তাসনিম মহসিন, ঢাকা
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট সি ডিকসন। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি ইউক্রেন সংকট, দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমমান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা সংলাপ হলো, সেখানে কি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, এই আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশই হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এর দুটি কারণও আছে। প্রথমটি হলো, কোনো দেশ যখন একটি নীতি-ব্যবস্থার মধ্যে গড়ে ওঠে, তখন যদি সেই ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ে, তাহলে দেশটি জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়। রাশিয়া বিনা উসকানিতে ও অবৈধভাবে তার প্রতিবেশীর দিকে আগ্রাসন চালিয়েছে। যাতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটি একটি অপরাধ। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার এ হামলার কারণে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। যার মূল্য সবাইকে দিতে হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: এ নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আরও অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ মনে করে, জাতিসংঘের এ বিলটি যুদ্ধবিরতির জন্য নয় বরং রাশিয়াকে সমালোচনার জন্য। সে কারণে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
রবার্ট সি ডিকসন: রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সব নীতি ভঙ্গ করেছে। ফলে সব দেশের উচিত রাশিয়াকে নিন্দা জানানো।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ তো জাতিসংঘের সনদ মেনে অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: আমি মনে করি, বাংলাদেশ অসমর্থন করে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থানের ব্যাপারে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা মনে করি, রাশিয়া যা করছে তাতে সর্বোচ্চ নিন্দা জানানো উচিত।
আজকের পত্রিকা: বিশ্বে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিয়ানমার, সিরিয়া থেকে কেন ইউক্রেন সংকট আলাদা?
রবার্ট সি ডিকসন: দেখুন, প্রতিটি সংকটই দুঃখজনক। প্রতিটি সংকটই আলাদা। তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করছে তা পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক সব আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন। ইউক্রেনে এ হামলার কোনো আইনি ব্যাখ্যা রাশিয়ার কাছে নেই। ইউক্রেন ৩০ বছর ধরে স্বাধীন। আর ১৯৯৪ সালে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন তার পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তর করে দেবে। রাশিয়াও ইউক্রেনকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেবে। এ নিশ্চয়তা ছিল বুদাপেস্ট চুক্তিতে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনটি সবার সামনে পরিষ্কারভাবেই এসেছে।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে প্রতিরক্ষা সংলাপে কী আলোচনা হয়েছে? বাংলাদেশ তো সামরিক অংশ হতে চায় না। আংশিকভাবে যুক্ত হওয়ার কী কোনো সুযোগ আছে?
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, এটি নিয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রয়াস, আমরাও এতে আছি। যদিও এটির কোনো কাঠামো নেই। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গণতন্ত্র, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা, এ অঞ্চলের নিয়মনীতিভিত্তিক পদ্ধতির সঙ্গে আমরা একমত। এটা ঠিক যে আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের সদস্য নই। তবে কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। আমরা তাতে জোর দিয়েছি। কারণ, আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চল ঘিরেই হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আজকের পত্রিকা: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, কোয়াডসহ অন্য যেসব পশ্চিমা জোট রয়েছে, সব কি চীনকে কোণঠাসা করার জন্য?
রবার্ট সি ডিকসন: না না, কোনো প্রয়াসই চীনকে কোণঠাসা করার জন্য নয়। চীন এ অঞ্চলের একটি বড় খেলোয়াড়।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ প্রয়াসগুলোতে চীনকে কেন যুক্ত করা হচ্ছে না?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য চীনের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, চীন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সমাধান করা যাবে না। চীনের সঙ্গে আমরা কাজ করি। তবে চীনের বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বর্বর নিপীড়নের নিন্দা করেছে ব্রিটেন। বর্তমানে হংকংয়ে চীন যা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা যা করছি, এ অঞ্চলের পুরোনো বন্ধুদেশগুলোতে সঙ্গে আরও বিনিয়োগে কাজ করছি।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে?
রবার্ট সি ডিকসন: প্রতিরক্ষা সংলাপে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যেখানে ইউক্রেন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমাদের সক্ষমতা কোথায় বাড়ানো দরকার, এখানে আমরা কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীতে অন্যতম বড় অংশীদার। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পরিষ্কারভাবেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর আমাদের বেশ আগে থেকেই সফলতার সঙ্গে সমরাস্ত্র বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশকে কী ধরনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে অনেক কিছু রয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য অফশোর প্যাট্রল জাহাজের প্রস্তাব রয়েছে, যা বেশ প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব। আর বঙ্গোপসাগর পাহারায় এটি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর নতুন ও দ্রুতগতির জেট বিমান দরকার, যার মাধ্যমে আকাশের সার্বভৌম সুরক্ষা দিতে পারবে। এর জন্য ইউরো ফাইটার টাইফুন রয়েছে আমাদের কাছে।
আজকের পত্রিকা: এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ টানলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে আসে। এর সমাধান কী?
রবার্ট সি ডিকসন: এ সংকটের সবচেয়ে ভালো সমাধান আছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মধ্যে। কেউই শরণার্থী হয়ে থাকতে চায় না এবং কেউই শরণার্থী রাখতে চায় না। পরিস্থিতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই খারাপ।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান বাংলাদেশকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রবার্ট সি ডিকসন: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে, যা বাংলাদেশের বড় ধরনের একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও ৫০ বছরের মাথায় এসে এটি একটি অভূতপূর্ব অর্জন। এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে সরকার যে উন্নতি করেছে, তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: বিশ্ব বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক পরিবেশ। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলো যাতে নিশ্চিত হয়।
আজকের পত্রিকা: বর্তমানে যা আছে তা কী যথেষ্ট নয়?
রবার্ট সি ডিকসন: যুক্তরাজ্য মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের প্রতিবেদনে আমাদের কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রতিবেদনেও বেশ কিছু উদ্বেগ তুলে ধরা হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: কিন্তু এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।
রবার্ট সি ডিকসন: যে প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেটা ১০ বছর আগের। আমরা এখন আর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কাজ করি না।
আজকের পত্রিকা: এর আগে আপনারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছিলেন।
রবার্ট সি ডিকসন: হ্যাঁ, কয়েকটি দূতাবাসের প্রধানদের সঙ্গে আমিও এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এখন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের সুপারিশগুলো কতটুকু গ্রহণ করে আইনটি সংশোধন করা হবে, তা দেখার বিষয়।
আজকের পত্রিকা: রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনার পর শ্রমমানে বাংলাদেশ কতটা এগোতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
রবার্ট সি ডিকসন: আমি বেশ কিছু ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়েছি, যেগুলো বিশ্বমানের। তবে ক্রেতাদের উদ্বেগ হচ্ছে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য কতটা। আমার মনে হয়, এখনো এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। অগ্রগতি হয়েছে অবশ্যই, তবে তা টেকসই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশকে কীভাবে দেখছেন?
রবার্ট সি ডিকসন: বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে। আর এ প্রবৃদ্ধি করোনার অনেক আগে থেকেই অর্জন করে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি করোনার সময়েও অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনও দেখে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। তবে সরকারের বেশ প্রচেষ্টা রয়েছে পরিস্থিতি উন্নতির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সম্মেলনগুলোতে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেয়, বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আপনি কোথায় দেখতে চান?
রবার্ট সি ডিকসন: দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে বেশ সমর্থন গড়ে উঠেছিল। বড় মিছিল হয়েছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হওয়ার পর যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকেই বেছে নিয়েছিলেন, তখন আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম। মুক্ত অবস্থায় তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন সেখানেই হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের রাজকীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যেখান থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। সেই থেকে সব সময় বাংলাদেশের সফল উন্নয়নযাত্রায় যুক্তরাজ্য অংশীদার ছিল। এ সম্পর্ক এখন বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে রয়েছে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে গভীর করেছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে