ হয়ে দাঁড়ায় এক একটা বিশৃঙ্খল ও কঠিন পরিশ্রমের স্বেচ্ছাচার। ছুটি পান না, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় নেই, সারা রাত গাড়ি চালিয়ে বিশ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই, নেই আধুনিক রুচিসম্মত টয়লেট বা গোসলের জায়গা। ঘুম হয় না, অথচ এই ঘুম চোখে নিয়েই চালাতে হয় দীর্ঘযাত্রা। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো আয়োজন নেই; বরং আছে মালিকের সঙ্গে দীর্ঘ কলহের ইতিহাস।
এত সব ঝামেলা নিয়ে একজন চালকের সুদীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর ফলাফলে একটা দুর্ঘটনা অবধারিত। ট্রাকচালকদের সমস্যা আরও বেশি। তাঁরা দীর্ঘ যাত্রায় যান, পথে ফেরি পারাপারের প্রতীক্ষা। গাড়িতেই সময় কাটাতে হয়। তাঁদের আশপাশে কোনো স্নানাগার নেই। এসব দুর্বিষহ সমস্যা নিয়েই চালকদের জীবনযাপন করতে হয়। নেতারা তাঁদের জন্য কোনো সংস্কৃতির ব্যবস্থা করেননি, ন্যূনতম শিক্ষার ব্যবস্থাও করেননি। তাঁদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টাও নির্ভর করে দুর্নীতির মাধ্যমে। সাধারণত নেতাদের সুপারিশেই লাইসেন্স মিলে যায়। তাঁদের দক্ষতা দেখার সুযোগ মেলে না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের। এ কথা বলব না যে, বিআরটিএর মধ্যে সৎ মানুষ নেই। এই সৎ মানুষগুলো নানা চাপে বিধ্বস্ত। পুলিশেও সৎ মানুষ আছেন; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাঁরাও চাপ সহ্য করতে করতে একসময় আত্মসমর্পণ করে বসেন। চাকরি রক্ষার্থে এই আত্মসমর্পণ খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী নিরাপদ সড়কের জন্য অন্তরায়। এই জনগোষ্ঠীর আবার আছে গডফাদার। গডফাদাররা একেক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এতই শক্তিশালী যে, তাঁরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ওঠেন। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন কী করে সম্ভব? একটা হতে পারে হিটলারি কায়দায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সবার অংশগ্রহণে কঠোর শাসন। আর অন্যদিকে আইনের কঠোর প্রয়োগ। আইনের এই কঠোর প্রয়োগ করতে হলে সর্বাগ্রে পুলিশকে শক্তিশালী হতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় সেটা কি সম্ভব? গাড়ির মালিক এবং চালক এই দুই সম্প্রদায়কে ন্যূনতম মানবিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রচলিত শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। যাত্রীদেরও চালকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। যাত্রীরা চালক ও হেলপারদের প্রতি সব সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। কখনো কখনো যাত্রীদের আচরণে মনে হয়, চালক-সহকারীরা মানুষই নন। যে চালকের হাতে এতগুলো প্রাণের দায়িত্ব, তাঁকে একটা সম্মানের আসনে বসাতেই হবে।
যেহেতু আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা নেই, তা-ও এটি একটি অসম্ভব কল্পনা। তবু আমাদের কিশোর সন্তানেরা যে অভিযান শুরু করেছে, তা সমর্থন করা প্রয়োজন। এতে মানুষের সচেতনতা বাড়বে। কিশোরেরা সমাজের জন্য কাজ করতে চায়, এটাও তাদের একটা পাঠ্যবইয়ের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। তাদের জীবন-স্মৃতিতে এ ধরনের ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই ন্যায়সংগত প্রতিবাদ অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এসব প্রতিবাদের ঢেউয়ের পর ঢেউ একদিন হয়তো এই পরিবহনের ক্ষেত্রে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতেও পারে। আমরা সেই আশায় অপেক্ষা করি।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ছাত্রছাত্রীদের বেশ কয়েক দিন ধরেই নানা ধরনের প্রতিবাদী ভাষা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কফিন মিছিল, নানা ধরনের ব্যঙ্গচিত্র আঁকা এবং একের পর এক দাবিসংবলিত ঘোষণা আমাদের নজরে পড়ছে। যে কাজগুলো আমাদের করার কথা ছিল, সেই কাজগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে অথচ পথেঘাটে কোনো শৃঙ্খলা তো আসছেই না; বরং মৃত্যুর হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
প্রতিটি ঈদে স্থলপথে, নৌপথে সর্বত্র মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে। পথে, বিশেষ করে হাইওয়েতে মৃত্যু কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। আর নৌপথে একটা লঞ্চডুবি হলেই অনেক মানুষের একসঙ্গে মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুর মিছিল না কমার পেছনে রয়েছে একটা ব্যাপক দুর্নীতির ইতিহাস। এই বাস বা ট্রাকগুলোর মালিক কারা? এগুলোর খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বেশির ভাগ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা। গাড়িটি কেনার মুহূর্তেই ব্যাংক, বিআরটিএ এসব সংস্থাকে ঘুষ দিয়ে হিসাবের খাতাটি খোলে। এরপর আছে পুলিশ। পুলিশকে টাকা না দিয়ে গণপরিবহন চালানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহনমালিক এবং শ্রমিক সমিতির প্রতিদিনের চাঁদা। এই চাঁদার আবার শেষ নেই, ক্ষমতাসীনদের তৈরি করা নানা সিন্ডিকেটের চাঁদা। যেসব ব্যবসায়ী ট্রাকে পণ্য পরিবহন করেন, তাঁদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। যে কারণে রংপুরে যে সবজির দাম ৩ টাকা কেজি, ঢাকায় এসে তার দাম পড়ে যায় ১৫ টাকা। কারণ, একটা পথেই অনেককে চাঁদা দিতে হয়েছে।
বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে গাড়ির ফিটনেসের জন্য। যেসব গাড়ি আমরা সড়কে দেখতে পাই, তার গায়ে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। মিরর নেই বললেই চলে। অধিকাংশ যানবাহনের সামনের মিরর, পেছনের লাইট নেই অথচ ট্রাফিক পুলিশ সেই গাড়িটিকে কিছু বলছে না। শোনা যায়, চট্টগ্রামে অসংখ্য ট্রাক আছে, যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের হাতে থাকে একটা টোকেন। এই টোকেনটা দেখালেই পুলিশ কিছু বলবে না। এই গাড়িগুলোর ফিটনেস তো দূরের কথা, কোনো কাগজপত্রই নেই। এরপর আছে মোবাইল ফোনের কারবার। পুলিশ ধরলে সঙ্গে সঙ্গে মালিক একটা মোবাইল ফোনে কলের ব্যবস্থা করেন। এই কলটি যাওয়ার পর পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বিআরটিএতেও একই ব্যবস্থা। গাড়ির ফিটনেসের জন্য আবার মোবাইলেই ফোন যায়। যখন মোবাইল ছিল না, তখন ল্যান্ডফোনে ব্যবস্থাটা একটু কঠিন ছিল। যতই প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, ততই মোবাইল ফোনটি আরও বেশি ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। একবার আমি বিপদে পড়ে ট্রাকে ঢাকায় এসেছিলাম। টাঙ্গাইল থেকে একটু এগোতেই ট্রাকের হেডলাইট নষ্ট হয়ে যায়। ওই নষ্ট হেডলাইট নিয়ে ঢাকা শহর পর্যন্ত চলে আসি। পথে কেউ কোনো জায়গায় ট্রাকটিকে আটকায়নি। কয়েক বছর ধরে হাইওয়ে পুলিশের কথা শোনা যাচ্ছে; কিন্তু তার অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পাইনি। যখন হাইওয়েতে বড় বড় যানজট হয়, তখনো কাউকে দেখতে পাই না। তাহলে কোথায় থাকে এই হাইওয়ে পুলিশ?
