Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও দাম বাড়তি

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৪: ৪৬
ভরা মৌসুমেও দাম বাড়তি

দিনাজপুরে এক সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে কমপক্ষে তিন টাকা। খুচরা পর্যায়ে তা বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবে এ সময়টিতে বরাবরই নতুন চাল বাজারে আসে এবং দাম কিছুটা কম থাকে। ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর ধানের ফলন ভালো হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান কাটা ও মাড়াই করতে কৃষকদের বেগ পেতে হয়েছে। তা ছাড়া ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে অধিক মজুরি। এ কারণে শুরু থেকেই ধানের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। আবার ধানের ভালো দাম থাকায় মিল মালিকদের পাশাপাশি একশ্রেণির নতুন আড়তদারের আবির্ভাব ঘটেছে। বাড়তি লাভের আশায় এসব আড়তদার ধান কিনে মজুত করছেন। আবার এর পাশাপাশি বর্তমানে দেশের বড় কোম্পানিগুলোর অনেকেই সরাসরি সুগন্ধি চালের পাশাপাশি চিকন চালও বাজারজাত করছে। আর এর প্রভাব পড়ছে জেলার ধান-চালের বাজারে।

সদরের পাইকারি চালের আড়ত বাহাদুর বাজারসহ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন আগেও মিনিকেট চালের মিল রেট ছিল ২ হাজার ৭৫০ টাকা, আর পাইকারি দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ গত এক সপ্তাহে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০ টাকা, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়। বোরো আটাশ চালের আগে পাইকারি মূল্য ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা। বোরো উনত্রিশ ২ হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা। সুমন স্বর্ণ (মোটা) ২ হাজার ৫০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা। গুটিস্বর্ণা (মোটা) ১ হাজার ৯২০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা। সেদ্ধ কাঠারি ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। চিনিগুঁড়া ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের এই বাজার দর আরও বাড়তে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারে নতুন ধান উঠলেও চালের দাম না কমে উল্টো বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে।

বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. আলাল উদ্দীন ব্যাপারী বলেন, ‘গত কয়েক দিনে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। আমরা টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছি না। মিল মালিকেরা চাহিদার থেকে কম চাল দিচ্ছেন। ভরা মৌসুমে এ অবস্থা হলে চালের দাম কীভাবে কমবে।’

আলাল উদ্দীন আরও বলেন, দিনাজপুরের চালের চাহিদা দেশজুড়ে থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বড় কোম্পানিগুলো এখন নিজেরাই চাল বাজারজাত করছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী বলেন, অনেক কারণে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে এবার সবাই মিলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আবার সরকার চাল কেনায় অনেকেই সরকারি চাল তৈরি করছেন। অনেকে এ সময় সারা বছরের চাল কিনে মজুত করেন। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বেশি রাখেন।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত আছে। কয়েক দিন ধরে আবহাওয়ার বৈরী আচরণের কারণে জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা সম্ভব হয়নি। বাজারে ধানের সরবরাহ এখনো পর্যাপ্ত নয়। বাজারে ধানের স্বাভাবিক সরবরাহ শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং চালের মূল্যও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত