নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষে পণ্ড হয়ে গেছে সম্মেলন। এ সময় সংঘর্ষে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় সিদ্ধিরগঞ্জের গ্র্যান্ড তাজ পার্টি সেন্টারে এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সংঘর্ষে পার্টি সেন্টারটির প্রধান ফটক ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটুর। এটি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্যসচিব মামুন মাহমুদের নিজের থানা। অথচ সকাল ৯টায় সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করে নেতা-কর্মীদের জানানো হলেও এতে মারধরের শিকার হওয়ার ভয়ে উপস্থিত হননি মামুন মাহমুদ। অন্যদিকে মনিরুল ইসলাম রবি উপস্থিত থাকলেও ঘটনার সময় কোনো পক্ষকেই নিবৃত্ত করতে দেখা যায়নি তাঁকে; বরং তিনি সম্মেলনস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে পরে সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

জানা যায়, এখানকার সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন ও তাঁর অনুগত কোনো নেতা-কর্মীকে সম্মেলনের ব্যাপারে জানানো হয়নি এবং তাঁদের বিএনপির কোনো কমিটিতেও রাখা হয় না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষোভ ছিল তাঁদের মধ্যে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও তা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁদের ক্ষোভের সঙ্গে সহমত জানায় থানা বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তাঁরা সকাল থেকেই সম্মেলনস্থলে বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ইকবালের নেতৃত্বে অবস্থান নেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়গুলো জানাবেন বলে জানান। পরে মামুন মাহমুদের পক্ষে একটি মিছিল সভাস্থলে স্লোগান দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ওপর চড়াও হন গিয়াসউদ্দিন পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে দুপক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং মার্কেটের দারোয়ান মাহবুব বলেন, ‘আমারে ৪-৫ জনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছে, বলে তালা লাগা। নিচে অন্য এক পক্ষের কয়েকজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, সরে যা তোকে মেরে ফেলব। পরে তাঁরা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যান। সেখানে গিয়ে রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর করেন। এর বেশি কিছু আমি জানি না বাবা।’

গ্র্যান্ড তাজ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শাহীন বলেন, ‘বুঝতে না বুঝতেই তাঁদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। এক গ্রুপ নেমে গেলে কিছুক্ষণ পর ১৫-২০ জন এসে রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর শুরু করে। ১ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আমাদের কোনো কর্মচারী আহত হননি।’

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, ‘জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুন মাহমুদের গ্রুপ বিএনপির ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি করার চেষ্টা করছেন। ওই সময় রাজপথে থাকা নেতারা এর বিরোধিতা করলে মামুন মাহমুদের অনুসারী নিয়াজুল অতর্কিতভাবে হামলা শুরু করেন। তাঁরা দারোয়ানকে মারধর করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন। পরে ধাওয়া দিলে তাঁরা পালিয়ে যান।’

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানান, দুই পক্ষের মধ্যে হালকা সমস্যা ছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত। সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এক পক্ষ ভেতরে এবং আরেক পক্ষ বাইরে অবস্থান করছিল।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুন মাহমুদ বলেন, ‘ওরা গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে। ওরা আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। সম্মেলনকে পণ্ড করতে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় পরিকল্পিতভাবে এই সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জুয়েল বলেন, ‘বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে কমিটির পদবঞ্চিতদের সঙ্গে বাকিদের সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘এটি তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’