বর্তমানে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রচুর মোটরসাইকেলসহ সার্জেন্টদের দেখতে পাই। বেচারারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে গলদঘর্ম হচ্ছেন বটে; কিন্তু যানজটের কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। মূলত এই ট্রাফিক সার্জেন্টরা ভিআইপি ডিউটিতে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। আর ঢাকা শহরে ভিআইপিদের তো অন্তই নেই। অথচ রাজধানীতে কথা ছিল ভিআইপি থাকবেন দু-একজন—মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখন সে ক্ষেত্রে ভিআইপির সংখ্যা এত বেশি যে, অ্যাম্বুলেন্সগুলোও দ্রুতগতিতে চলার সুযোগ পায় না।
এসব গণপরিবহনের যাঁরা চালক, তাঁরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। একেবারেই কখনো শিশুশ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়ে নানা নির্যাতন সহ্য করে ড্রাইভারের সহকারী অথবা কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পান। এরপর ভাগ্যটাই খুলে যায়, যখন তাঁরা ড্রাইভার হয়ে যান। পারিবারিক জীবনটাও খুব সুখের নয়। অর্থ উপার্জন করেন বটে, তবে তাতে সঞ্চয় থাকে না। যথেচ্ছ অপচয়েরও একটা দিক থাকে। জীবিকার জায়গাটিও এত বিশৃঙ্খল যে, সন্তানের মুখটাও সময়মতো দেখতে পান না। একেকটা ট্রিপ হয়ে দাঁড়ায় এক একটা বিশৃঙ্খল ও কঠিন পরিশ্রমের স্বেচ্ছাচার। ছুটি পান না, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় নেই, সারা রাত গাড়ি চালিয়ে বিশ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই, নেই আধুনিক রুচিসম্মত টয়লেট বা গোসলের জায়গা। ঘুম হয় না, অথচ এই ঘুম চোখে নিয়েই চালাতে হয় দীর্ঘযাত্রা। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো আয়োজন নেই; বরং আছে মালিকের সঙ্গে দীর্ঘ কলহের ইতিহাস।
এত সব ঝামেলা নিয়ে একজন চালকের সুদীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর ফলাফলে একটা দুর্ঘটনা অবধারিত। ট্রাকচালকদের সমস্যা আরও বেশি। তাঁরা দীর্ঘ যাত্রায় যান, পথে ফেরি পারাপারের প্রতীক্ষা। গাড়িতেই সময় কাটাতে হয়। তাঁদের আশপাশে কোনো স্নানাগার নেই। এসব দুর্বিষহ সমস্যা নিয়েই চালকদের জীবনযাপন করতে হয়। নেতারা তাঁদের জন্য কোনো সংস্কৃতির ব্যবস্থা করেননি, ন্যূনতম শিক্ষার ব্যবস্থাও করেননি। তাঁদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টাও নির্ভর করে দুর্নীতির মাধ্যমে। সাধারণত নেতাদের সুপারিশেই লাইসেন্স মিলে যায়। তাঁদের দক্ষতা দেখার সুযোগ মেলে না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের। এ কথা বলব না যে, বিআরটিএর মধ্যে সৎ মানুষ নেই। এই সৎ মানুষগুলো নানা চাপে বিধ্বস্ত। পুলিশেও সৎ মানুষ আছেন; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাঁরাও চাপ সহ্য করতে করতে একসময় আত্মসমর্পণ করে বসেন। চাকরি রক্ষার্থে এই আত্মসমর্পণ খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী নিরাপদ সড়কের জন্য অন্তরায়। এই জনগোষ্ঠীর আবার আছে গডফাদার। গডফাদাররা একেক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এতই শক্তিশালী যে, তাঁরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ওঠেন। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন কী করে সম্ভব? একটা হতে পারে হিটলারি কায়দায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সবার অংশগ্রহণে কঠোর শাসন। আর অন্যদিকে আইনের কঠোর প্রয়োগ। আইনের এই কঠোর প্রয়োগ করতে হলে সর্বাগ্রে পুলিশকে শক্তিশালী হতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় সেটা কি সম্ভব? গাড়ির মালিক এবং চালক এই দুই সম্প্রদায়কে ন্যূনতম মানবিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রচলিত শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। যাত্রীদেরও চালকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। যাত্রীরা চালক ও হেলপারদের প্রতি সব সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। কখনো কখনো যাত্রীদের আচরণে মনে হয়, চালক-সহকারীরা মানুষই নন। যে চালকের হাতে এতগুলো প্রাণের দায়িত্ব, তাঁকে একটা সম্মানের আসনে বসাতেই হবে।
যেহেতু আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা নেই, তা-ও এটি একটি অসম্ভব কল্পনা। তবু আমাদের কিশোর সন্তানেরা যে অভিযান শুরু করেছে, তা সমর্থন করা প্রয়োজন। এতে মানুষের সচেতনতা বাড়বে। কিশোরেরা সমাজের জন্য কাজ করতে চায়, এটাও তাদের একটা পাঠ্যবইয়ের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। তাদের জীবন-স্মৃতিতে এ ধরনের ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই ন্যায়সংগত প্রতিবাদ অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এসব প্রতিবাদের ঢেউয়ের পর ঢেউ একদিন হয়তো এই পরিবহনের ক্ষেত্রে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতেও পারে। আমরা সেই আশায় অপেক্ষা করি।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে