ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কার হয়নি, ব্যাহত পাঠ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২২, ০৫: ৫৭
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৫

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষ নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও করা হয়নি পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার। বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি মক্তবে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলছে পাঠদান। সরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিজ অর্থায়নে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে চারটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুতই সেখানে শুরু হবে পাঠদান।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের সংস্কার শুরু ও বাকি ভবনটি টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৪ আগস্টে বিষখালির নদীভাঙনে বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি মসজিদ বিলীন হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের ভবনের নিচে চাপা পড়ে স্থানীয় আফসার মেমোরিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ হন। নিখোঁজ ছাত্র উদ্ধারে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি। নদীভাঙনে বিলীন বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ না করায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি মক্তবে সাময়িকভাবে চলছে পাঠদান।

নতুন করে বিদ্যালয় ভবন নির্মিত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন খান ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন করে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেন তিনি। ইতিমধ্যে টিনের ছাউনি ও টিন-কাঠের বেড়া দিয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের মেঝে পাকাকরণের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় শুরু হয়নি ক্লাস।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন খান বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের একাংশ বিষখালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভবনের বাকি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে ভবনের টিকে থাকা অংশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পাশের ফোরকানিয়া মাদ্রাসা (মক্তব) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মক্তব কর্তৃপক্ষ তাদের ভবনে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এরপর আরেকটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে পাঠদানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারোর কোনো সহযোগিতা পায়নি। ফলে নিজ অর্থায়নে ৩ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে মেঝের কাজ চলছে।’

তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবন নির্মাণের জন্য জমি নির্বাচন করা হয়েছে। সেই জমি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষকই। সরকারি বরাদ্দ পেলে সেখানেই ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানান, যথাযথভাবে জমি যাচাই-বাছাই না করেই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়। নদীভাঙনে এর বেজমেন্টের (ভিত্তি) মাটি সরে যাওয়ায় বর্তমানে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ভবনের বাকি অংশ। এই অংশটুকুও যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মীর বলেন, ‘নদীভাঙনে বিদ্যালয়ের কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বাকিটুকুও ঝুঁকিতে। ভাঙনের ছবি তোলার সময় একটি ছেলে নদীতে তলিয়ে যায়। তাঁকে পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীতীরের বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার আর কোনো জায়গা রইল না। নদীরভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন খান বলেন, ‘ওই দিন সকালে সাইক্লোন শেল্টার-কাম বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম অংশের মাটি কিছুটা দেবে যায়। দ্রুত শিক্ষকেরা কয়েকজন ছাত্র নিয়ে স্কুলের মালপত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে নেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনের অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে নদীতে তলিয়ে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দা বারেক হাওলাদারের ছেলে নিয়ামত উল্লাহ নিখোঁজ হয়। তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে ছয় হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘটনার সময়ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল।’

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত