খেলা কাতারে আর সুফল পাচ্ছে দুবাই

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১০: ৫৪
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১১: ০৫

ফুটবলের ‘গ্রেটেস্ট’ আসর কাতারে। স্মরণকালের রেকর্ড ২২৯ বিলিয়ন বা প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলার খরচ করে এ বিশ্বকাপকে ঘিরে অবকাঠামো, হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ কত কিছুই না করেছে দেশটি। তারপরও কী যেন নেই! ধরে রাখতে পারছে না বিদেশি অতিথিদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কাতারে সবকিছুর মাঝেও পর্যটকদের জন্য আনন্দ-বিনোদনে কড়াকড়ি আছে। ফলে দেশটি পুরো লাভ নিতে পারেনি। বলা যায়, কাতারের ‘লাভের গুড়’ খাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ আরব আমিরাতের দুবাই।

কাতারে খেলা দেখতে আসা বিদেশি দর্শক ও পর্যটকদের জন্য সুরা পানে ব্যাপক কড়াকড়ি। খুবই সীমিত পরিসরে বিশেষ অনুমোদন ছাড়া এখানে কেউ মদ্যপান করতে পারে না। খেলার মাঠেও বিয়ার নিয়ে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে কাতারের এই অবস্থান। এ জন্য কাতারের সমর্থনে খোদ ফিফা প্রেসিডেন্টকে বিবৃতি দিতে হয়েছে।

আর কাতারের কড়াকড়ির সুফল নিচ্ছে দুবাই। প্রথমে কাতার কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, অন্তত ১৫ লাখ বিদেশি পর্যটক আসবে খেলা দেখার জন্য। তাদের জন্য প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কক্ষের ব্যবস্থা করেছিল দেশটি। তবে চিত্তবিনোদনের নানা ঘাটতির কারণে বিদেশি পর্যটক, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটকেরা কাতারে না থেকে দুবাইয়ে থাকছেন।

জানা যায়, অন্তত ১০ লাখ পর্যটক দুবাই থেকে কাতারে এসে খেলা দেখার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। কাতারের তুলনায় দুবাইয়ে হোটেল খরচ অনেক কম। রয়েছে মদ্যপানসহ সব রকমের বিনোদনের অবাধ সুযোগ। খেলা দেখে দিনে দিনে কাতার থেকে দুবাইয়ে ফেরা সহজ। দুবাই থেকে দোহারের বিমানভাড়াও বেশ সহনীয়। ফলে কাতারের চেয়ে দুবাই সুবিধাজনক। তাই খেলা কাতারে হলেও বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের জায়গা দুবাই।

ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন বলছে, খেলার যাত্রী পরিবহনের জন্য সারা বিশ্ব থেকে দিনে নতুন ৯০টি ফ্লাইট দোহায় যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪০টি ফ্লাইটই যাচ্ছে দুবাই থেকে। ফ্লাইদুবাই আসা-যাওয়ার পথে ২৪ ঘণ্টায় দুবাই-দোহা রুটে ৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন আরও জানাচ্ছে, কাতারের খেলাকে কেন্দ্র করে দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডে নতুন হোটেল বানানো হয়েছে। সেখান থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে উড়ে দোহায় যাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে দুবাই থেকে চলাচলকারী বিমানের ইকোনমি ক্লাসের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আর হোটেলগুলোতে কোনো কক্ষ খালি নেই। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের অসিলায় দুবাইয়ে পর্যটন ব্যবসা বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে।

কাতারে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি সোহেল আহমেদ। কাতারে একটি নির্মাণসামগ্রীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সিইও। পর্যটকদের দুবাই থেকে কাতারে এসে খেলা দেখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে কাতার বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সফল করতে সব প্রস্তুতিই নিয়েছে। সফলভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে টুর্নামেন্টটি। তবে পর্যটকেরা খেলা দেখার পাশাপাশি অন্য বিনোদন পেতে চায়, সে দিক থেকে ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত কারণেই কাতার কিছুটা রক্ষণশীল। তারা অবাধে মদ্যপান বা নাচ-গানে কড়াকড়ি বজায় রেখেছে। উল্টো দিকে, দুবাইয়ে এসব সুবিধা অবাধে পাচ্ছেন পর্যটকেরা। তা ছাড়া খরচও কম। তাই অনেক পর্যটক দুবাই থেকে এসে খেলা দেখছেন। এর ফলে স্পোর্টস পর্যটন থেকে কাতারের লাভের অংশ কমে যাচ্ছে।’

সোহেল আহমদের মতো বেশ কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদেরও অভিমত একই রকম।

দোহার মেট্রোতে কথা হয় মেক্সিকোর দুই পর্যটকের সঙ্গে। তাঁরা দুবাই থেকে শুধু খেলা দেখার জন্য কাতারে এসেছেন। খেলা দেখে আবার দুবাই ফিরে যাবেন। জানান, দুবাই থাকা তাঁদের জন্য সুবিধাজনক। তাই দুবাই থেকেই এসে খেলা দেখছেন। এ রকম আরও অনেক পর্যটকই কাতারে অবস্থান না করে দুবাই থেকে এসে খেলা দেখছেন বলে জানান তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত