চিররঞ্জন সরকার
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০ শিক্ষার্থীর মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন নিম্ন আদালত। একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে একসঙ্গে ২০ ছাত্রের মৃত্যুদণ্ডের রায় নজিরবিহীন। উচ্চ আদালতে যদি এ রায় বহাল থাকে, তাহলে এটা গোটা বিশ্বেই একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড আছে, যা সমাজকে নাড়া দেয়, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাটিও ছিল তেমনি একটি। শুধু ভিন্নমতের কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। যাঁরা এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বুয়েটের ছাত্র। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন সতীর্থকে হত্যা করার সময় তাঁদের কারও এতটুকু হাত কাঁপেনি। সামান্যতম বিবেকবোধও জাগেনি। তাঁরা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই ছাত্ররাজনীতিই তাঁদের উন্মত্ত অমানুষ বানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে ব্যবস্থা বা যে রাজনীতি এমন সম্ভাবনাময় তরুণদের খুনি বানিয়েছে, সেই রাজনীতির কী হবে? সেই অপরাজনীতি কি বন্ধ হবে? ভবিষ্যতে এই রাজনীতির হাত ধরে আরও আরও খুনি যে জন্ম নেবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তো আসলে দেশের প্রচলিত ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি এবং আধিপত্য বিস্তারের সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্ররাজনীতি। সেই রাজনীতিটা কি বন্ধ হবে?
একসঙ্গে ২০ মেধাবী তরুণের মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে সারা দেশেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই এই তরুণদের করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না। এটা মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারণ, আমাদের দেশে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বুয়েটে ভর্তি হন। অনেক শ্রম, ঘাম, মেধা ব্যয় করে, অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। অথচ এমন অপার সম্ভাবনাময় তরুণেরা আজ কর্মদোষে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। উচ্চ আদালতের অনুকম্পা না পেলে তাঁদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। ২০টি পরিবার শোকের সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে সারা জীবনের জন্য।
হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীকে ফাঁসি দিলেই কি অপরাধ কমে? মানবাধিকারকর্মীদের মতে, মৃত্যুদণ্ড তো শেষ বিচারে নিষ্ঠুর, অমানবিক, মর্যাদাহানিকর শাস্তিদান। এটাও একটা পরিকল্পিত আইনি হত্যা। এটাও একটা হিংস্র কাজ এবং যেকোনো হিংসাত্মক কাজের মতোই হিংসাকে এটি পরিবর্ধিত করে। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা পর্যন্ত তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা নৃশংস অপরাধ করেছেন এবং আইন মোতাবেক সুষ্ঠু বিচার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের তো মৃত্যুদণ্ড বা চরম শাস্তিই প্রাপ্য! না হলে সম্ভাব্য অপরাধীরা উৎসাহিত হবে। তার থেকেও বড় কথা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কি যথার্থ ন্যায়বিচার পাবে মৃত্যুদণ্ড না হলে? মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে অপরাধীরা নিরস্ত হয়, ফলে অপরাধ কমে বলেও অনেকে মনে করেন।
যদিও তথ্য-প্রমাণের নিরিখে কঠিন শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে পৃথিবীতে অপরাধ কমে যাওয়ার দৃষ্টান্ত খুব একটা দেখা যায় না। আর তাই তো ১৩০টির বেশি দেশ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তার বিলোপ ঘটিয়েছে। পক্ষান্তরে ভারত, চীন, আমেরিকার কিছু প্রদেশ, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন ইসলামিক দেশ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। ইউরোপে কেবল বেলারুশেই মৃত্যুদণ্ড হয়। সারা পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্রের সংখ্যা ৬০-এর মতো।
মৃত্যুদণ্ডের বিধানের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কিংবা অপরাধের প্রকারভেদে ৩০-৪০ বছরের কারাদণ্ডের বিধানের কথা এখন জোরেশোরে বলা হয়। আসলে অপরাধ এবং শাস্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অপরাধীরা যে প্রাণ নিয়েছে, তাদের ফাঁসি দিলেও হারানো ব্যক্তিকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, সেদিক থেকে কোনো ভারসাম্যের প্রশ্ন নেই। কিন্তু হ্যাঁ, অপরাধী যাঁদের স্বজনকে হত্যা করেছে, তাঁরা কিছুটা মানসিক শান্তি পেতে পারেন। সেই শান্তি একধরনের ভারসাম্য আনতে পারে, তার ভিত্তিতে বিচারের একটা সম্পূর্ণতাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু এখানেও গোটা ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাসের ওপরে। ‘ওই পিশাচটার বা পিশাচগুলোর ফাঁসি হলে তবে আমি শান্তি পাব’, এটা একটা বিশ্বাস। অপরাধীর ফাঁসি হলে আসলেই কি শান্তি মেলে?
মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়ানোটা তাই শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ বিশ্বাসের প্রশ্ন, যুক্তি দিয়ে সম্ভবত এর উপসংহার টানা যাবে না। এ বিষয়ে বিতর্ক অন্তহীন। তাহলে এ নিয়ে এত যুক্তি-তর্ক করে লাভ কী? লাভ আছে। খুব বড় লাভ। মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে একটা সমাজ কী ভাবছে, কী বলছে, কীভাবে বলছে, সেটা ওই সমাজের ওপরে আলো ফেলে, তাকে চিনতে সাহায্য করে।
তবে আমাদের চারপাশের সমাজটাকে দেখে আজকাল আতঙ্ক হয়। যেকোনো বড় অপরাধ বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেই এখন এ দেশে ‘ফাঁসি চাই’, ‘ক্রসফায়ারে দেয় না কেন’ বলে শোরগোল শুরু হয়। মৃত্যুদণ্ডের নীতিগত বিরোধিতা করলে তাঁর সমর্থকেরা তীব্র স্বরে ‘তাহলে আপনি জঘন্য অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতে বলছেন’ বলে আক্রমণ করেন। দেখেশুনে সন্দেহ হয়, এই সমাজের একটা খুব বড় অংশের কাছে অপরাধ ও শাস্তির ভারসাম্যের আসল মানেটা হলো শোধবোধ। প্রতিশোধ। ফাঁসি চাই মানে আসলে বদলা চাই।
এই বদলার মানসিকতাই আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের খুনি হতে উৎসাহিত করেছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুসহ প্রতিদিনের অসংখ্য মৃত্যু তো এমন প্রতিহিংসারই যোগফল। কেন এই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের মানসিকতা? কেন এতটা হিংস্রতা? সেই হিংস্রতার পরতে পরতে দল, মতাদর্শ, শ্রেণি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের মতো বিভিন্ন ধরনের বিভাজনই বা এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে কেন? এটা কি আসলে গভীর অনিশ্চয়তায় নিমগ্ন, নিরাপত্তাবোধ হারিয়ে ফেলা একটা সমাজের বিপন্নতার পরিণাম? একে অন্যের হাত ধরে বেঁচে থাকার সব প্রকরণ অতিদ্রুত হারিয়ে ফেলছি বলেই কি প্রতিহিংসায় এমন প্রবল বিশ্বাস? কোথাও কোনো সংশোধনের অবকাশ নেই, শুশ্রূষার সুযোগ নেই, নিয়মতান্ত্রিকতার বালাই নেই, নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতর হয়ে ওঠা একটা পরিবেশে আমরা সম্পূর্ণ অসহায়, তাই কি এমন ফাঁসিবাদী হয়ে উঠলাম?
তবে এখানে একটা ভিন্ন মনস্তত্ত্ব আছে। সমাজের এই ক্রমেই বাড়তে থাকা ‘কোনো কথা শুনতে চাই না, আগে চরম শাস্তি দাও’ মার্কা হিংস্রতা আমাদের রাষ্ট্রের পক্ষে খুব সুবিধাজনক। বন্দুক ও ফাঁসির কাষ্ঠ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে, সমাজের চোখে নিজেকে ‘শক্তিমান রাষ্ট্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে শাসকদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। একটি ঘটনায় ন্যায়বিচারের দোহাই দিয়ে আরও দশটি অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।
ন্যায়বিচারের জন্য সমাজের কান্নাকে মৃত্যুদণ্ডের অজুহাত করা বা সেই কান্না থামানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করা—কোনোটাই কোনো দেশের সেরা আইন বিশেষজ্ঞরা সমর্থন করেননি।
ক্রসফায়ার ও ফাঁসির দাবি তোলা, ফাঁসির খবর দেখা ও পড়ার সময়ে সে কথাটা মনে রাখা চাই।
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০ শিক্ষার্থীর মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন নিম্ন আদালত। একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে একসঙ্গে ২০ ছাত্রের মৃত্যুদণ্ডের রায় নজিরবিহীন। উচ্চ আদালতে যদি এ রায় বহাল থাকে, তাহলে এটা গোটা বিশ্বেই একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড আছে, যা সমাজকে নাড়া দেয়, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাটিও ছিল তেমনি একটি। শুধু ভিন্নমতের কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। যাঁরা এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বুয়েটের ছাত্র। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন সতীর্থকে হত্যা করার সময় তাঁদের কারও এতটুকু হাত কাঁপেনি। সামান্যতম বিবেকবোধও জাগেনি। তাঁরা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই ছাত্ররাজনীতিই তাঁদের উন্মত্ত অমানুষ বানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে ব্যবস্থা বা যে রাজনীতি এমন সম্ভাবনাময় তরুণদের খুনি বানিয়েছে, সেই রাজনীতির কী হবে? সেই অপরাজনীতি কি বন্ধ হবে? ভবিষ্যতে এই রাজনীতির হাত ধরে আরও আরও খুনি যে জন্ম নেবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তো আসলে দেশের প্রচলিত ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি এবং আধিপত্য বিস্তারের সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্ররাজনীতি। সেই রাজনীতিটা কি বন্ধ হবে?
একসঙ্গে ২০ মেধাবী তরুণের মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে সারা দেশেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই এই তরুণদের করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না। এটা মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারণ, আমাদের দেশে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বুয়েটে ভর্তি হন। অনেক শ্রম, ঘাম, মেধা ব্যয় করে, অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। অথচ এমন অপার সম্ভাবনাময় তরুণেরা আজ কর্মদোষে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। উচ্চ আদালতের অনুকম্পা না পেলে তাঁদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। ২০টি পরিবার শোকের সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে সারা জীবনের জন্য।
হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীকে ফাঁসি দিলেই কি অপরাধ কমে? মানবাধিকারকর্মীদের মতে, মৃত্যুদণ্ড তো শেষ বিচারে নিষ্ঠুর, অমানবিক, মর্যাদাহানিকর শাস্তিদান। এটাও একটা পরিকল্পিত আইনি হত্যা। এটাও একটা হিংস্র কাজ এবং যেকোনো হিংসাত্মক কাজের মতোই হিংসাকে এটি পরিবর্ধিত করে। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা পর্যন্ত তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা নৃশংস অপরাধ করেছেন এবং আইন মোতাবেক সুষ্ঠু বিচার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের তো মৃত্যুদণ্ড বা চরম শাস্তিই প্রাপ্য! না হলে সম্ভাব্য অপরাধীরা উৎসাহিত হবে। তার থেকেও বড় কথা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কি যথার্থ ন্যায়বিচার পাবে মৃত্যুদণ্ড না হলে? মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে অপরাধীরা নিরস্ত হয়, ফলে অপরাধ কমে বলেও অনেকে মনে করেন।
যদিও তথ্য-প্রমাণের নিরিখে কঠিন শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে পৃথিবীতে অপরাধ কমে যাওয়ার দৃষ্টান্ত খুব একটা দেখা যায় না। আর তাই তো ১৩০টির বেশি দেশ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তার বিলোপ ঘটিয়েছে। পক্ষান্তরে ভারত, চীন, আমেরিকার কিছু প্রদেশ, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন ইসলামিক দেশ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। ইউরোপে কেবল বেলারুশেই মৃত্যুদণ্ড হয়। সারা পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্রের সংখ্যা ৬০-এর মতো।
মৃত্যুদণ্ডের বিধানের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কিংবা অপরাধের প্রকারভেদে ৩০-৪০ বছরের কারাদণ্ডের বিধানের কথা এখন জোরেশোরে বলা হয়। আসলে অপরাধ এবং শাস্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অপরাধীরা যে প্রাণ নিয়েছে, তাদের ফাঁসি দিলেও হারানো ব্যক্তিকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, সেদিক থেকে কোনো ভারসাম্যের প্রশ্ন নেই। কিন্তু হ্যাঁ, অপরাধী যাঁদের স্বজনকে হত্যা করেছে, তাঁরা কিছুটা মানসিক শান্তি পেতে পারেন। সেই শান্তি একধরনের ভারসাম্য আনতে পারে, তার ভিত্তিতে বিচারের একটা সম্পূর্ণতাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু এখানেও গোটা ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাসের ওপরে। ‘ওই পিশাচটার বা পিশাচগুলোর ফাঁসি হলে তবে আমি শান্তি পাব’, এটা একটা বিশ্বাস। অপরাধীর ফাঁসি হলে আসলেই কি শান্তি মেলে?
মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়ানোটা তাই শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ বিশ্বাসের প্রশ্ন, যুক্তি দিয়ে সম্ভবত এর উপসংহার টানা যাবে না। এ বিষয়ে বিতর্ক অন্তহীন। তাহলে এ নিয়ে এত যুক্তি-তর্ক করে লাভ কী? লাভ আছে। খুব বড় লাভ। মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে একটা সমাজ কী ভাবছে, কী বলছে, কীভাবে বলছে, সেটা ওই সমাজের ওপরে আলো ফেলে, তাকে চিনতে সাহায্য করে।
তবে আমাদের চারপাশের সমাজটাকে দেখে আজকাল আতঙ্ক হয়। যেকোনো বড় অপরাধ বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেই এখন এ দেশে ‘ফাঁসি চাই’, ‘ক্রসফায়ারে দেয় না কেন’ বলে শোরগোল শুরু হয়। মৃত্যুদণ্ডের নীতিগত বিরোধিতা করলে তাঁর সমর্থকেরা তীব্র স্বরে ‘তাহলে আপনি জঘন্য অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতে বলছেন’ বলে আক্রমণ করেন। দেখেশুনে সন্দেহ হয়, এই সমাজের একটা খুব বড় অংশের কাছে অপরাধ ও শাস্তির ভারসাম্যের আসল মানেটা হলো শোধবোধ। প্রতিশোধ। ফাঁসি চাই মানে আসলে বদলা চাই।
এই বদলার মানসিকতাই আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের খুনি হতে উৎসাহিত করেছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুসহ প্রতিদিনের অসংখ্য মৃত্যু তো এমন প্রতিহিংসারই যোগফল। কেন এই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের মানসিকতা? কেন এতটা হিংস্রতা? সেই হিংস্রতার পরতে পরতে দল, মতাদর্শ, শ্রেণি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের মতো বিভিন্ন ধরনের বিভাজনই বা এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে কেন? এটা কি আসলে গভীর অনিশ্চয়তায় নিমগ্ন, নিরাপত্তাবোধ হারিয়ে ফেলা একটা সমাজের বিপন্নতার পরিণাম? একে অন্যের হাত ধরে বেঁচে থাকার সব প্রকরণ অতিদ্রুত হারিয়ে ফেলছি বলেই কি প্রতিহিংসায় এমন প্রবল বিশ্বাস? কোথাও কোনো সংশোধনের অবকাশ নেই, শুশ্রূষার সুযোগ নেই, নিয়মতান্ত্রিকতার বালাই নেই, নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতর হয়ে ওঠা একটা পরিবেশে আমরা সম্পূর্ণ অসহায়, তাই কি এমন ফাঁসিবাদী হয়ে উঠলাম?
তবে এখানে একটা ভিন্ন মনস্তত্ত্ব আছে। সমাজের এই ক্রমেই বাড়তে থাকা ‘কোনো কথা শুনতে চাই না, আগে চরম শাস্তি দাও’ মার্কা হিংস্রতা আমাদের রাষ্ট্রের পক্ষে খুব সুবিধাজনক। বন্দুক ও ফাঁসির কাষ্ঠ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে, সমাজের চোখে নিজেকে ‘শক্তিমান রাষ্ট্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে শাসকদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। একটি ঘটনায় ন্যায়বিচারের দোহাই দিয়ে আরও দশটি অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।
ন্যায়বিচারের জন্য সমাজের কান্নাকে মৃত্যুদণ্ডের অজুহাত করা বা সেই কান্না থামানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করা—কোনোটাই কোনো দেশের সেরা আইন বিশেষজ্ঞরা সমর্থন করেননি।
ক্রসফায়ার ও ফাঁসির দাবি তোলা, ফাঁসির খবর দেখা ও পড়ার সময়ে সে কথাটা মনে রাখা চাই।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে