নেত্রকোনার মদনে বাস চাপায় রিয়াদ হোসেন (২০) নামে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা মদন পৌর সদরে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা চালকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাত ৮টার দিকে রূপক নামে এক বন্ধুকে নিজের মোটরসাইকেল করে বাড়ি পৌঁছে দিতে যায় রিয়াদ হোসেন। মদন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে গেলে ঐশি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বাস পেছনের দিক থেকে তাদের চাপা দেয়। এতে রিয়াদ হোসেন ও রূপক দুজনেই গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে।

পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে রিয়াদ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। গতকাল সোমবার সকালে নিজ বাড়ি চানগাও গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। নিহত রিয়াদ হোসেন মদন উপজেলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাজু মিয়ার ছেলে।

ঘটনার প্রতিবাদের গতকাল সোমবার দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা ঘাতক চালকের গ্রেপ্তারের দাবিতে মদন পৌরসদরে প্রধান সড়ক অবরোধ করে। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে পৌরসদরে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন বলে আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

কলেজ শিক্ষার্থী রাফি, হুমায়ূন, মান্না বলেন- মদন-নেত্রকোনা সড়কে বাসের চালকেরা বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালায়। এ রাস্তায় চলাচলকারী বাস অধিকাংশই ফিটনেস বিহীন। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। হেলপার দিয়ে বাসা চালানো হলেও প্রশাসন কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেয় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছি এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর জন্য। যে বাসের চালক রিয়াদকে চাপা দিয়েছে সেই বাসটি জব্দ ও এর চালককে গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করছি।

মদন উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নূরুই ইসলাম জানান, গত রোববার রাতে ঐশী এন্টারপ্রাইজ নামে যে বাসটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাসের চালক রুবেল পালিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। ইউএনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিহতদের পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, বাস চাপায় রিয়াদ নামে এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা পৌর সদরে সড়ক অবরোধ করে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছি। বর্তমানে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।